শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহান একুশে সংখ্যা

ভাষা আন্দোলনের সাত দশক

মা হ মু দ শা হ কো রে শী | প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

আমাদের ভাষা আন্দোলনের সাতটি দশক উত্তীর্ণ হয়ে গেল, এবার অমর একুশেরও ৬৬টি বছর পূর্ণ হবে। আমরা বেঁচে আছি এই কালপরিক্রমায় অংশগ্রহণ করে, এর নানাবিধ অর্জনের ভাগিদার হয়ে। কী সৌভাগ্য!
১৯৪৮ সাল থেকে অধ্যাপক আবুল কাসেম, কাজী মোতাহার হোসেন, শাহেদ আলী, আব্দুল গফুর প্রমুখ ভাষা আন্দোলনের মূল সূত্রটি সবাইকে ধরিয়ে দেন। এরপর ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রæয়ারি ছাত্র-জনতার অমর আত্মদানে দেশব্যাপী জ্বলে উঠল আগুন আর সে আগুন ছড়িয়ে গেল সবখানে। শহীদ বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরো অনেকের আত্মহুতি শুধু ভাষার ক্ষেত্রে নয়, পরবর্তীতে রাজনীতিতে স্বাধিকার লাভে ফলপ্রসূ অবদান রাখল। ১৯৫৪ সালে একুশ দফা নিয়ে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী বিজয় তারই প্রথম লক্ষণ। আরো দু’বছর পর বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা তারই প্রধান অর্জন। এরপর বিবিধ আন্দোলন, রাজনীতি ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে দেশে এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করল যাতে আমরা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য মরিয়া হয়ে দাঁড়িয়ে যাই। নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে আমরা বিজয় লাভ করি। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ফলে বাংলা ভাষার ব্যবহার ও গবেষণা অনেকদূর এগিয়ে যায়। আমাদের বুদ্ধিবৃত্তি চর্চা ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধি সাধন যুগপৎ বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিন্তু সমস্যাও অনেক এসে পড়ে সামনে। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও বৈদেশিক সমস্যা একের পর এক জাতিকে বিভ্রান্ত ও বিদ্বিষ্ট করে তোলে। মূল্যবান খনিজ পদার্থ ও কাঁচামালের অভাব সূচনালগ্ন থেকে এ পঙ্গু অর্থনীতির জন্ম দিয়েছে। কুশাসন ও রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। সামাজিক দিক থেকেও সমস্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। জনসংখ্যা স্ফীতি ও নানামুখী সঙ্কট জাতিকে বহু অঘটনের মুখোমুখি করেছে। বন্ধু ও শত্রæভাবাপন্ন বিদেশী শক্তিসমূহ যেমন অনেক ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করেছে, তেমনি সৃষ্টি করেছে নানা অন্তর্দ্ব›দ্ব ও স্বাভাবিক সম্পর্কোন্নয়নে সমস্যাগত দেশের প্রশিক্ষিত ও জনসম্পদের একটি বড় অংশের বিদেশ গমন ও ক্রমশ পরিকল্পিত অগ্রগতির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়।
সমস্ত প্রতিকূলতা সত্তে¡ও বাংলাদেশ তার অস্তিত্ব বজায় রেখেছে এবং একটি বিশেষ আন্তর্জাতিক মানে অবস্থান করছে। এটা কী করে সম্ভব? এটা সম্ভব হলোÑ ভাষা আন্দোলনের বীর সেনানীরা সাত দশক ধরে অটল অবস্থানে থেকে অতি সন্তর্পণে জাতিকে সঠিক পথে পরিচালনা করে যাচ্ছেন বলে আমার এই বক্তব্য আশা করি সর্বজন গ্রাহ্য হবে। ধারাবাহিকভাবে অমর একুশে ও মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আজ আমরা বাংলাভাষী জাতিরূপে বিশ্ববিদিত। যথেষ্ট অপূর্ণতা সত্তে¡ও বাংলা ভাষার প্রতি ঐকান্তিক অনুরাগ আমাদের মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। সর্বাঙ্গীণ উন্নয়ন সময়ের ব্যাপার। কালে আমরা সব বাধা উত্তরণে সমর্থ হব, সে বিশ্বাস আমার আছে।

[ভাষা আন্দোলনের কর্মী, অমর একুশের সৈনিক, বিদেশে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার অগ্রণী গবেষক, অধ্যাপক, মুক্তিযোদ্ধা, বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক]

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Add
Md.jahangir Alom ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৭:২৩ এএম says : 0
আমাদের ভাষা আন্দোলনের সাতটি দশক উত্তীর্ণ হয়ে গেল, এবার অমর একুশেরও ৬৬টি বছর পূর্ণ হবে। আমরা বেঁচে আছি এই কালপরিক্রমায় অংশগ্রহণ করে, এর নানাবিধ অর্জনের ভাগিদার হয়ে। কী সৌভাগ্য বান।আমি একুশে পালন করতে পেরে আন্নাদিত।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর