শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পার্বত্যাঞ্চলে ৫৩৩ কি.মি. অরক্ষিত সীমান্ত সুরক্ষিত করেছে বিজিবি

৫ বছরে ৪ হাজার ২শ’ ৬৭ কোটি টাকার চোরাচালান পণ্য ও ৩ কোটি ইয়াবা উদ্ধার: সীমাান্তে অস্ত্র মাদকসহ চোরাচালান দমনে জিরো টলারেন্স

| প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : নতুন ৪১টি বিওপি নির্মাণের মাধ্যমে ৩ পার্বত্য জেলায় ২৭১ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্ত সুরক্ষা করেছে বিজিবি দক্ষিণ-পূর্ব রিজিয়ন। আর এর মধ্যদিয়ে পার্বত্য জেলার ৫৩৩.৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত সুরক্ষিত হয়েছে। গেল পাঁচ বছরে এই রিজিয়নের অভিযানে উদ্ধার হয়েছে তিন কোটি ১১ লাখ চার হাজার ৮১১পিস ইয়াবা ট্যাবলেট। একই সময়ে উদ্ধার করা হয় ৪ হাজার ২শ’ ৬৭ কোটি টাকার চোরাচালান পণ্য। গতকাল (মঙ্গলবার) চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরে বিজিবি দক্ষিণ পূর্ব রিজিয়ন সদর দপ্তরে এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানান ভারপ্রাপ্ত রিজিয়ন কমান্ডার কর্নেল গাজী মোঃ আহসানুজ্জামান। 

সীমান্তে অস্ত্র এবং মাদকসহ চোরাচালান দমনে বিজিবি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে অস্ত্র ও মাদকের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এই বাহিনীর সদস্যরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশে ইয়াবা, ফেনসিডিলের চাহিদা আছে বলেই তা পাচার হয়ে আসছে। মাদক পাচার রোধ করতে হলে ব্যাপক সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। দেশে যখন চাহিদা কমে যাবে তখন পাচারও কমে আসবে। বাংলাদেশের আবেদন সাড়া দিয়ে ভারতে গড়েউঠা ফেনসিডিলের অনেক কারখানা ধ্বংস করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিয়ানমারকেও ইয়াবা কারখানার তালিকা দেয়া হয়। তারাও আশ্বাস দিয়েছে এসব কারখানা তারা ধ্বংস করে দেবে।
দক্ষিণ পূর্ব রিজিয়ন চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি প্রশাসনিক জেলা নিয়ে গঠিত। এই রিজিয়নের সাথে উত্তর দিকে রয়েছে ভারতের ত্রিপুরা এবং দক্ষিণ পূর্বদিকে মিজোরাম রাজ্য রয়েছে। বিজিবি বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জনসাধারণ ও সম্পদ রক্ষা ও চোরাচালান দমনে কাজ করছে। একই সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সিআইও বা কাউন্টার ইন্সারজেন্সি অপারেশন পরিচালনা করছে। এর অধীনে পার্বত্য চট্টগ্রামে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, উন্নয়নকালে নিরাপত্তা দেয়া, বেসামরিক প্রশাসনের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা, বাঙ্গালী ও উপজাতিদের মধ্যে সম্প্রীত বজায় রাখতেও ভূমিকা রাখছে বিজিবি।
সীমান্তে কিছু সীমাবদ্ধতার কথাও তুলে ধরে রিজিয়ন কমান্ডার বলেন, আমাদের একটা বর্ডার আউট পোস্ট (বিওপি) থেকে আরেকটির দূরত্ব কমপক্ষে পাঁচ কিলোমিটার। কিছু আছে ১২ থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে। হেঁটে যেতে ৪-৫ দিন সময় লাগে। ভারত দেশ বর্ডারে প্যারালাল রোড করেছে। আমাদের এরকম রোড নেই। তবে এ ধরনের রোড তৈরির বিষয়টি আমাদের পরিকল্পনায় আছে। এর আগে আমরা স্থানীয় সরকার বিভাগের সহযোগিতায় নিজেদের চেষ্টায় হাঁটা-পথ তৈরি করছি। যোগাযোগটা সহজ হয়ে গেলে সীমান্তে নজরদারি আরও সহজ হবে।
বিজিবির দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের পরিচালক (অপারেশন) লে. কমান্ডার রাহাত নেওয়াজ বলেন, এখন যে ইয়াবা আসছে সেটা স্থলসীমান্ত বিজিবির নজরদারির কারণে অনেকটাই কমে গেছে। এখন যেটা আসছে সেটা নদীপথে আসছে। কয়েকদিন আগে সরকার তো নাফ নদীতে মাছ ধরাই বন্ধ করে দিয়েছিল। স্থলসীমান্ত দিয়ে যেগুলো আসছে, সেগুলো খুব কম পরিমাণে আসছে। সাংবাদিকদের সাথে এ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের অধীন গুইমারা সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল আবদুল্লাহ আল মামুন, রাঙামাটি সেক্টর কমান্ডার কর্নেল পাভেল আকরাম, খাগড়াছড়ি সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মোয়াজ্জেম এবং রিজিয়নের নিজস্ব ৮ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল মঞ্জুর।
প্রসঙ্গত বিজিবি ২২৩ বছরের গৌরবময় ঐতিহ্যবাহী বাহিনী যা ১৭৯৫ সালে পাবর্ত্য জেলা খাগড়াছড়ির রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন হিসাবে কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৭২ সালের ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) হিসাবে নামকরণ করেন। বিগত ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারী পিলখানা ঘটনার পর ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন আবির্ভূত বিজিবির আনুষ্ঠানিক পতাকা উত্তোলন করেন। পরবর্তীতে পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে চারটি অঞ্চলে বিভক্ত করে বিজিবির চারটি রিজিয়ন সৃষ্টি করা হয়। এর একটি দক্ষিণ-পূর্ব রিজিয়ন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন