বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

১৪ বছরেও প্রত্যাহার হয়নি চাঁদপুর সেতুর টোল : জনমনে অসন্তোষ

১৮ কোটি ১২ লাখ টাকার বিপরীতে জমা ৩৫ কোটি টাকা

| প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বি এম হান্নান, চাঁদপুর থেকে : সেতু নির্মাণ ব্যয়ের দ্বিগুণ পরিমান অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হলেও চাঁদপুর সেতুর টোল আদায় বন্ধ হয়নি দীর্ঘ ১৪ বছরে। ডাকাতিয়া নদীর উপর নির্মিত দুটি উপজেলার সেতুবন্ধনকারী এ জনগুরুত্বপূর্ণ সেতুতে টোল প্রত্যাহার না করায় জনমনে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। টোল প্রত্যাহার দাবিতে দফায় দফায় মানববন্ধন, বিক্ষোভ, অবরোধসহ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে কোনো কাজ হয়নি। জাতীয় সংসদে টোল প্রত্যাহারের দাবি করেন চাঁদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া। তাতেও কাজ হয়নি, মিলেছে আশ্বাস।
চাঁদপুর সড়ক বিভাগের তথ্য মতে, ডাকাতিয়া নদীর উপর ২০০৪ সালে ১৮ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় চাঁদপুর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ‘চাঁদপুর সেতু’। ২৪৮ মিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতু দিয়ে প্রতিদিন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ, রায়পুর, ল²ীপুর ও নোয়াখালীর হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। গত ১৪ বছরে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে। এরপরও আগামী তিন (২০১৮-১৯)বছরের জন্যে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকায় ইতোমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। চলতি বছরের জুন মাসে সকল প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হবে।
দীর্ঘ ১৪ বছরে এ সেতু থেকে টোল আদায় বন্ধ না করায় ফুসে উঠছে পরিবহন শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ। ইতোমধ্যে টোল প্রত্যাহারের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও সংশ্লিষ্টরা ভ্রুক্ষেপ করছে না। যার প্রভাব পড়তে পারে আগামী সংসদ নির্বাচনে। আগামী অর্থ বছরে যেন আর সেতুর টোল আদায় করা না হয় এমনটাই দাবি সাধারণ মানুষের।
ফরিদগঞ্জের চড়বড়ালী গ্রামের সোহেল হোসেন রিপন, বাগাদী এলাকার গোলাম সরোয়ার, এমরান হোসেনসহ আরো অনেকেই জানান, মানুষের মঙ্গলের জন্যে সরকার এ সেতু নির্মাণ করলেও আমরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। সরকার জনস্বার্থের কথা চিন্তা করে অন্তত এ সেতুর টোল প্রত্যাহার করে নেবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
বাইসাইকেল এবং মোটরসাইকেল বাদে যে কোনো যানবাহন সেতু পার হতে হলে প্রতিবার গুণতে হয় বিভিন্ন অংকের টাকা। এর মধ্যে, ট্রেইলর ২৫০, হেভি ট্রাক ১৭০, মিডিয়াম ট্রাক ১০০, বড় বাস ৯০, মিনি ট্রাক ৭৫, কৃষি কাজে ব্যবহৃত যান ৬০, মিনি বাস ৫০, মাইক্রোবাস ৪০, ফোর হুইলবাহিত যানবাহন ৪০, সিডানকার ২৫, ৩-৪ চাকার মোটরাইড যান থেকে ১০ টাকা হারে আদায় করা হয়। বিভিন্ন সময়ে এ হারের চেয়ে অধিক টাকা আদায় করার অভিযোগ করেছে অনেক চালক। এমন কি ঈদ মৌসুমে প্রতি গরু পারাপার করা হলে ৫ টাকা করে আদায় করা হয়।
আবু মুছলেহ উদ্দীন, রাশেদ গাজী, ছোবহান মিজিসহ একাধিক চালক আক্ষেপ করে বলেন, আর কত? একটা অটোতে যাত্রী উঠুক আর না উঠুক তাদেরকে প্রতিবার ১০ টাকা করে দিয়ে যেতে হয়। অনেক সময় ব্রিজের কাছে যেতে দেয় না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের টোলঘর অতিক্রম করলেই টাকা না দেয়ার উপায় থাকে না। ভবিষ্যতে যেন সেতুটি টোলমুক্ত রাখা হয় এমনটাই দাবি তাদের।
এদিকে গত বছর ডিসেম্বর মাসে চাঁদপুর জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের টোলঘর ব্রিজের দক্ষিণ পাশে নেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও আজো তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। যে কারণে ব্রিজের শহরলাগোয়া নির্বাচন অফিস, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের আবাসন এমনকি পৌরসভার বিশুদ্ধ পানি শোধানাগারের কাছে কোনো যান যেতে হলে টোল দিয়ে যেতে হয়।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাহেদ সরকার জানান, সেতু দিয়েই ফরিদগঞ্জ রায়পুর ল²ীপুরসহ দক্ষিণাঞ্চেলের মানুষ চলাচল করে। এতো বছর সেতুর টোল আদায় করায় মানুষের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। চাঁদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া টোল প্রত্যাহারের বিষয়টি সংসদ অধিবেশনে উপস্থাপন করেছেন। জেলা মাসিক উন্নয়ন সভায়ও বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন। সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ করলেও টোল আদায় বন্ধ হয়নি। প্রয়োজনে আগামী ১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী সফরে আসলে চাঁদপুরবাসীর পক্ষ থেকে টোল প্রত্যাহারের দাবি উত্থাপন করা হবে বলেও জানান এ জনপ্রতিনিধি।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, গত তিন চার বছর ধরে একই ব্যক্তি সিন্ডিকেট করে দরপত্র জমা দেয়। একই ব্যক্তি বিভিন্ন লাইসেন্সের মাধ্যমে সেতুটি ইজারা নিয়ে থাকে। সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট ২ কোটি ৩০ লাখ টাকায় মের্সাস এম আই ট্রেডিং সেতুটি ইজারা পায়। প্রতি বছর সেতুর জন্যে ৫-৬ বার দরপত্র আহŸান করতে হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন