শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

লাইফস্টাইল

ডিজিটাল যুগের ছেলে-মেয়েরা কি কলম ধরা ভুলে যাচ্ছে

| প্রকাশের সময় : ১৯ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ডিজিটাল যুগে শিশুদের স্বভাব বদলে যাচ্ছে। একসময় যে বয়সের শিশুরা লেগো দিয়ে খেলতো, এখন তারা খেলছে আই প্যাডে। আই প্যাডের মত ডিজিটাল যন্ত্রের প্রতি শিশুদের আসক্তিতে ব্যস্ত বাবা-মাদের অনেক সুবিধা হচ্ছে। ডিজিটাল যন্ত্রপাতি নাড়াচাড়া করে শিশুদের সাড়া দেওয়ার অনুভূতিও ক্ষুরধার হচ্ছে হয়তো, কিন্তু লেখার জন্য আঙুলের পেশী নিয়ন্ত্রণের যে সূ² দক্ষতা দরকার তা কি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে?
ইংল্যান্ডে শিশুদের থেরাপি বিষয়ে একজন নেতৃস্থানীয় বিশেষজ্ঞ স্যালি পেইন তার পর্যবেক্ষণে দেখেছেন ডিজিটাল যুগের শিশুদের সেই দক্ষতা নষ্ট হচ্ছে।ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানকে তিনি বলেন, স্কুলে ঢোকার পর শিশুদের হাতে যখন পেন্সিল দেওয়া হচ্ছে, তারা সেটাকে ঠিকমতো ধরতে পারছে না, কারণ সেটিকে ব্যবহারের জন্য মৌলিক যে দক্ষতা দরকার সেটা তাদের নেই। ‘পেন্সিল ধরে সেটাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কাজে লাগানোর জন্য হাতের আঙুলের সূ² পেশিগুলোর ওপর শক্ত নিয়ন্ত্রণ লাগে...সেই দক্ষতা অর্জনে অনেক অনুশীলন এবং সুযোগ দরকার’। মিস পেইন বলেন, ডিজিটাল ট্যাব এবং স্মার্ট ফোন ব্যবহারের অবাধ সুযোগ পেয়ে, শিশুদের মধ্যে পেন বা পেন্সিল ধরার এবং তা ব্যবহারের ক্ষমতা মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বøক দিয়ে বিল্ডিং বানানোর মত খেলা, দড়ি বা ইলাস্টিক টানতে হয় এমন ধরনের খেলনা ব্যবহারে শিশুদের সেই পেশি ব্যবহারের ক্ষমতা তৈরি হয়। “আই প্যাড ব্যবহার করে সেটা হয়না”।
ব্রিটেনে যোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফকমের হিসাবে দেশের অর্ধেকেরও বেশি পরিবারে ডিজিটাল ট্যাবলেট এবং অন্তত ৭৬ শতাংশ পরিবারে স্মার্ট ফোন রয়েছে।
হাতের লেখার পক্ষে প্রচারণা করছে এমন একটি সংস্থার সাথে কাজ করেন ড জেন মেডওয়েল।
তিনি বলেন, ঘরে ঘরে ডিজিটাল যন্ত্রের উপস্থিতি যত বাড়ছে, শিশুদের মধ্যে পেন্সিলের ব্যবহার তত কমছে।
“একসময় শিশুরা দেখতো তার বাবা-মা পেন দিয়ে বাজারের ফর্দ লিখছে, এখন তারা দেখে বাবা-মা মোবাইল ফোনে টেক্সট করছে। ফলে শিশুদের প্রথম শিক্ষার ধারাও বদলে গেছে”।
তবে তিনি বলেন, ট্যাব ব্যবহারে আঙুলের পেশি ঘোরানোর দক্ষতা একবারে নষ্ট হয়ে যায়, এমন কথা বলার সময় এখনও হয়তো আসেনি।
“এখনো এমন গবেষণা হয়নি যেটা বলছে ট্যাব ব্যবহার করলে একজন শিশুর শুধু আঙুল ঘষার দক্ষতা তৈরি হয় এবং সে পেন্সিল ধরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে”। তবে তিনি বলেন, হাতে লেখার গুরুত্ব অপরিসীম।
২০১৬ সালে এক গবেষণায় দেখা যায় যে সব ছাত্ররা হাতে লেকচার নোটস লেখেন, তারা পরে সেগুলো অনেক ভালো মনে রাখতে পারেন এবং তাদের ধারণা অনেক পরিচ্ছন্ন থাকে। কম্পিউটার বা ট্যাবে যারা নোটস নেন, তারা অনেক লিখতে পারলেও পরে মনে রাখতে পারেন না।
বিশেষ করে শিশুদের জন্য হাতের লেখার গুরুত্ব অনেক। ‘হাতে একটি চিঠি লেখা, আঙুলের জটিল ব্যবহার, এগুলোর জন্য শিশুদের অনেক অনুশীলন করতে হয়, এবং তার ভেতর দিয়েই শিশুদের জ্ঞান লাভ হয়’।
হাতে লেখার গুরুত্ব নিয়ে গবেষকরা দ্বিধাবিভক্ত কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে হাতের লেখার চল কমে যাচ্ছে। ২০১৪ সালে এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রতি তিনজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের একজন টানা ছয় মাস হাতে কিছু লেখেনি। তবে শিক্ষা জগতে এখনও হাতে লেখা অপরিহার্য। ব্রিটেনে প্রাইমারি স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের অনেক কিছুই এখনও হাতে লিখতে হয়।
কিন্তু আগের দিনের মতো সুন্দর করে পেঁচিয়ে অক্ষরের সাথে অক্ষর যুক্ত করে শব্দ লেখার সেই চল বলতে গেলে উঠেই যাচ্ছে। ড মেডওয়েল বলছেন - সুন্দর হস্তাক্ষর তেমন কোনো ইস্যু নয়, আসল কথা - হাতে লেখার দক্ষতা ধরে রাখা, সেটা নষ্ট হলে শিশুদের জ্ঞানার্জনও বাধাগ্রস্থ হওয়ার ঝুঁকি থাকবে। সূত্র : বিবিসি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
গনতন্ত্র ১৯ মার্চ, ২০১৮, ১২:২৩ এএম says : 0
জনগন বলছেন, নেতা-নেত্রীদের পোষ্টার ছাপানোর চাহিদাই মিটানো যাচ্ছে না,এর উপর বাচ্চাদেরকে দিয়ে কাগজ নষ্টের প্রশ্নই উঠে না,তাছাড়া কাগজের যেই দাম ৷ডিজিটালের সাথে তাল ৷
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন