শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মুক্তাঙ্গন

হুমকির সম্মুখীন রেমিট্যান্স প্রবাহ

প্রকাশের সময় : ৩০ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মিঞা মুজিবুর রহমান
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার এক বড় অংশ অর্জিত হয় প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আয়ের মাধ্যমে। দুনিয়াজুড়ে মন্দার অশুভ প্রভাব ছোবল হানার পর অনেক নেতৃস্থানীয় দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়লেও বাংলাদেশে তার কোনো প্রভাব অনুভূত হয়নি রেমিট্যান্স আয়ের রমরমা অবস্থার কারণে। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের এই সহজতম উৎস এখন হুমকির সম্মুখীন। দেশের জনশক্তির বাজার দিন দিন সঙ্কুচিত হয়ে পড়ায় এ ক্ষেত্রটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ায় জনশক্তি প্রেরণ একপ্রকার থমকে গেছে। নতুন শ্রমবাজার খোঁজার নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও তা সফলতার মুখ দেখেনি। অদক্ষ শ্রমিক নেয়া থেকে বিরত থাকছে জনশক্তি আমদানিকারক বিভিন্ন দেশ।
বাংলাদেশ মূলত অদক্ষ জনশক্তি রফতানি করেই এতকাল বাজারমাত করেছে। প্রতিকূলতা সত্ত্বেও চলতি বছরে সাত লাখ জনশক্তি প্রেরণের টার্গেট নেয়া হয়েছে। দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় যে উদ্যোগ নিয়েছে তা সফল হলে এ ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে তা কমে আসবে। বাংলাদেশের বৃহৎ শ্রমবাজার সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত ও কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের বাজার সচল করতে নানা কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে কয়েকটি দেশ সফরে গিয়ে বন্ধ শ্রমবাজার খোলার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করেছেন। সে সময় কয়েকটি দেশ জনশক্তি নেয়ার আগ্রহ দেখালেও পরে এর সুফল পাওয়া যায়নি। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ৬ থেকে ৭ বছর ধরে বৈধপথে কর্মী নিয়োগ হচ্ছে না। মালয়েশিয়াতেও ৬ বছরের বেশি সময় ধরে বৈধভাবে কোনো কর্মী যেতে পারছে না। মালয়েশিয়া ১৫ লাখ কর্মী নিয়োগের ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত তা ভেল্কিতে পরিণত হয়েছে। এ ব্যাপারে ওই দেশটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে তেমন কোনো তথ্যও এখন দেয়া হচ্ছে না। বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরব এখন শুধু মহিলা কর্মী নিয়োগে আগ্রহী। কিন্তু আগ্রহী মহিলা কর্মীর অভাবে সে সুযোগ কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না। সব মিলে জনশক্তির বাজার অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিশ্বমন্দার কারণে দুনিয়াজুড়ে শ্রমবাজারে যে প্রতিকূলতা সৃষ্টি হয়েছে তার শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ। এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। দক্ষ জনশক্তি রফতানির সুবিধার্থে গ্রহণ করতে হবে ব্যাপক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে কোর মানুষই ফেলনা নয়। প্রতিটি মানুষই তার দেশের জন্য সম্পদ। কারণ মানুষের শ্রম ও মেধায় একটি দেশ বা জাতির অগ্রগতি নিশ্চিত হয়। আমাদের দেশের অভ্যন্তরে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে, তাই গুরুত্ব এসেছে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার। কারণ একজন দক্ষ-প্রশিক্ষিত মানুষ আত্মকর্মসংস্থানের পথটাও নিজেরাই অনেকটা বাতলে দিতে পারেন, যদি যথাযথ রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য মেলে।
শিক্ষিত কিংবা দক্ষ জনশক্তি একটি সমাজ ও রাষ্ট্রে নানা রকমভাবে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। নৈতিক মূল্যবোধের যে অবক্ষয় এই সমাজে ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠছে এ থেকে মুক্তির লক্ষ্যেও এর গুরুত্ব অনেক বেশি। সমাজ আলোকিত হয় শুভবুদ্ধিসম্পন্ন, জ্ঞানবান মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। শুধু দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রয়োজনেই নয়, বর্তমান বিকাশমান বিশ্বের সঙ্গে তালমিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্যও এর কোনো বিকল্প নেই। উদ্ভাবনী শক্তি ও বিজ্ঞান প্রযুক্তিসহ নানা ক্ষেত্রে শিক্ষায় শিক্ষিতদের হাত ধরেই দেশ-জাতি বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। এ জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ নিশ্চিত করা, মানসম্পন্ন শিক্ষা গ্রহণের পথ কুসুমাস্তীর্ণ করা, একই সঙ্গে দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের পথ প্রশস্ত করা।
বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় শিক্ষিত ও দক্ষতাসম্পন্নদের কদর ক্রমেই বাড়ছে। সব ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের দ্বার অবারিত করা যাবে এমনটি সহজ না হলেও শিক্ষিত দক্ষতাসম্পন্নরা যাতে নিজ নিজ ক্ষেত্রে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ লাভ করতে পারেন এ বিষয়টি সরকারকে গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে। কর্মক্ষম হাতের অধিকারী কিংবা সৃজনশীলরা যাতে অলস পড়ে না থাকেন তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই। বিপুল সম্ভাবনা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও যেসব কারণে এখানে এগিয়ে যাওয়ার যে প্রতিকূলতা প্রতিবন্ধকতার প্রাচীর দাঁড়িয়ে আছে, তাও ভেঙে ফেলতে হবে।
ষ লেখক : মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল ও চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মিডিয়া এন্ড ম্যানেজম্যন্ট ট্রেনিং ইনিস্টিটিউট

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন