শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হচ্ছে আজ

| প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

পঞ্চায়েত হাবিব : কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গভীর সমুদ্রবন্দরের আনুষ্ঠানিক নির্মাণকাজ আজ রোববার শুরু হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মাতারবাড়িতে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুষ্ঠান সূচিতে রয়েছে বলে এ তথ্য জানা গেছে। সরকারের বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনায় দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর মাতারবাড়িকে বিদ্যুৎ হাব হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ইনকিলাবকে বলেন, মাতারবাড়িতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের আওতায় নির্মিতব্য বন্দরটিই পরবর্তীতে গভীর সমুদ্রবন্দরে রূপান্তরিত করা হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে মহেশখালীর ছয়টি মৌজায় যেসব জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে, সেসব জমি বসতি-বৃক্ষহীন। ধু ধু জমিতে গ্রীষ্মকালে লবণ ও বর্ষায় চিংড়ি চাষ হয়।
বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে জানা গেছে, জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে মাতারবাড়িতে নির্মিত হচ্ছে বাংলাদেশের অন্যতম বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই কেন্দ্রের কাঁচামাল হবে কয়লা। পাশাপাশি বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের আওতায় নির্মিতব্য বন্দরটিই পরবর্তীতে গভীর সমুদ্রবন্দরে রূপান্তরিত করা হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্র ও দেশের প্রথম সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করে মাতারবাড়িকে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলারও পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। মহেশখালীর মাতারবাড়ি ও ঢালঘাটা ইউনিয়নের এক হাজার ৪১৪ একর জমিতে এই বিদ্যুৎ প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে ১৭ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম ইনকিলাবকে বলেন, আজ রোববার প্রধানমন্ত্রীর ভিত্তিপ্রস্তরের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই মাতারবাড়ি প্রকল্পের জন্য প্রায় ৪০০ দক্ষ বিদেশি শ্রমিক এসেছে। পর্যায়ক্রমে এখানে প্রায় এক হাজার দক্ষ বিদেশি শ্রমিক কাজ করবে। ২০১৬ সালে গুলশান হামলার প্রভাব পড়েছিল মাতারবাড়ি প্রকল্পেও। তার অবসান ঘটিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে গত বছরের জুলাইয়ে জাপানের তিনটি প্রতিষ্ঠানের একটি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তি করে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ (সিপিজিসিবিএল)। আবুল কাশেম বলেন, আগামী ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই এই বিদ্যুৎ প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শেষ করার লক্ষ্য আমাদের। জাপানি কনসোর্টিয়ামের অন্যতম কোম্পানি তোশিবা করপোরেশন জানায়, আগামী ২০২৪ সালের জুলাইয়ের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। প্রকল্পের খরচের পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা হবে। সরকারের অগ্রাধিকারের মধ্যে বাস্তবায়নাধীন যে ১০টি প্রকল্প রয়েছে, তার মধ্যে খরচের দিক দিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরই রয়েছে মাতারবাড়ি প্রকল্পটি। ২০১৫ সালের আগস্টে মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ৩৬ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করে সরকার। একনেকে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পের কার্যপত্রে বলা হয়, জাইকা এই প্রকল্পে ২৯ হাজার কোটি টাকা দেবে। দরপত্র প্রক্রিয়া চলার মধ্যেই ২০১৬ সালের জুলাইয়ে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় জাপানি প্রকৌশলীসহ ১৭ জন বিদেশি নিহত হওয়ার পরদিন মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের দরপত্র প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়। এরপর জাইকার সবচেয়ে বড় এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। কিন্তু সে সংশয়ের অবসান ঘটিয়ে গত গত ২৭ জুলাই জাপানি কনসোর্টিয়াম সুমিতোমো করপোরেশন, তোশিবা করপোরেশন ও আইএইচআই করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করে সিপিজিসিবিএল। ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক এবং আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ একটি গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রয়োজনীয়তা অনেকদিন থেকেই দেখা দিয়েছে। বর্তমান সরকার মহেশখালীর সোনাদিয়ায় একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রকল্প অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর মধ্যে রাখলেও তার কোনো অগ্রগতি হয়নি। গত সাত বছরে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি ২০০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। দুটি বন্দর দিয়ে ক্রমবর্ধমান এ বাণিজ্য সামাল দেয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। তাই গভীর সমুদ্রবন্দরে নির্মাণে সরকারের পক্ষ থেকেও জোরেশোরেই কাজ করতে হচ্ছে। মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র আমদানি করা কয়লানির্ভর হওয়ায় কয়লা আনার জন্যই এই বন্দর করা হচ্ছে। ৫৯ ফুট গভীর এই বন্দরে ৮০ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার জাহাজ ভিড়তে পারবে। তোশিবা করপোরেশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাপানের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে মাতারবাড়ির বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে যে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মিত হবে সেটি হবে জাপানের কাশিমা বন্দরের মতো করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন