শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

প্রাকৃতিক ও মানব সম্পদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

কৃষিপ্রধান বাংলাদেশ এক সময় ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও র্দুভিক্ষের জন্য বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছিল। স্বাধীনতাত্তোর কালে সামাজিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতায় তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘বটমলেস বাস্কেট’ বিদ্রুপ করেছিলেন। সেই বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। স্বাধীনতার সাড়ে চার দশক পর দেশের এই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অর্জনের জন্য কৃতিত্বের মূল দাবীদার এ দেশের কৃষক-শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষ, যারা দেশে-বিদেশে কাজ করে দেশের অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখতে প্রত্যক্ষ অবদান রেখে চলেছেন। বিশেষত এদেশের পরিশ্রমী ও প্রজ্ঞাবান কৃষকসমাজ জীবন ধারণের ন্যুনতম চাহিদাকেও ত্যাগ করে দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা পুরণে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন।এ কথা অস্বীকার করা যায়না যে, সীমিত সম্পদের উপর ভর করে অধিক জনসংখ্যা দেশের অর্থনীতি ও জীবনমানের উপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে। তারচেয়েও বড় সত্য হচ্ছে, জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিনত করতে পারলে এবং প্রাকৃতিক সম্পদকে যথাযথভাবে কাছে লাগাতে পারলে অধিক জনসংখ্যাই অতি মূল্যবান জনসম্পদ হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা তার বড় প্রমান। দেশের কোটি কোটি কৃষক ও কৃষিশ্রমিক, বিদেশে কর্মরত প্রায় প্রায় এককোটি শ্রমিক এবং তৈরী পোশাক খাতের মত শ্রমঘন শিল্পের উপর ভর করেই সব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে বাংলাদেশ এখন অগ্রসরমান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বিশ্বে স্থান করে নিয়েছে।
দেশের জনশক্তিকে দক্ষসম্পদে পরিনত করে কাজে লাগানোর কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারলে আরো অনেক আগেই আমরা উচ্চ আয়ের সমৃদ্ধ দেশে পরিনত হতে পারতাম। তৈরী পোশাক রফতানী, বৈদেশিক কর্মসংস্থানসহ শিল্পখাতের প্রবৃদ্ধির কারণে দেশের অর্থনীতিতে শিল্পের অবদান বাড়লেও মূলত বাংলাদেশ এখনো কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির দেশ। ‘কৃষক বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে’ এই শ্লোগান এখনো আমাদের জন্য যথার্থভাবেই প্রযোজ্য। দেশে ক্রমবর্ধমান মানুষের খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করার কঠিন চ্যালেঞ্জ এ দেশের কৃষকরা সাফল্যের সাথেই মোকাবেলা করতে সক্ষম হচ্ছে। দেশের নদনদী ও প্রাকৃতিক জলাধারগুলো সংকুচিত হয়ে পড়ার পরও আমাদের মৎস্যচাষীরা মৎস্য উৎপাদনে তাপর্যপূর্ণ অগ্রগতি অর্জনে সক্ষম হয়েছে। গত চারদশক ধরেই এ দেশের কৃষকরা অব্যাহতভাবে খাদ্য ও কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে চলেছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর ধান উৎপাদনে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে সর্বোচ্চ ফলনের আশা করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। তবে ধান, আলু, পাট, রবিশস্যের পাশাপাশি মৎস্য ও পোল্ট্রিশিল্পে একপ্রকার বৈপ্লবিক অর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম হলেও এই সাফল্যের দাবীদার কৃষকরাই সবচেয়ে বেশী বঞ্চনার শিকার। ধান, আলুর মত নিত্যপণ্যের বাম্পার ফলনের পরও কৃষকদের বঞ্চনার যেন শেষ নেই। উপযুক্ত বাজারব্যবস্থাপনা না থাকায় কৃষকরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে ক্রমশ হতাশ ও নি:স্ব হয়ে পড়ছে। এ বাস্তবতা দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য একটি অশনি সংকেত।
গত বছরও দেশে ধান-আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। হাওরাঞ্চলে ফসলহানির কারণে প্রায় বিনাশুল্কে অন্তত ২০ লাখটন খাদ্য আমদানীর পরও চালের ঊর্ধ্বমূল্য বছরব্যাপী আলোচ্য বিষয় হয়ে আছে। একদিকে কৃষক তার উৎপাদন খরচ পাচ্ছেনা, অন্যদিকে চালকল মালিক, আমদানীকারক ও পাইকারী বিক্রেতাদের সিন্ডিকেটেড মুনাফাবাজির শিকার হচ্ছে দেশের দরিদ্র মানুষ। কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য এবং সাধারণ ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। সেই সাথে পরিবর্তিত বিশ্ববাস্তবতায় আগামীদিনের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে জাতীয় সম্পদের উন্নয়ন ও সুষম বন্টন নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। যেনতেন প্রকারে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে আমরা যেন মাটি, পানি, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও জনস্বাস্থ্যের মত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোকে অগ্রাহ্য না করি সে দিকে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। দেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কৃষিতে বৈচিত্র্য আনয়ণে আমাদের কৃষকদের পাশাপাশি দেশের ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট, কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক-কৃষিবিদদের অসামান্য অবদান রয়েছে। খাদ্য ও জ্বালানির চাহিদা পুরণে আমাদেরকে এখন বঙ্গোপসাগরের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের দিকে অধিক মনোনিবেশ করতে হবে।এই মুহুর্তে দেশের জনশক্তির বড় অংশই তিরিশ বছরের কম বয়েসী যুব সমাজ। দেশের বিশাল যুবশক্তিকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনসম্পদে পরিনত করে নানা ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতাকে উৎপাদনশীল কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে আরো কয়েকধাপ অগ্রগতি অর্জন সম্ভব। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্যে স্বয়ম্বরতা অর্জনকে যেমন আমরা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করি. একইভাবে আগামী দিনের উৎপাদনশীলতা এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তাসহ পরিবেশগত সুরক্ষা ও জীবনমান উন্নয়নের উপকরণগুলোকেও নিরাপদ রাখতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন