স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপিকে ভাঙার স্বপ্ন পূরণ না হওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতারা আবোল-তাবোল বকছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। তারা বলেন, আওয়ামী লীগ স্বপ্ন দেখেছিল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে নিয়ে দলকে ভাঙার ও নেতাকর্মীদের নামে মামলা দেয়ার, কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি।
তারা মনে করেছিল, খালেদা জিয়াকে জেলে নিলে বিএনপি ভাঙবে, নেতাকর্মীরা রাজপথে নেমে ভাঙচুর করবে, আর সেই সুযোগে নিজেদের আয়োজনে রাখা হাজার হাজার গাড়ি তারা নিজেরাই আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মামলা দেবে। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি, আশায় গুড়েবালি হয়েছে। কারণ বিএনপি এখন অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল (শুক্রবার) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় তারা এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারের আশা ছিল; খালেদা জিয়াকে আটক করলে বিএনপিকে ভেঙে ফেলা যাবে। তাদের সেই আশাপূরণ হয়নি। দলের সমস্ত নেতা এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এখন শুধু বিএনপির জন্য নয়, গোটা জাতির জন্য একটা পরীক্ষা চলছে। আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করছি শুধু খালেদা জিয়া, বিএনপি রক্ষার জন্য নয়, এই দেশকে রক্ষা, গণতন্ত্রকে রক্ষা এবং দেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্বকে রক্ষা করার জন্য। মির্জা ফখরুল বলেন, ভাষা আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ও মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল গণতান্ত্রিক চেতনা। কিন্তু আজকে সেই গণতন্ত্রই লুণ্ঠন হয়ে গেছে। গণতন্ত্রকে নিঃশ্ব করা হয়েছে। মানুষ আজ তাদের অধিকার হারা। ভোটের অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার, মুক্তভাবে বেঁচে থাকবার অধিকার তাদের নাই। আর যে নেত্রী গণতন্ত্রকে মুক্ত করবার, গণতন্ত্রের পথে চলবার পথ দেখিয়েছেন সেই নেত্রীকে অন্যাভাবে মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছে এই সরকার। একদিকে তারা সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীকে জেলে রেখে অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে চড়ে সরকারি খরচে নৌকায় ভোট চাইছেন। এই অবস্থা চলতে পারে না। এই দুঃশাসন থেকে মুক্তি লাভের জন্য তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার আহŸান জানান। বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের এমন কোনো নেতা নেই যার বিরুদ্ধে মামলা নেই। এমন কোনো নেতা নেই যাকে মিথ্যা মামলায় জেলে নেয়া হয়নি। এই অবস্থা চলতে পারে না। নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের নির্দেশনা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশনেত্রী আমাদের নির্দেশ দিয়ে গেছেন শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন কর্মসূচি পরিচালিত করতে। আমরা তার সেই নির্দেশনা মেনে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের নির্দেশে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি চালিয়ে যাবো। সরকার নানাভাবে আমাদের উসকানি দেবে, তারা নানাভাবে ফাঁদ পাতবে। তাদের পাতা ফাঁদে কোনোভাবেই আমরা পা দেবো না।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশে এখন সরকারি দলের জন্য এক নিয়ম, বিরোধী দলের জন্য আরেক, সরকারি দলের জন্য এক রকম আইন আর বিরোধী দলের জন্য আরেক রকম আইন। অর্থনৈতিক বৈষম্য চলছে। সরকারি দলের লোকেরা ব্যাংকগুলো থেকে সাধারণ মানুষের টাকা লুট করে নিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা লুট হয়ে গেছে। এগুলো কি অন্যায় নয়? এভাবে চলতে পারে না। গণতন্ত্র আজকে আওয়ামী লীগ বাক্সে বন্দি করে রেখেছে। ৫ জানুয়ারি তারা গণতন্ত্রকে টুটি চেপে ধরে একদলীয় শাসনের নির্বাচন করেছে। এর থেকে অন্যায় আর কি হতে পারে? তিনি বলেন, সরকার মনে করেছিল খালেদা জিয়াকে জেলে নিলে বিএনপিকে দুর্বল করা যাবে। এ জন্য তারা বেগম খালেদা জিয়ার নামে বানোয়াট, মিথ্যা মামলায় জাল-জালিয়াতির কাগজপত্র দিয়ে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। কিন্তু সরকারকে মনে করিয়ে দিতে চাই, খালেদা জিয়াকে জেলে নিয়ে তারা সবচেয়ে বড় ভুল ও অন্যায় করেছে। এটা কোনো বিচারের বিষয় নয়, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফসল। কারণ এর আগে প্রধানমন্ত্রী বারবার বলেছেন, খালেদা জিয়াকে একদিনের জন্য হলেও জেলে যেতে হবে। তার সরকারের মন্ত্রীরা বলে বেড়িয়েছেন খালেদা জিয়ার শাস্তি হবে। এখনো তিনি সরকারি খরচে নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে খালেদা জিয়ার নামে মিথ্যাচার করছেন। মানুষকে বিভ্রান্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা করছেন। এর উদ্দেশ্য একটাই খালেদা জিয়া, বিএনপিকে ছাড়া ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি প্রহসনের নির্বাচন করতে চায়। ভোট ছাড়া নির্বাচন করে তারা ক্ষমতা আকড়ে রাখতে চায়।
বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকার মনে করেছিল খালেদা জিয়াকে সাজা দিলে জনগণ বিশ্বাস করবে যে, তিনি এতিমের টাকা খেয়েছেন। কিন্তু মানুষ জানে এবং বিশ্বাস করে, এমনকি সরকারও স্বীকার করেছে খালেদা জিয়া এতিমের টাকা খায়নি। যে অ্যাকাউন্টে ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ টাকা ছিল সেই টাকা এখন বেড়ে ছয় কোটি হয়েছে। এটি কিভাবে হয়েছে? টাকা তুলে নিলে তো সেই অ্যাকাউন্টে টাকা থাকার কথা নয়।
তিনি বলেন, সরকার আরো মনে করেছিল, বিএনপি নেত্রীকে জেলে নিলে তাদের নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেমে কিছু গাড়ি ভাঙচুর করবে। এ জন্য তারা হাজার হাজার গাড়ি রেডি করে রেখেছিল নিজের ভেঙে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে বিএনপির নামে চালিয়ে দেবে। আর তাদের নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিয়ে জেলে নেবে। বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল বানাবে। কিন্তু আমাদের নেত্রী অত্যন্ত দূরদর্শী। তিনি কারাগারে যাওয়ার আগে আমাদের নির্দেশ দিয়ে গেছেন শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার। আমরা সবাই সেই নিদের্শনা মেনেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। এতেই সরকারের স্বপ্ন ভেঙে গেছে। তাদের খায়েশ পূর্ণ হয়নি। এজন্য প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগ নেতারা এখন নানা রকম কথা বলছে। আমাদের কর্মসূচি তাদের পছন্দ হচ্ছে না। কারণ তাদের উদ্দেশ্য বুমেরাং হওয়ায় তারা হতাশ হয়ে গেছে। হতাশা থেকে এখন একেকজন আওয়ামী লীগ নেতা একেক রকম কথা বলছে।
ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, যারা বরাবরই গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা মানায় না। আওয়ামী লীগের নেতা ও বুদ্ধিজীবীরা ৭২-৭৫ এর কথা মুখে আনতে চায় না। সেই সময়ের কথা তারা বলতে চায় না। যেন সেই সময়টা দেশ থেকে হারিয়ে গেছে। গণতন্ত্রকে যারা নিঃশ্ব করেছে তারা গণতন্ত্রের কথা বলে। তিনি বলেন, বিরোধী দলকে কারাগারে রেখে সরকারি খরচে নৌকায় ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছে। আওয়ামী লীগ বিএনপি চেয়ারপারসনকে জেলে রেখে বিএনপিকে বাইরে রেখে আবারো একদলীয় নির্বাচন করতে চায়। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশর মাটিতে আর একদলীয় নির্বাচন হবে না। খালেদা জিয়াকে জেলে নিয়ে সরকার বিএনপির লাভ করে দিয়েছে মন্তব্য করে মওদুদ বলেন, খালেদা জিয়াকে একদিন বেশি রাখলে আওয়ামী লীগের ১০ লাখ ভোট কমবে আর বিএনপির ১০ লাখ ভোট বাড়বে। এভাবে প্রতিটা দিন আওয়ামী লীগের ভোট কমছে আর বিএনপির বাড়েছে। প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, আগামীকাল রোববার খালেদা জিয়ার জামিন হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপিতে নেতৃত্বের কোনো সমস্যা নাই। তারেক রহমান এখন বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার নেতৃত্বে বিএনপি এখন অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ।
মির্জা আব্বাস বলেন, যে দেশ আমরা যুদ্ধ করে পাকিস্তানের হাত থেকে মুক্ত করে এনেছিলাম সেই দেশ আজকে অন্য দেশের হাতে চলে গিয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠিয়ে তাকে নেলসন মেন্ডেলা বানিয়ে দিয়েছে। সব ফ্যাসিস্ট সরকারই তাদের শেষ সময়ে এসে এ ধরনের ভুল করে। আওয়ামী লীগও তাই করছে। এ সময় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, এনাম আহমেদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদিন ফারুক, গোলাম আকবর খোন্দকার, বিএনপি নেতা মনিরুল হক চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, কাজী আবুল বাশার, মুন্সি বজলুল বাসিত আঞ্জু প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন