অর্থনৈতিক রিপোর্টার : ড্রামজাত খোলা ভোজ্য তেল বাজারজাতকারীদের বিরুদ্ধে ‘ভোজ্যতেল সমৃদ্ধকরণ আইন-২০১৩’ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পুষ্টিখাতের বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, দেশে ব্যবহৃত মোট ভোজ্যতেলের শতকরা ৬৫ ভাগ ড্রামজাত খোলা তেল। এসব খোলা তেলের ৬০ শতাংশ ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ ছাড়াই বাজারজাত করা হচ্ছে। এর ফলে তৃণমূল পর্যায়ে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। যেসব ড্রামে এ তেল বিক্রি হচ্ছে সেগুলো স্বাস্থ্যসম্মত নয় বলে তারা মন্তব্য করেন। খোলা ভোজ্য তেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে আয়োজিত জাতীয় কর্মশালায় আজ বক্তারা এ তাগিদ দেন। গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইম্প্রুভড্ নিউট্রেশন এর সহায়তায় শিল্প মন্ত্রণালয় বাস্তবায়নাধীন ‘ফর্টিফিকেশন অব এডিবল অয়েল ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর একটি হোটেলে এ সেমিনার আয়োজন করা হয়।
প্রকল্পের পরিচালক ও মন্ত্রণালয়ের যুগ্মপ্রধান মোহাম্মদ তাসারফ হোসেন ফরাজীর সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. দাবিরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআরবি’র ঊর্ধ্বতন পরিচালক ডা. তাহমিদ আহমেদ। এতে বাংলাদেশে ভোজ্যতেল সমৃদ্ধকরণ পরিস্থিতি এবং মনিটরিং কার্যক্রম বিষয়ে পৃথকভাবে দু’টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্পের সহকারী পরিচালক খন্দকার মুমতাহিনা সিদ্দিকী এবং বিএসটিআই এর উপপরিচালক প্রকৌশলী মো. নূরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বিএসটিআই’র মহাপরিচালক সরদার আবুল কালাম, বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের ডেপুটি হেড অব মিশন জেরেন স্টিগস্ এবং গেইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. রুদাবা খন্দকার বক্তব্য রাখেন।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ভোজ্য তেলে ১৫ থেকে ৩০ পিপিএম মাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ থাকা বাধ্যতামূলক। অথচ ৬৯ শতাংশ প্যাকেটজাত ভোজ্য তেলে ১৫ পিপিএম কিংবা এর সামান্য বেশি ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে। অন্যদিকে ড্রামজাত ভোজ্য তেলের ৬০ শতাংশই ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ ছাড়া বিক্রি হচ্ছে। তারা ড্রামজাত তেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ তেল নিশ্চিত করতে লেবেলিং পদ্ধতি চালুর পরামর্শ দেন। এক্ষেত্রে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে তারা ‘ভোজ্য তেল সমৃদ্ধকরণ বিধিমালা-২০১৫’ এবং ‘মোবাইল কোর্ট আইন-২০০৯’ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। একই সাথে তারা মিল মালিকদের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ প্রিমিক্স সহজলভ্য করার পরামর্শ দেন।
অনুষ্ঠানে বাজার তদারকি প্রসঙ্গে বিএসটিআই এর উপপরিচালক প্রকৌশলী মো. নূরুল ইসলাম বলেন, ভোজ্যতেলে সঠিক পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ নিশ্চিত করতে বিএসটিআই সার্ভিল্যান্স কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনার রিফাইনারী থেকে সংগৃহিত ভোজ্য তেলের ১৮টি নমুনা পরীক্ষা করে ৯টিতেই প্রয়োজনীয় পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায়নি। একই সাথে ড্রামজাত খোলা ভোজ্যতেলের ১৫টি নমুনা পরীক্ষা করে মাত্র ৭টি পরিমিত পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া গেছে বলে তিনি তথ্য প্রকাশ করেন।
প্রধান অতিথি মো. দাবিরুল ইসলাম বলেন, দেশের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠির জন্য ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ ভোজ্য তেল প্রাপ্তি নিশ্চিত করা সকলের নাগরিক দায়িত্ব। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ভোজ্যতেল রিফাইনারী মালিকদের এটি নিশ্চিত করতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ তদারকি করতে বিএসটিআই এর আওতায় একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে এমডিজির নারী ও শিশু মৃত্যুহার রোধ সম্পর্কিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন