কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী দেশের প্রয়োজন অনুযায়ী বন্যা, খরা, লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা ও রোগবালাইসহ প্রতিকূল পরিবেশ সহনশীল ধানের জাত ও লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে (ব্রি) এর বিজ্ঞানীদের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি কম পানিতে বেশি ধান উৎপাদন এবং উত্তরাঞ্চল কেন্দ্রিকতার পরিবর্তে ধান চাষাকে দক্ষিণাঞ্চল কেন্দ্রিক করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি আরো বলেন, আগে আমি বলতাম লবণের বাটিতে ধান উৎপাদনের কথা এখন আমি বলছি মরুভূমিতে ধান উৎপাদনের কথা। ২৪ ফেব্রæয়ারি গাজীপুরে ব্রির বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা ২০১৬-১৭ এর উদ্বোধনী সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ। এতে অতিথি ছিলেন কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান কবির ইকরামুল হক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মহসীন । অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর। ব্রির পরিচালক (প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) ড. মো. আনছার আলী এতে ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখেন। কর্মশালায় ‘গবেষণা অগ্রগতি ২০১৬-১৭’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রির পরিচালক (গবেষণা) ড. তমাল লতা আদিত্য।
ব্রি, বারি, বিএআরসি, ডিএই, ইরিসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। গত বছর ব্রি মোট ১০টি উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে । এর মধ্যে আছে জলমগ্নতা ও জলাবদ্ধতা সহনশীল আমন ধানের জাত ব্রি-৭৯, জেসমিন সদৃশ সুগন্ধি আমন ধানের জাত ব্রি-৮০, অনুকূল পরিবেশের উপযোগী স্থানীয় জনপ্রিয় জিরাশাইল জাতের অনুরূপ বোরো ধানের জাত ব্রি-৮১, নেরিকা-১০ এর বিশুদ্ধ সারি থেকে উদ্ভাবিত রোপা আউশ ধানের স¦ল্প মেয়াদি জাত ব্রি-৮২, স্থানীয় জনপ্রিয় কটকতারা জাতের অনুরূপ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন বোনা আউশ জাত ব্রি-৮৩, যা চারা অবস্থায় মধ্যম মাত্রায় খরা সহনশীল। এছাড়া আছে উচ্চমাত্রার জিংক (২৭.৬ পিপিএম) সমৃদ্ধ বোরো ধানের জাত ব্রি-৮৪, বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলের উপযোগী রোপা আউশ ধানের জাত ব্রি-৮৫,অ্যানথার কালচার পদ্ধতিতে উদ্ভাবিত বোরো ধানের জাত ব্রি-৮৬। অধিকন্তু গত বছর ব্রি উদ্ভাবিত জাতের মধ্যে আরো আছে দু’টি হাইব্রিড ধানের জাত-ব্রি হাইব্রিড ৫ ও ব্রি হাইব্রিড ৬। ব্রি পূর্ববর্তী গত বছরে ৪০টি উফশী ধানের জাতসহ বেশ কিছু প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও উন্নয়ন করেছে। উদ্ভাবিত এ জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে লবণাক্ততা সহনশীল বোরো জাত ব্রি-৬১ ও ব্রি-৬৭, জিঙ্ক সমৃদ্ধ ব্রি-৬২, ব্রি-৬৪, ব্রি-৭২ ও ব্রি-৭৪, ঐতিহ্যবাহী বালাম চালের অনুরূপ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন এবং সরু বালাম নামে পরিচিত জাত ব্রি-৬৩, সরাসরি বপনযোগ্য আগাম আউশ ধানের জাত ব্রি-৬৫, খরা সহনশীল ও উচ্চ মাত্রার প্রোটিন সমৃদ্ধ বোরো জাত ব্রি-৬৬, বোরো মৌসুমের আদর্শ উফশী জাত ব্রি-৬৮ এবং কম খরচে আবাদযোগ্য উফশী জাত ব্রি-৬৯ ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্রি উদ্ভাবিত জাতের মধ্যে আরো আছে, দেশে কৃষক মহলে ব্যাপক জনপ্রিয় এবং বোরো মৌসুমে সর্বোচ্চ ফলন দিতে সক্ষম ব্রি-২৯ এর সমপর্যায়ের গুণাগুণ স¤পন্ন ব্রি-৫৮ এবং আমন মৌসুমের জনপ্রিয় বি-১১ এর সমতুল্য ব্রি-৪৯। তবে এটি ব্রি-২৯ এর চেয়ে প্রায় এক সপ্তাহ আগাম। পাশাপাশি বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রেক্ষাপটে নানা প্রতিক‚লতা মোকাবিলার লক্ষ্যে ব্রি বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত নয়টি লবণ-সহিষ্ণু, দু’টি জলমগ্নতা সহিষ্ণু, তিনটি খরা সহিষ্ণু, একটি খরা পরিহারকারী, দু’টি শীত সহনশীল এবং চারটি জিঙ্ক সমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন। বিভিন্ন ধরনের বৈরী পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার উপযোগী আরো ধানের জাত উদ্ভাবনের কাজ দ্রæত এগিয়ে চলছে। ধানের গুণাগুণ বৃদ্ধির জন্য তারা ভিটামিন এ এবং আয়রন সমৃদ্ধ ধান উদ্ভাবনের কাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ব্রি উদ্ভাবিত সরু ও সুগন্ধযুক্ত বোরো মৌসুমের জাত ব্রি-৫০ বা বাংলামতি রফতানি সম্ভাবনাময়। বর্তমানে দেশের ৮০ ভাগ জমিতে ব্রি উদ্ভাবিত ধানের জাতের চাষাবাদ হয় এবং এর থেকে আসে দেশের মোট ধান উৎপাদনের শতকরা ৯১ ভাগ। ব্রি এ পর্যন্ত ৬ টি হাইব্রিডসহ মোট ৯১ টি উফশী ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে যার মধ্যে বেশ ক’টি প্রতিকূল পরিবেশ সহনশীল এবং উন্নত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। আশা করা যাচ্ছে, এগুলো কৃষক পর্যায়ে জনপ্রিয় হবে এবং সামগ্রিকভাবে ধান উৎপাদন বাড়বে। -বিজ্ঞপ্তি
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন