শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

আপনাদের জিজ্ঞাসার জবাব

| প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

প্রশ্ন: রসিকতা নির্দোষ পরিচ্ছন ও পরিমিত হওয়া কি দরকার ?
উত্তরঃ হাস্য রসিকতা মানবজীবনের একটি সুখকর উপাদান। এ ব্যাপারে সীমালঙ্গন করা যেমন ক্ষতিকর, তেমনি একদম রসিকতাহীন জীবন যাপন করাও বে-মানান। একজন মহান ও পূত পবিত্র ব্যক্তিত্বের পক্ষ থেকে ছোটদের সাথে হাসি রসের আচরণ, তাদের মনরোঞ্জন ও সম্মান বৃদ্ধির কারণ হয়। যা অন্য কোন পন্থায় অর্জিত হয় না। তাই রাসূলে কারীম (সা.) হাসি-কৌতুক করতেন। সাহাবায়ে কেরামের সাথে মাঝে মধ্যে হাসি-খুশি করতেন। এটাই হচ্ছে বড়দের পক্ষ হতে ছোটদের প্রতি সুখপ্রদ সোহাগ। তবে রসিকতা হতে হবে নির্দোষ পরিচ্ছন্ন এবং প্রজ্ঞাপূর্ণ। যে হাসি-মজা বা আমোদ-প্রমোদে মিথ্যা বা ধোকার সংমিশ্রণ থাকে এবং যে রসিকতা কারো মনোবেদনা বা মানহানীর কারণ হয় তা নাজায়েয ও নিষিদ্ধ। রাসূল (সা.) এদিকে ইঙ্গিত করেই বলেছেন ‘তোমার ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করো না এবং ঠাট্টা-বিদ্রæপ করো না। অর্থাৎ যে হাসি রসিকতা অন্তরে কঠোরতা সৃষ্টি করে অথবা আল্লাহর ধ্যান থেকে মানুষকে গাফেল করে বা কারো কষ্টের কারণ হয় কিংবা কারো গাম্ভীর্য ও মর্যাদা নষ্ট করে এধরনের হাসি-তামাশা নিষেধ। পক্ষান্তরে যে হাস্যরস মনে প্রফুল্লতা আনে এবং যে রসিকতা ইবাদত-বন্দেগী ও দ্বীনী কাজে দেহ-মনকে সজিব করা এবং দৈহিক ও মানসিক অবস্বাদ ও ক্লান্তি দূর করার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে এবং তা নির্দোষ হয় তা শুধু জায়েযই নয় বরং মুস্তাহাবও বটে। হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন ‘নবী করীম (সা.) কখনো কখনো তাকে (কৌতুক করে) ‘দুই কান ওয়ালা’ বলে ডাকতেন। (শামায়েলে তিরমিযী-২৩৬) রাসূল (সা.) হযরত আনাস (রা.) কে দুই কান ওয়ালা বলে সম্বোধন করেছেন এতে কোন মিথ্যা বা ভুল ছিল না। বিশেষ কোন কারণে হযরত আনাস (রা.) কে দুই কান ওয়ালা বলেছেন। যেমন তাঁর দুই কান তুলনামূলক বড় ছিল বা তাঁর শ্রবণশক্তি প্রবল ছিল। তিনি দূরের কথাও অনায়াসে শুনতে পেতেন।
তেমনিভাবে রাসূল (সা.) ছোট শিশুদের সাথেও হাসি-মজা করতেন। তাদের আনন্দ দিতেন। হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলে কারীম (সা.) আমাদের সাথে অবাধে মিশতেন। এমনকি তিনি আমার ছোট ভাইকে কৌতুক করে বলতেন ‘আবু উমায়ের কি করে নুগাইর’। অর্থাৎ তোমার নুগাইর পাখিটার কি অবস্থা? আবু উমায়ের এর খেলার পাখিটা মারা গেলে সে অনেক কষ্ট পায়। তাই তার মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে রাসূল (সা.) তাকে সান্ত¦না দেয়ার জন্য পাখিটির অবস্থার কথা জিজ্ঞেস করেন। এভাবে রাসূল (সা.) তার সাথে কথা বলার দ্বারা তার মাঝে দুঃখ দূর হয়ে আনন্দ ফিরে আসে।
আমরা অনেক সময় শিশুদের সাথে রসিকতা করতে গিয়ে তাকে কাছে ডাকার জন্য খালি হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলি ‘আস তোমাকে দিবো’ এটা মিথ্যা, ধোকার অন্তুর্ভুক্ত হওয়ায় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এতে প্রথমত ধোকার গুনাহ হয়। দ্বিতীয়ত এই শিশুটি এখানে একটা অনৈতিক শিক্ষা পায় এবং তার হৃদয়ে বিষয়টি বদ্ধমূল হয়ে যায়। বড় হলে তার কাছে এটাকে আর অন্যায় বা অনৈতিক মনে হবে না। অতএব যার সাথেই হোক না কেন হাসি-মজা বা রসিকতা হতে হবে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ধোকা মুক্ত। হতে হবে নির্দোষ ও সত্য। হযরত আবু হুরায়রা (রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন একবার কিছু সাহাবী আরজ করেন ইয়া রাসূলাহ! আপনি আমাদের সাথে কৌতুকও করেন ? রাসূল সা. বলেন আমি কেবল সত্য কথাই বলে থাকি। (এমনকি কৌতুকেও) (শামায়েল-২৩৮)
অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলে কারীম (সা.) এর নিকট এক বৃদ্ধা এসে বলল হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আল্লাহর নিকট দোয়া করুন যেন তিনি আমাকে জান্নাত দান করেন। তখন রাসূল (সা.) (রসিকতা করে) বলেন হে অমুকের মা; জান্নাতে কোন বৃদ্ধা প্রবেশ করবে না। পরে বৃদ্ধা মহিলাটি কাঁদতে কাঁদতে ফিরে যাচ্ছিল। তখন রাসূল (সা.) সাহাবাদের বললেন যে, তাকে গিয়ে বল, সে বৃদ্ধা হয়ে যাবেনা; বরং সে যুবতী ও চির কুমারী হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (শামায়েল-২৪১)
এখানেও রাসূল (সা.) কোন মিথ্যা বা অসত্য বলেননি। এভাবে বিভিন্ন সময় রাসূল (সা.) সাহাবায়ে কেরামদের সাথে হাসি-তামাশা করতেন। তবে রসিকাতর মধ্যেও কখনও মিথ্যা বা ধোকার আশ্রয় নিতেন না। সর্বদা সত্য ও বাস্তব বিষয়াদিতেই রসিকতা করতেন।
উত্তর দিচ্ছেন : ইমামুদ্দীন সুলতান

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন