ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল আন্তর্জাতিক ক্বিরাত সম্মেলন। কসবা পৌর সদরের ঐতিহ্যবাহী আড়াইবাড়ী দরবার শরীফের মরহুম পীর আল্লামা গোলাম হাক্বানী (রহ.) এর মাগফিরাত কামনায় আন্তর্জাতিক ক্বিরাত সংস্থা ইক্বরার উদ্যোগে ও কসবা পুরাতন বাজার ব্যবসায়ী কমিটির ব্যবস্থাপনায় গত শনিবার স্থানীয় সুপার মার্কেট প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় এই ক্বিরাত সম্মেলন। এতে মিলনমেলা ঘটে মিশর, সিরিয়া, আলজেরিয়া, ভারত, ইরান ও বাংলাদেশসহ বিশ্বসেরা ক্বারীদের। দেশের প্রথম কুরআনিক শিল্পকর্মের শহর কসবাকে আক্ষরিক অর্থেই কুরআন তেলাওয়াতের সুরের মূর্ছনায় মাতিয়ে তুলেন বিশ্ববিখ্যাত ক্বারীরা।
বিশ্বসেরা ক্বারীদের সুললিত কন্ঠে তেলাওয়াত শুনতে আসরের পর থেকেই অনুষ্ঠানস্থলে ভীড় করতে থাকেন হাজার হাজার কুরআন প্রেমিক তৌহিদি জনতা। বাদ আসর থেকে ইশা পর্যন্ত কুরআন হাদিসের আলোকে বয়ান করেন দেশের বিশিষ্ট আলেমগণ। ইশা নামাজের পর বিদেশী ক্বারীগণ মঞ্চে উঠলে অনুষ্ঠানস্থল পরিণত হয় জনসমুদ্রে। আড়াইবাড়ীর বর্তমান গদিনিশিন পীর অধ্যক্ষ আল্লামা গোলাম সারোয়ারের সভাপতিত্বে শুরু হয় অনুষ্ঠানের মুল পর্ব। বিশ্ববিখ্যাত ক্বারীদের সুললিত কণ্ঠে বেজে উঠে মহাগ্রন্থ আল কুরআনের সুমধুর সুর। মুহুর্তেই উদ্বেলিত হয়ে উঠে মু’মিন হৃদয়। লাখো জনতার আল্লাহু আকবারের মুহুর্মুহু ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে আকাশ বাতাস। আল্লাহর কালামকে নিয়ে সুরের মূর্ছনা ছড়িয়ে তিলাওয়াত চলে টানা রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত।
কুরআন প্রেমিক মুমিনের হৃদয়ছোঁয়া কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করেন বর্তমান বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ট ক্বারী মিসরের ড. শাইখ আহমাদ আহমাদ নাঈনা, মিসরের খ্যাতনামা ক্বারী শাইখ মুহাম্মাদ মুহাম্মাদ মুরীজী, ইরানের ক্বারী সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ জাওয়াদ হুসাইনী, আরবের প্রখ্যাত সুরকার ও সিরিয়ার ইসলামী সঙ্গীতশিল্পী মুনশিদ, ক্বারী মু’তাসিম বিল্লাহ আল আসালী, আলজেরিয়ার ক্বারী শাইখ রিয়াদ আল জাযায়েরী, ভারতের ক্বারী মুহাম্মদ তাইয়্যিব জামাল ও বাংলাদেশের গৌরব বিশ্বখ্যাত ক্বারী শাইখ ক্বারী আহমাদ বিন ইউসুফ আল আযহারী ।
দীর্ঘক্ষণ কুরআন তেলাওয়াতে শ্রোতাদের মাঝে সামান্যতমও ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটেনি। বরং ক্বারীদের তেলাওয়াতের সাথে সাথে আল্লাহু আকবার, সুবহান আল্লাহ শ্লোগানে মুখরিত ছিল সারাক্ষণ। মহিলাদের জন্য মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে আলাদা স্থানে তেলাওয়াত শোনার ব্যবস্থা করা হয়।
আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বখ্যাত ক্বারীদের কন্ঠে কুরআন শুনতে এসেছিলেন হাজী আব্দুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাওলানা আব্দুল লতিফ। তিনি বলেন, যখন মঞ্চে একেকজন ক্বারী একেক ডায়মেনশনে তেলাওয়াত করছিলেন-মনে হচ্ছিল কুরআন বুঝি এইমাত্র আকাশ থেকে নাজিল হচ্ছে। আড়াইবাড়ী সাঈদীয়া কামিল মাদরাসার আরবী শিক্ষক (সহকারী অধ্যাপক) শেখ কামাল উদ্দিন বলেন, কুরআনের তেলাওয়াত কীভাবে মানুষকে আকৃষ্ট করে ক্বিরাত সম্মেলনের দৃশ্যই এর প্রমান। এটি কুরআনে জীবন্ত মুজেজা।কসবা পৌরসভার মেয়র মো. এমরান উদ্দিন জুয়েল বলেন, এ বছর কসবা পৌরসভার উদ্যোগে এই শহরে দেশের প্রথম কুরআনিক ভাস্কর্য (শিল্পকর্ম) স্থাপন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্বিরাত সম্মেলনের মাধ্যমে এটি স্বার্থকতা পেলো। উল্লেখ্য যে, এ বছর দ্বিতীয়বারের মতো কসবায় এই আন্তর্জাতিক ক্বিরাত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন