বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

এই ভয়াবহ হামলার তীব্র নিন্দা জানাই

প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

পাকিস্তানের লাহোরে গত রোববার শিশুদের একটি পার্কে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে অন্তত ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমে গুলশান-ই-ইকবাল নামের একটি বড় পার্কে শিশুদের দোলনার কাছে বর্বরোচিত এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। দিনটি সরকারী ছুটির দিন থাকায় স্বাভাবিকভাবেই পার্কে ভিড় ছিল। বিস্ফোরণে তিন শতাধিক আহত হয়েছে। হতাহতের অধিকাংশই শিশু ও মহিলা। নিহতদের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, পুরো এলাকায় বিস্ফোরণের ধাক্কায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া মানুষের দেহাংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। ঘটনার দায় কেউ স্বীকার না করলেও পুলিশ জানিয়েছে, একজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অত্মঘাতী হামলাকারীর বিচ্ছিন্ন মাথা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে কারা হামলা করেছে সে সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ উদ্ধৃত করে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণের পর সেখানে পালাতে থাকা লোকদের হুড়োহুড়িতে এক চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় পালাতে গিয়ে অনেক শিশুই তাদের বাবা-মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আমরা বর্বরোচিত ও নৃশংস এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাই এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা।
পাকিস্তানে এ ধরনের অত্মঘাতী হামলা অনেকটা নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কয়েক বছর ধরেই এ ধরনের জঘন্য ঘটনা ঘটে চলেছে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এ ধরনের ঘটনার কারণে দেশটি একটি অনিরাপদ দেশে পরিণত হয়েছে। এ বছর শুরুতেই এক বন্দুকযুদ্ধে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের খাইবার পাকতুন খাওয়া প্রদেশের চারসাড্ডা জেলায় বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের অন্তত ২৫ জন নিহত হয়। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এক স্কুলে হামলা করে ১৩৪ জন শিক্ষক ও ছাত্রকে হত্যা করে জঙ্গিরা। ২০১৫ সালে পেশোয়ারে একটি মসজিদে বোমা ও বন্দুকযুদ্ধে কমপক্ষে ২২ জন নিহত এবং ৬০ জন আহত হয়। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ওই বছর দেশটিতে নিষিদ্ধঘোষিত তাহরিকে তালেবান বা টিটিপির হামলায় অল্পের জন্য রক্ষা পান দেশটির প্রধানমন্ত্রী মিয়া নেওয়াজ শরিফ। ওই বছর পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সুজা খানজাদা নিজের অফিসে আাত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হন। হত্যার চেষ্টা থেকে বেঁচে যান পাকিস্তানের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ওয়াসিম আকরাম। এ ধরনের বহু হামলা শুধু স্কুল, কলেজ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, সুরক্ষিত এলাকাতেও মাঝেমধ্যেই ঘটে চলেছে। কার্যত এ ধরনের হামলার ফলে দেশটির আর্থসামাজিক ব্যবস্থা একপ্রকার ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। কেন এবং কী কারণে পাকিস্তানে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বা ঘটার মতো বাস্তবতা তৈরি হয়েছে, তা বোধকরি সবারই জানা। এ ক্ষেত্রে জঙ্গি সংগঠন তালেবানের উত্থান এবং তার ভয়ঙ্কর কর্মকা-ই মূলত দায়ী। দেশটিতে দীর্ঘদিন সামরিক শাসন থাকার ফলে এক ধরনের গোষ্ঠীস্বার্থ প্রাধান্য পাওয়া বর্তমান সংকটের অন্যতম কারণ। এছাড়া কথিত সন্ত্রাসী দমনের নামে যখন-তখন আমেরিকার ড্রোন হামলাও নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। দেশটিকে রক্ষার জন্য সেখানে বেসামরিক শাসন চালু রাখার পক্ষে সকল মহল একমত হলেও পরিস্থিতির খুব একটা যে উন্নতি হয়েছে তা মনে করেন না পর্যবেক্ষকরা। তবে এ কথাও ঠিক, পরিস্থিতি পরিবর্তনে দেশটির সরকারের ইতিবাচক প্রচেষ্টা রয়েছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, আত্মঘাতী হামলা বা এ ধরনের বর্বরোচিত হামলা সমস্যা সমাধানের কোনো পথ হতে পারে না। এতে কেবল নিরীহ মানুষের মৃত্যুই হয়। অতীতের মতোই এবারেও পার্কে বোমা হামলায় মূলত শিশু এবং নারীরাই বেশি নিহত ও আহত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কী উদ্দেশ্য হাসিল করতে চেয়েছে তা বোধকরি কারো কাছেই পরিষ্কার নয়। কেবল নিন্দা কুড়ানো ছাড়া আর কোনো লাভ হয়েছে বলে মনে হয় না। এই আত্মঘাতী প্রবণতা বন্ধ করতে সকল মহলেরই করণীয় রয়েছে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত অপরিহার্য। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংকট সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। এ অঞ্চলে শক্তির ভারসাম্য বিধানে পাকিস্তানের অপরিহার্যতা নিশ্চিত করতেই পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এটা সকলেরই মনে রাখা দরকার, হিংসা-বিদ্বেষ পরিস্থিতিকে ক্রমাগত অবনতিশীলই করে। রক্ত কেবল রক্তই বয়ে আনে, শান্তি প্রতিষ্ঠা করে না। মনে রাখতে হবে, যারা মানুষ হত্যার পথে সমাধান আশা করে, তারা ভ্রান্তপথে রয়েছে। তারা এ পথ পরিহার করে শান্তিপূর্ণ পথ বেছে নেবে, এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন