মুহা. আতিকুর রহমান, গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) থেকে
আসন্ন ২য় দফার ইউপি নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টিতেই বিদ্রোহীর প্রার্থীর মুখোমুখী বিএনপির ধানের শীষ ও আওয়ামী লীগের নৌকা। এর মধ্যে ৫টিতে বিএনপি ও ৪টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই অবস্থান শক্ত হচ্ছে বিদ্রোহী প্রার্থীদের। প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে নিজেদের অবস্থানকে তুলে ধরতে না পারায় বিদ্রোহী প্রার্থীরা নিজেদের অবস্থান শক্ত করার সুযোগ পেয়েছে। উভয় দলের মধ্যে প্রকাশ্যে গ্রুপিং থাকায় দলীয় প্রার্থীরা নির্বাচনে কতটুকু সফলতা লাভ করবে তা সংশয় প্রকাশ করেছে দলীয় নেতাকর্মীরা। ভাসমান ভোটাররা দলীয় প্রার্থী বিবেচনা না করে, যার দিকে পাল্লা ভারী তার দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। রহনপুর ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবেক ইউপি সদস্য মরহুম নূরুল ইসলাম ঈদুর ছেলে গোলাম রাব্বানী রকি (ধানের শীষ) কে তার চেয়ে অপেক্ষাকৃত জনপ্রিয় বিএনপি নেতা ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মনিরুজ্জামান সোহরাব (আনারস) এর মুখোমুখী হতে হচ্ছে অপরপক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান সাজাহান আনসারী মামলত (নৌকা) ও রয়েছে ভাল অবস্থানে। তাই সমীকরণ কোনদিকে যাবে তা বলা কঠিন হয়ে পড়েছে।
রাধানগরে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন নতুন মুখ প্রভাষক মোখতারুল হক সুমন (ধানের শীষ)। এখানে বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মতিউর রহমান (আনারস) দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছেন। আওয়ামী লীগের টিকিট পেয়ে নিজের অবস্থান জানান দিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ (নৌকা)। পার্বতীপুরে নতুন মুখ বিএনপির টিকিট পাওয়া ইয়াসিন আলী সর্দার (ধানের শীষ) কে লড়তে হচ্ছে তার দলের বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন (আনারস) এর সঙ্গে। লিয়াকত আলী খাঁন (নৌকা) এর রয়েছে দলীয় ভোট। ফলে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আলিনগরে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান বাইরুল ইসলামের ছোটভাই ও বর্তমান চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম বিদ্যুৎ (আনারস) বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইসরাফিল হক (ধানের শীষ) কে নির্বাচনী মাঠে টিকে থাকতে ঘাম ঝরাতে হচ্ছে। একই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী তরিকুল ইসলাম (নৌকা) কে বিদ্রোহী প্রার্থী প্রভাষক আজকারুল ইসলাম বিপ্লব (চশমা) এর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বাঙ্গাবাড়ীতে বিএনপি প্রার্থী ও বর্তমান প্রভাষক শহীদুল ইসলাম (ধানের শীষ) কে বিদ্রোহী প্রার্থী মনিরুল ইসলাম (আনারস) এর এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাদিরুল ইসলাম (নৌকা) কে বিদ্রোহী প্রার্থী আজাহার আলী মন্ডল (চশমা) এর মুখোমুখী হতে হচ্ছে। আলীনগর ও বাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নে উভয় দলে বিদ্রোহী থাকায় ভাসমান ভোটাররা খুঁজে ফিরছেন কে বেশি এগিয়ে। তারা তার দিকে ঝুঁকবেন বলে ধারণা করা যাচ্ছে। চৌডালা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের আনসারুল হক (নৌকা) দলীয় মনোনয়ন পেলেও এখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া হাবিব (আনারস) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন। এখানে বিএনপি প্রার্থী শেষ মূহূর্তে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেয়ায় জামায়াত নেতা বর্তমান চেয়ারম্যান শাহ আলমের অবস্থানও শক্ত। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা খুরশিদ আলম বাচ্চু ফুফাতো ভাই হাবিবের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে নামায় সমীকরণ কোন দিকে যাবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ভোটের দিন পর্যন্ত।
বোয়ালিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান লালু (নৌকা) কে মোকাবেলা করতে হচ্ছে বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা সফিকুল ইসলাম সফিকের (আনারস)। ফলে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বিএনপি প্রার্থী জিয়াউর রহমান আকবর (ধানের শীষ)। গোমস্তাপুরে বিএনপির টিকিট পেয়ে প্রভাষক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন (ধানের শীষ) নতুন মুখ হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বটে, কিন্তু আওয়ামী লীগের সাবেক উপজেলা সভাপতি হুমায়ন রেজার ভাই ও বর্তমান চেয়ারম্যান জামালউদ্দিন মন্ডল (নৌকা) রয়েছে শক্ত অবস্থানে। সাধারণ ভোটাররা চায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ। যেন তারা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে নির্বিঘেœ এ প্রত্যাশাই সকলের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন