শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সাইফুর’স কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান শিক্ষামন্ত্রীর

প্রকাশের সময় : ৩০ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : সাইফুর’স কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। প্রতিষ্ঠানটির প্রধানকে চোরের রাজা আখ্যা দিয়ে আইনের মাধ্যমে এর শেষ দেখতে চেয়েছেন তিনি। একইসাথে হ্যাকার তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করা সাইফুর’স কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সকলের সমর্থনও চেয়েছেন মন্ত্রী। গতকাল (মঙ্গলবার) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এথিক্স অ্যাডভান্স টেকনোলজি লিমিটেড (ইএটিএল) আয়োজিত বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষাবিষয়ক কনটেন্ট শেয়ারিং পোর্টাল বফঁঃঁনবনফ.পড়স এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সাইফুর’স-এর বিজ্ঞাপনের বিষয়ে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, কয়েকদিন আগে একটা বিজ্ঞাপন বেরিয়েছে, সাইফুর নামে একজন টিচার ছিলেন, তার এমনই রমরমা ব্যবসা, এটা (কোচিং) বেআইনি, হাইকোর্টের রায়ে দেওয়া। আমরাই বেআইনি করেছি, কিন্তু আমার তো শক্তি নেই। শক্তি নেই কেন, এখনই চাইলে একদল ছাত্র নিয়ে ভেঙে-গুঁড়িয়ে দেব। আমরা সে পথে যাব না। হাইকোর্ট রায় দিলেও পারি না।’ তিনি বলেন, ‘আদর্শ হ্যাকার হওয়ার জন্য বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে! আমাদের বিজ্ঞজনরা কিছুই বললেন না! আমি তো মনে করছি এ বিজ্ঞাপন দেখে তোলপাড় শুরু হয়ে যাবে। কেউ কোনো বিবৃতিও দিলেন না!’ এ সময় যারা এ বিজ্ঞাপন ছাপিয়েছে তাদের কঠোর সমালোচনা করেন। কোচিং সেন্টারটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য শিক্ষাসচিবকে নির্দেশ দেওয়ার কথা উল্লেখ করে বিজ্ঞাপনটি পড়ে শোনান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তার মাথায় এশ জ্ঞান..., সেই লোকটাকে আদর্শ হিসেবে ধরে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, গবেষক, হ্যাকারÑসব এক মাপে নিয়ে বলেছেন, আমার কাছে আসো, হ্যাকিং ভালো করে শিখে যাও!’ উপস্থিতিদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এটা সমাজ! তিনি নাকি শিক্ষক ছিলেন, ব্যবসা করার জন্য ছেলেমেয়েদের প্রলোভন দেখাচ্ছেনÑভালো হ্যাকার হতে পারবে, ইংলিশ শিখলে এসো আমার কাছে, শেখো। ‘হ্যাকার হওয়ার জন্যও তার কাছে গিয়ে পড়তে হবে! বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, এটা অবশ্যই বেআইনি, (এ ধরনের বিজ্ঞাপন) দিতে পারে না। আমরা তার (সাইফুরস) বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সাইফুরস এই বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। তারা ভালো চোর বানাতে চাইছে। এ রকম লোকের বিরুদ্ধে যদি আমরা সোচ্চার না হই তাহলে আমরা কী করে থাকব সমাজে?’ মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মামলা করছি, আপনাদের প্রতিক্রিয়া সবার কাছে জানতে চাই।’
উপস্থিত সকলের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘চিন্তা করতে পারছেন, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-গবেষক-হ্যাকার সবাইকে এক সারিতে নিয়েছেন। এজন্য বলি, শুধু জ্ঞান অর্জন করলে হবে না, ভালো মানুষ হতে হবে। জনগণের প্রতি দরদি হতে হবে। তবেই সে জনগণের কল্যাণে, দেশের কল্যাণে, দেশের উন্নয়নে যাবে, নিজেও সার্থক হবে। না হলে সে চোর হবে, ধরা পড়বে, সর্বনাশ হবে, আল্টিমেটলি বাঁচতে পারবে না।’ সাইফুর’স কোচিং সেন্টার নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আর এই চোরের রাজা, যিনি চোরামি শেখাতে চান, তার বিরুদ্ধে কী হবে Ñ এ দেশের আইন কী বলে আমরা শেষ পর্যন্ত দেখে ছাড়ব।’
নতুন প্রজন্মকে আধুনিক শিক্ষা, জ্ঞান, প্রযুক্তি-দক্ষতা অর্জন করে ভালো মানুষ হয়ে ওঠার আহ্বান জানিয়ে নাহিদ বলেন, আমরা প্রযুক্তির ব্যবহার করছি, করতেই হবে এবং ব্যবহার বাড়াতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। এটা মনে রাখতে হবে, ছেলেমেয়েরা যেন প্রযুক্তির দাস না হয়ে যায়।
ইটিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যান এমএ মুবিন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এশিয়া প্যাসেফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক মিসেস নীলুফার আহমেদ প্রমুখ। গবেষণাধর্মী শিক্ষা বিষয়ক পোর্টালটি ব্যবহার করে দেশের শিক্ষার্থীরা তাদের যাবতীয় নোট, উপকরণ, লেকচারসহ যাবতীয় শিক্ষা সরঞ্জাম যেকোনো ফরম্যাটে আপলোড ও শেয়ার করতে পারবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে ১০১ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৮০০ কোটি টাকা) চুরি করেছে হ্যাকাররা। এর একটি অংশ (২০ মিলয়ন ডলার) শ্রীলঙ্কা থেকে উদ্ধার করা হয়। হ্যাকারদের সামান্য একটি বানান ভুলের কারণে এই টাকাটা ধরা পড়ে। বাকি ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইন হয়ে গেছে হংকংয়ে। সেটি এখনো উদ্ধার হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থচুরির পর গত ১৩ মার্চ একটি সংবাদপত্রে ‘হ্যাকারদের হাতছাড়া’ শিরোনামে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে সাইফুর’স কোচিং সেন্টার। ওই বিজ্ঞাপনে হ্যাকার বানানোর কথা বলে ইংরেজি শেখায় প্রলুব্ধ করে সাইফুর’স। হ্যাকার বানানোর প্ররোচনা দেওয়ায় গত ২৩ মার্চ সচিবালয়ে সভায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ কোচিং সেন্টারটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন। গত সোমবার দুর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্ত করা এবং মামলা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে শিক্ষা সচিবকে নির্দেশনা দেন মন্ত্রী। সাইফুর’স কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে রাজধানীর রমনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Monir Badal ৩০ মার্চ, ২০১৬, ৯:৪৩ এএম says : 0
আমাদের শিক্ষামন্ত্রী, সাইফুর’স কোচিং কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিলে দেশের অনেক মানুষ ভাল কিছু জানা/শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে ।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন