শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে মাতোয়ারা আম্রমুল্লুক রাজশাহী

| প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রেজাউল করিম রাজু : জাতীয় সঙ্গীতের একটি লাইন ‘‘ওমা ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রানে পাগল করে’’। এখন চলছে ফাগুন অর্থাৎ ফাল্গুন মাস। আমের রাজধানী খ্যাত বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের সর্বত্রই এখন আমের মুকুলের মন মাতাল করা মিষ্টি সুবাস মনকে পাগল না করেই পারেনা। সুবাসটি এখানকার মানুষের কাছে সয়ে গেলেও বাইরে থেকে আসা যে কারো মন না কেড়েই পারেনা। এখন যেদিকে চোখ যাবে আমের গাছে গাছে শুধু মুকুল আর মুকুল। প্রায় সব গাছ ভরে মুকুল এসেছে। আবহাওয়া ছিল অনুকুল। শীতের প্রকোপ ছিল তীব্র। তবে ক্ষনস্থায়ী। আবহাওয়া জনিত কারণে এবার একটু বিলম্বে মুকুল এলেও দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। এর মাঝে একদিন বেশ ভালই বৃষ্টি হয়েছে। তারপর ঝলমলে রোদ্র। ফলে বৃষ্টি আমের মুকুলের জন্য আর্শীবাদ বয়ে এনেছে। চোখ জুড়ানো হৃদয় হরণ করা মুকুল ফুটে এখন শুরু হয়েছে মটর দানার মত গুটি। এগুলো ধীরে ধীরে বড় হয়ে যৌবনে পরিপূর্ণ আমে পরিনত হবে। এবারের বৃষ্টি আমের গুটি বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। আগে গুটির জন্য গাছের গোড়ায় সেচ দিতে হতো এবার বৃষ্টির কারনে তেমনটি লাগেনি। তাছাড়া গাছের পাতা থেকে ধূলো ময়লা ধুয়ে গেছে। সার্বিক ভাবে যা আমের ভাল ফলনে সহায়ক হবে বলে কৃষিবিদরা আশা করছেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এবার ভাল ফলনের আশাবাদ ব্যাক্ত করে বলেন এবার যখন মুকুল আসা শুরু তখন ছিল শীত। আবার শেষের দিকে গরম পড়তে শুরু করেছিল। ফলে গত বছরের চেয়ে এবার গাছে গাছে বেশী মুকুল এসেছে। আবহাওয়ার মতি গতি ঠিক থাকলে এবার ভাল ফলন হবে বলে আশা করা যায়। রাজশাহীর সতের হাজার হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। প্রতি হেক্টরে দশ বারো মে:টন আম উৎপাদিত হলে পৌনে দু’লাখ মে:টন আম সাধারণভাবে উৎপাদিত হবে। আমের রাজ্য চাপাইনবাবগঞ্জে এখন ভীষণ ব্যস্ততা সময় পার করছেন চাষীরা আম গাছের পরিচর্যা নিয়ে। মুকুলে ক্ষতিকর পোকা খুদি ও হপার পোকার আক্রমন ঠেকাতে কৃষি বিভাগের পরামর্শ আর নিজ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বালাইনাশক ঔষধ প্রয়োগ করছেন। চাপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার জেলার ২৯ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষমাত্রা ঠিক করেছেন। যেখানে গাছ রয়েছে ২২ লাখ ৭২ হাজার। গত বছর আম উৎপাদন হয়েছিল প্রায় আড়াই লাখ মে:টন আম। আবহাওয়া অনুকুল থাকলে এবার আমের উৎপাদন বেশী হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর বেশী জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। ধানে মার খেয়ে জমির মালিক আম বাগানের দিকে ঝুকে পড়েছে। বিশেষ করে শিবগঞ্জ এলাকায় আমের আবাদ বেড়েছে বেশী। বরেন্দ্র অঞ্চলে আম বাগান বাড়ছে। রাজশাহী, নওগাতে ব্যাপক হারে বাড়ছে আমের বাগান। ফলে সার্বিক উৎপাদন নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আম গবেষনা কেন্দ্রের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শরফ উদ্দিনের ভাষ্য হলো এবার বিলম্বে হলেও একসাথে সব গাছে মুকুল আসায় বানিজ্যিক ভাবে এ মুকুল থেকে আমের উৎপাদন অনেক ভাল হবে। আম বাগানের যতœ আত্তির জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। উদ্যান তত্ব কেন্দ্রের কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, নিরাপদ আম উৎপাদন ও পরিবেশ রক্ষায় চাষীদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষন দিয়ে সচেতন করে তোলা হচ্ছে। যাতে অকারনে ও লোভের বশবর্তী হয়ে কোন রকম ঔষধ প্রয়োগ থেকে বিরত থাকার জন্য বলা হচ্ছে।
আম চাষীরা জানান, চাপাইনবাবগঞ্জে খিরসাপাতকে (ভৌগলিক পন্য) জিআই ঘোষণার বিষয়টা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। আর সেটি হলে আম বাণিজ্যে ভিন্নমাত্রা যোগ করবে।
গতবার ফ্রুট ব্যাগিং আম নিয়ে বেশ কিছুটা বিপাকে পড়েছিল আম চাষীরা। প্রায় তিন কোটি ফ্রুট ব্যাগ বিক্রি হয়েছিল। কথা ছিল এসব আম বিদেশে রফতানী হবে। বাস্তবে তেমন হয়নি। এবার যাতে সব পদ্ধতি অনুসরন করে এখানকার আম ইউরোপ পাড়ি দেয় সে ব্যাপারে এখন থেকে তৎপরতা শুরু হয়েছে। যারা বিদেশে আম রফতানী করতে চায় তাদের চুক্তি করতে হবে। আম চাষের পদ্ধতি ও গুনগত মান ঠিক থাকলেই কেবল তা করা যাবে। এজন্য চাষীদের প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে।
রাজশাহীর বাঘার ২২ জন চাষী আম রফতানী করতে রফতানীকারক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করেছেন কৃষি বিভাগের নির্দেশনা মেনে। অন্য যারা করতে চান তাদের কৃষি বিভাগের সাথে যোগাযোগ করে রফতানীকারক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করার কথা বলেন কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্টরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন