জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আগামী ২৪ মার্চ ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় পাটির মহাসমাবেশে সকল নেতাকর্মীকে উপস্থিত হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেছেন, ‘জাতীয়পার্টি ক্ষমতা এলে বিএনপি ও আওয়ামীলীগ সবাই সেফ। আমরা কাউকে জেলে দেব না।’ তিনি শনিবার দুপুরে বগুড়া পর্যাটন মোটেলে পার্টির রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন। প্রতিনিধি সভায় যোগ দিতে এরশাদ বেলা সাড়ে ১১টায় হেলিকপ্টার যোগে বগুড়া পুলিশ লাইন্স গ্রাউন্ডে অবতরণ করেন। পরে সেখান থেকে গাড়ি যোগে প্রতিনিধি সম্মেলন স্থলে উপস্থিত হন।
সমাবেশে তিনি আরো বলেন হুসেইন , এই মুহূর্তে বাংলাদেশে সবচেয়ে বয়জ্যৈষ্ঠ রাজনীতিবিদ আমি। এখন আমার একটাই লক্ষ্য ,জাতীয়পার্টি ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়া। উন্নয়নের মহাসড়কে দেশ ’ বলে সরকারের চালানো প্রচারণাকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, আমার সময় ঢাকা থেকে ৬ ঘণ্টায় রংপুরে গিয়েছি। এখন উন্নয়নের মহাসড়কের রাস্তা এতটাই ভাঙাচোরা খানা খন্দকে ভরা যে সময় লাগে ১২ ঘণ্টা। মেয়েদের বাবা মা আর ভয়ে স্কুলে পাঠায়না , নিরাপত্তাজনীত কারণে বাল্য বিয়ে হচ্ছে ।
তিনি আরো বলেন, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ আর হতাশায় ছেলেরা ছেলেরা ইয়াবা, ফেন্সিডিল খায়, পানের দোকানেও এখন ওসব পাওয়া যাচ্ছে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করলে যুবসমাজ ধংস হয়ে যাবে। ছেলেরা এম এ পাশ করার পর চাকরী পায়না , কনস্টেবলে চাকুরীর জন্য ১০ লাখ টাকা লাগে। এস আই এর চাকুরীর জন্য ২০ লাখ টাকা লাগে। পিয়নের চাকুরীর জন্য ৫ লাখ টাকা লাগে। আমার সময় এটা হলে আমি লজ্জায় আত্মহত্যা করতাম।
ব্যাংকিং খাত ও অর্থনীতি বিষয়ে এরশাদ বলেন, শেয়ার মার্কেটে টাকা হারিয়ে অনেকেই আত্মহত্যা করেছে। শেয়ার বাজারের টাকাগুলো বড়লোকরা সিন্ডিকেট করে মেরে দিয়েছে। এখন লুটপাটের কারণে ব্যাংকেও টাকা নেই। পৃথিবীর কোথাও কেউ শুনেনি যে সেন্ট্রাল ব্যাংকেও ডাকাতি হয় ? বাংলাদেশ ব্যাংকে ডাকাতি হয়েছে। অনেক তদন্ত হয়েছে, কিন্তু কারা এর পিছনে তা এখনও জানা যায়নি।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় তিনি বলেন, আশ্চর্য লাগে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে বলেছেন, অতীতেও প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীর বিষয়ে তিনি বলেন, কীভাবে একজন মন্ত্রী সহনীয় পর্যায়ে ঘুষ নেয়ার কথা বলেন। এটা কেউ বলতে পারে ? অথচ ওই কথা বলার পরও এখনও তার মন্ত্রিত্ব রয়েছে।
এরশাদ আরো বলেন, রংপুর কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষ শিক্ষামন্ত্রীর ভায়রা। সবাই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। কলেজের তালা ঝুলছে। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি কি হয় দেখি। তিনি দেশের অবস্থা বর্ণনা করে বলেন, জনগণ এসব থেকে থেকে মুক্তি চায়। দুনীতি এখন সর্বত্র। ১০ হাজার কোটি টাকার কাজ শুরু হলে সেখানে টাকা খরচ হয় ৪০ হাজার কোটি টাকা , বাকি টাকা কোথায় যায় ? এখন মালয়েশিয়া হয়েছে কিছু লোকদের সেকেন্ডহোম। ক্ষমতার রদবদল হলে ওসব ব্যক্তি পালিয়ে যাবে মালয়েশিয়ায়।
এরশাদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী এয়ারপোর্টে নামার কথা থাকলে এয়ারপোর্ট বন্ধ করে দেয়া হয়। আমার সাথে কোন পুলিশ নেই, নেই গণ্যমান্য। আমি অন্যায় করিনি। এ সরকারের মন্ত্রীরা অন্যায় করেন, তাই পুলিশ নিয়ে ঘুরেন। আমরা আগের সেই শান্তির দিনে ফিরে যেতে চাই। বক্তব্য শেষে তিনি উচ্চ কণ্ঠে বলেন, আমার বয়স ৮০ কিম্বা ৯০ বড় কথা নয়। জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় নিয়ে যেতে চাই। এটাই এখন আমার একমাত্র স্বপ্ন । জাতীয় পাটিকে ক্ষমতায় নিয়ে যেতে চাইলে আগামী ২৪ শে মার্চ সবাইকে ঢাকায় আসতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আগামী ২৪ মার্চ ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে দুই বিভাগের যৌথ এই প্রতিনিধি সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, এক দল ক্ষমতায় থাকায় মানুষ লাশ হয়েছে আর এক দলের ক্ষমতা থাকায় হচ্ছে হত্যা, গুম, নারী ধর্ষণ, সাংবাদিক নির্যাতন, মারামারি-হানাহানি। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। দু'দলের ক্ষমতায় থাকা আর ক্ষমতায় যাওয়া নিয়ে নিরাপত্তাহীনতা ও সংশয় দেখা দিয়েছে। জনগণের মনে এখন এরশাদ সরকারের স্বর্ণালি যুগের কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়। তাই জাতীয় পার্টির ওপর মানুষের আস্থা বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন , আমরা নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি শুরু করেছি। এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই ২৪ মার্চ ঢাকায় মহাসমাবেশ। এটি হবে স্মরণকালের বৃহত্তম সমাবেশ।
জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় হুইপ নুরুল ইসলাম ওমর এমপির সঞ্চালনায় দুই বিভাগের সমন্বয় প্রতিনিধি সভায় বক্তব্য দেন, পার্টির সাবেক মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী জিয়াউদ্দিন বাবলু , এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, , মেজর অবসরপ্রাপ্ত খালেদ আকতার, রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, মজিবুর রহমান সেন্টু, শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় নেতা মকবুল হোসেন সনটু, শাহীন মোস্তফা ফারুক, আমিনুল ইসলাম ঝন্টু, আব্দুস সালাম বাবু, এ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন, অধ্যক্ষ মোকছেদুল বারী, শাহাবুদ্দিন বাচ্চু, তিতাস মোস্তফা, আলহাজ্ব দেলোয়ার হোসেন, সোলায়মান সামি সহ কেন্দ্রীয়, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের মহানগর, জেলা-উপজেলা এবং পৌর কমিটির সভাপতি-সম্পাদকবৃন্দ ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন