এডেনয়েড একটি শিশুদের রোগ। এটা হলো এক ধরনের লিম্ফয়েড টিস্যু যা নাকের পিছনে গলবিলের উপরিভাগে থাকে। সাধারণত দুই বছরের নিচের শিশুদের এডেনয়েড শুরু হয়, সাত বছর বয়সে বড় হয় এবং বার বছর বয়সে সম্পূর্ণ মিলিয়ে যায়। তিন থেকে বার বছরের মধ্যে যদি উপরের শ্বাসনালীর ইনফেক্শন হয় অথবা এডেনয়েডের ইনফেক্শন হয় তাহলে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়।
এডেনয়েডের উপসর্গসমূহ:
শিশুদের এডেনয়েডের জন্য উপসর্গসমূহকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় -
নাক বন্ধ থাকার জন্য
গলবিল এবং মধ্য কর্ণের সংযোগকারী ইউস্টাশিয়ান টিউব (Eustachian tube) বন্ধ জনিত
ইনফেক্শন অথবা প্রদাহ থাকার কারণে
নাক বন্ধ জনিত উপসর্গসমূহ:
নাক বন্ধ থাকার কারণে শিশুরা মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়
নাক দিয়ে সর্দি পড়তে থাকে
এডেনয়েডের জন্য শিশুরা মুখ হা করে ঘুমায়
সাইনুসাইটিস হতে পারে
নাকের স্বরে কথা বলা
ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা
ঘুম ভেঙ্গেঁ জোরে জোরে শ্বাস নেয়া
ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে
ইউস্টাশিয়ান টিউব বন্ধ থাকার উপসর্গসমূহ:
মাঝে মাঝে কানে ব্যথা হওয়া
পর্দার পিছনে মধ্য কর্ণে পানি (Effusion) জমে, যাকে অটাইটিস মিডিয়া উইথ ইফিউশন বলে।
কানে কম শোনা
অনেক সময় মধ্য কর্ণে ইনফেক্শন হতে পারে
স্কুলের পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়
রেডিও টেলিভিশন উচ্চ স্বরে শোনে
এডেনয়েডের জন্য জটিলতা সমূহ:
শিশুদের খেতে কষ্ট হয় যেহেতু শিশুরা এডেনয়েডের জন্য মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়
খেতে অনেক সময় লাগে
পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়
শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ব্যহত হয়
নাকের স্বাভাবিক বৃদ্ধি হয় না বলে নাক ছোট হয়ে যায়
নাক ও মুখের মাঝখানের খাঁজ থাকে না
মুখ দিয়ে লালা গড়িয়ে পরে
সামনের দাঁত উচু এবং এলোমেলো হয়ে যায়
এই উপসর্গ সমূহ থাকলে মুখমন্ডল ভাবলেশহীন হয়ে যায় এবং আই কিউ কমে যায়। উপরোক্ত উপসর্গ সমূহ দেখা দিলে তাকে এডেনয়েড ফেসিস (Adenoid facies) বলে। এই ধরণের শিশুদের মুখ দেখলেই চেনা যায়।
রোগ নির্ণয় :
রোগের ইতিহাস, পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং এক্ররে-র মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা যায়। এক্ররে-র মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে জানা যায় এবং নাসারন্ধ ও গলবিলের মাঝখানে মাংস পিন্ড দেখা যায় যা শ্বাসনালীকে বাধাগ্রস্থ করে রাখে।
চিকিৎসা :
এডেনয়েড যদি অল্প পরিমানে বড় হয় তাহলে ঔষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়। কিন্তু বেশী বড় হয়ে গেলে এবং শ্বাসনালীকে বাধাগ্রস্থ করলে এবং কোন উপসর্গ দেখা দিলে অপারেশন করে ফেলা ভাল।
এডেনয়েড অপারেশনকে এডেনয়ডেকটমি বলে। এটা অত্যন্ত নিরাপদ সার্জারী। অপারেশনের পরে রোগী মুখে খেতে পারবে, মাত্র একদিন হাসপাতালে অবস্থান করতে হবে অথবা ডে-কেস সার্জারী হিসাবে করা যায়। আমাদের দেশে এডেনয়ডেকটমি অপারেশন নিয়মিত করা হচ্ছে।
-অধ্যাপক ডাঃ এম আলমগীর চৌধুরী
নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ সার্জন
বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি বিভাগ
আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,
রোড ৮, ধানমন্ডি, ঢাকা, ০১৯১৯ ২২২ ১৮২
ই-মেইলঃ alamgir.chowdhury07@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন