শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জিকির আশকারে মশগুল মুসলমানেরা

ফুরফুরা শরীফে ইছালে সাওয়াবের ১ম দিন

| প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

কলকাতা থেকে আবু হেনা মুক্তি : ভারতীয় উপমহাদেশে দ্বীন প্রচারে ফুরফুরা দরবার শরীফে ইসওয়ালে সাওয়াবের প্রথম দিন থেকেই দূর দূরান্ত দেশ বিদেশ থেকে আগত ধর্ম প্রাণ মুসলমানেরা জিকির আজকারে মশগুল। এখান থেকে একদিন ভারতীয় উপমহাদেশের বিস্তির্ণ অঞ্চলে দ্বীন প্রচারে বিপ্লব ঘটেছিল। দিন কায়েমের জন্য শত শত মানুষ শহীদ হয়েছিল। শহীদানদের সেসব কবর এখনও কালের স্বাক্ষী দেয়। সেই ইসলাম প্রচারের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক মোজাদ্দেদে জামান ও ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম ইসলামী চিন্তাবিদ, সমাজ সংস্কারক হযরত আবু বক্কর সিদ্দিকী (রহ:) এর নসিয়াত অনুযায়ী গতকাল মঙ্গলবার কলকাতার হুগলী জেলায় অবস্থিত ফুরফুরা দরবার শরীফে ৩ দিন ব্যাপী ১২৭তম ইসওয়ালে সাওয়াবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। এই ঐতিহ্যবাহী দোয়া মাহফিল এবং গোটা ইসওয়ালে সাওয়াবের সার্বিক তত্ববধানে রয়েছেন আল্লামা হযরত মাও: জাবিউল্লাহ সিদ্দিকী (মাদ্দা:)। এর পূর্বে ইসওয়ালে সাওয়াব পরিচালনা করতেন পীরজাদ জাবিউল্লাহ সিদ্দিকীর পিতা মরহুম আল্লামা পীর বাকী বিল্লাহ সিদ্দিকী (রহ:)। গতকাল থেকে ইসওয়ালে সাওয়াবের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম জিকির আজগর ও আলেমদের বয়ান এবং ওয়াজ নসিয়ত শুরু হয় । আগামী ৯ মার্চ ফজর বাদ আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে ইসওয়ালে সাওয়াবের সমাপ্তি হবে। প্রতি বছর এখানে লাখ লাখ দেশী বিদেশী ধর্মপ্রাণ মুসলমান ইসওয়ালে সাওয়াবে অংশগ্রহণ করেন।
গতকাল কলকাতার হুগলী জেলায় অবস্থিত ফুরফুরা দরবার শরীফে ৩ দিন ব্যাপী ১২৭ তম ঈসালে ছাওয়াবের ১ম দিন দোয়া ও ওয়াজ মাহফিল এবং জিকির আজগর এর মাধ্যমে অতিবাহিত হয়। সাথে সাথে বিভিন্ন দেশ বিদেশী মুসল্লীদের ভীড়ও বাড়তে থাকে। যোহরের নামায আদায় করার জন্য গোটা ফুরফুরার ময়দানে ১০ লক্ষাধিক লোকের সমগাম ঘটে। মাগরিব নামায শেষে বিশ্ব মুসলিম উম্মার শান্তি কামনা, মুসলমানদের ওপর সকল নির্যাতনের বিরুদ্ধে আল্লাহ দরবারে বিচার প্রার্থনা এবং আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠায় বিশেষ দোয়া করা হয়। গতকাল বাদ ফজর থেকেই ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের জিকির-আসকার, ইবাদত-বন্দেগিতে ফুরফুরা দরবার শরীফ এক পবিত্র পুণ্যভূমিতে পরিণত হয়। জোহরের নামাজ ঘিরে সকাল থেকেই ফুরফুরার ময়দানে জনস্রোত নামে।
আয়োজকদের ধারণা অন্য বছরের তুলনায় আবহাওয়া পরিস্থিতি অনুকূলে থাকায় এবার প্রথম দিনেই ১০-১২ লাখ মুসল্লি যোহরের নামাজ আদায় করেছেন।
আল্লামা হযরত মাও: জাবিহুল্লাহ সিদ্দিকী (মাদ্দা:) বলেন, দুনিয়া ততদিন টিকে থাকবে যতদিন ইসলাম ও দ্বীন দুনিয়ায় থাকবে। আল্লাহ তাওয়ালা দুনিয়া সৃষ্টি করেছে মানবজাতির জন্য। আর মানবজাতি সৃষ্টি করেছেন আল্লাহর ইবাদাতের জন্য। তাই দুনিয়ার ধন দৌলতের লোভে পড়ে আল্লাহ ও তার দ্বীনকে ভুলে গেলে চলবে না। আমরা যতদিন পৃথিবীতে থাকব ততদিন আল্লাহর ইবাদাত ও তার প্রতিষ্ঠিত দ্বীনের পথে চলব। আর এই দ্বীনের পথে চলতে কোন বাধা বিপত্তি আসলে তা আমাদের সকলের একসাথে প্রতিহত করতে হবে। ইসলামের হেফজতকারী আল্লাহ তায়ালা স্বংয় নিজে। সকল ঈমানদার ব্যক্তির সাথে আল্লাহর হেফজাত রয়েছে। যত বড় শক্তিশালী হোক না কেন কোন ব্যক্তির পক্ষে ইসলামের ক্ষতি করা বা ধ্বংস করা সম্ভব নয়। তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদাতের জন্য। যারা আখিরাতের কথা চিন্তা করে তারা কখনই অন্যায়ের পথে যেতে পারে না। তিনি পিতা মাতার কর্ত্যেেবর প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
এদিকে, বাংলাদেশের সাতক্ষীরা থেকে ইসওয়ালে সাওয়াবে যোগ দিতে এসেছেন জয়নাল আবেদীন। তিনি জানান, ভিসা পেতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। দাড়িওয়ালা লোকদেরকে ভারতীয় দূতাবাস থেকে ভিসার ব্যাপারে দারুন অনিহা দেখিয়েছে। আমি দ্বিতীয়বার আবেদন করে ঢাকা থেকে ভিসা পেয়েছি। এতে আমার প্রায় ৫-৬ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। তবু কষ্ট করে আসি কারণ এখানে আসলে ইসলামের প্রতি নতুন করে দরদ সৃষ্টি হয়। আল্লাহ ও আল্লাহুর রসূল সম্পর্কে জানা যায়। কুরআন হাদিস সম্পর্কে অন্তরে নতুন করে রিচার্জ হয়। এভাবে কথা হয় কলকাতার মুর্শীদাবাদ জেলার গোলাম রসুলের সাথে। তিনি জানান, ফুরফরা দরবার শরীফে আসলে ঈমানের জোস বৃদ্ধি পায়। তাই প্রতি বছর এখানে ছুটে আসি আল্লাহর নৈকাট্য লাভের আশায়।
আয়োজকরা জানান, মুসল্লীদের অবস্থানের জন্য প্রায় ৯-১০ বর্গকিলোমিটার ব্যাপী রাস্তা ও ছোট ছোট কয়েকটি মাঠ প্রস্তুত রাখা হয়েছে যাতে প্রায় ২৫-৩০ লাখ লোক একসাথে অবস্থান করতে পারবে। এছাড়া প্রতিদিন নতুন নতুন ২০-৩০ লাখ লোকের আগমন ঘটবে এবং ঐ পরিমান লোক প্রতিদিন মাহফিল থেকে বিদায় নিবেন। এতে প্রায় ৭-৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে।
এছাড়া পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সহযোগিতায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থার পাশাপাশি অন্তত নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ২৫-৩০টি হাই ভোল্টেজ অটো জেনারেটর রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার মুসল্লীদের খাবার পানি ও ওযু-গোছলের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নিয়েছে। মুসল্লীদের চিকিৎসা সেবায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত¡াবধানে কয়েকটি দাতব্য চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যেখান থেকে ফ্রি চিকিৎসা সেবা ও ঔষুধ প্রদান করা হবে। গরমের জন্য জাকেরীনরা নিজ খরচায় ৪ দিন ব্যাপী ফ্রি লেবুর শরবত প্রদান করবে। পশ্চিমবঙ্গের মুসল্লীদের পাশাপাশি এবারের মাহফিলে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ, বাংলাদেশ, স্্্্্্্্্্্্্্উদী আরব, ওমান, দুবাই, বাহরাইন, মালয়েশিয়া, লন্ডন ও আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট আলেম-ওলামা ও মেহমানগণ উপস্থিত হচ্ছেন। দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট মেহমানদের জন্য রয়েছে আলাদা মেহমানখানা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
M.A. Kalam ৭ মার্চ, ২০১৮, ৭:৩৮ এএম says : 0
আলহামদুলিল্লাহ
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন