বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কারাবন্দিরা আজ থেকে মোবাইল ফোনে কথা বলতে পারবে স্বজনদের সাথে

| প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম


স্টাফ রিপোর্টার : কারাবন্দিরা আজ বধুবার থেকে তাদের স্বজনদের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন। শুধু সাধারন বন্দিদের জন্য এ সুবিধা থাকছে। কোন জঙ্গি বা শীর্ষ সন্ত্রাসী বা গ্ররুতর অপরাধের বন্দিরা এ সুযোগ পাবেন না। মোবাইল ফোনের এ প্রকল্পটি ‘স্বজন’ নামেই পরিচিতি পাবে। প্রকল্পের নীতি অনুযায়ী একজন কারাবন্দি মাসে দুই বার এবং প্রতিবারে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট করে কথা বলতে পারবেন। এছাড়া প্রতি বন্দি শুধুমাত্র দুজন নিকটাত্মীয়ের সাথে কথা বলার সুযোগ পাবেন। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত কথা বলার সময়। এই বুথের ফোন থেকে বন্দি চাইলেই কোনও নম্বরে ডায়াল করতে পারবেন না। একইভাবে কোনও ফোন কলও আসবে না। এর কারণ, মোবাইল সেবাটির জন্য বানানো সফটওয়্যারে আগে থেকে নির্দিষ্ট নম্বর দেওয়া থাকবে। এজন্য সেগুলো ছাড়া অন্য নম্বরে ফোন কল ডায়াল করা যাবে না। শুধুমাত্র ১ বা ২ চাপলে সটওয়ার থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভেরিফাইড নম্বরে কল যাবে। আত্মীয় বা পরিবারের ছবি সফটওয়্যারের মধ্যে সংরক্ষিত থাকবে। কারাগারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রাথমিক ভাবে আজ বুধবার টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে এ সার্ভিস চালু করা হচ্ছে।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এমপি সকাল ১১টায় টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী কারাবন্দিদের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে মোবাইলে কথা বলার পাইলট প্রকল্প হিসেবে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে চালু হচ্ছে এই মোবাইল ফোন সেবা। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে সকল কারাগারে এ সুবিধা চালু করা হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, শুধু সাধারন কারাবন্দিরা মোবাইল ফোনে তাদের পরিবারের সাথে কথা বলার সুযোগ পাবেন। কারাগারে আটক কোন জঙ্গি বা শীর্ষ সন্ত্রাসী এ ধরনের সুযোগ পাবেন না। তবে বন্দিরা তাদের স্বজনদের সাথে যা বলবেন তা সাথে সাথে রেকর্ড থাকবে। কেউ যদি কোন ধরনের অনাকাঙ্কিত কথাবার্তা বলেন তবে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত কারাগারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কারাবন্দিদেরকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরিবারের সাথে ফোনে কথা বলার সুযোগ সৃষ্টির ব্যবস্থা করা হবে’ মর্মে প্রতিশ্রæতি দেন। তার প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর পাইলট প্রকল্প হিসেবে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে এই কার্যক্রম প্রথম শুরু হচ্ছে।
টাঙ্গাইল জেলা কারাগার সূত্রে জানা যায়, এখানে এই সেবার জন্য অভ্যন্তরে চারটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। একটি কক্ষের মধ্যেই স্থাপন করা হয়েছে এগুলো। মোবাইল ফোনে একই সময়ে স্বজনদের সঙ্গে চার বন্দি কথা বলতে পারবেন বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
এই প্রথমবারের মতো বন্দিদের পরিবারের আরও কাছাকাছি থাকতে চালু করা হচ্ছে ‘মোবাইল ফোন সেবা।’ ফলে কারাগার থেকেই স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাবেন বন্দিরা।
ইতিপূর্বে ২০১৩ সালের ১৮ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণালয় কর্তৃক কারা অধিদফতরকে কারাগারগুলোতে মোবাইল ফোনবুথ স্থাপন সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়।
পরে ২০১৫ সালের ৩ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার আলোচনার প্রেক্ষিতে দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের মতামতের ভিত্তিতে পরে এ সংক্রান্ত নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়।
কারা কর্তৃপক্ষ জানান,প্রাথমিকভাবে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ বন্দির জন্য একটি করে বুথ নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, সার্ভার স্থাপনসহ মোবাইল ফোন সেবার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
বন্দি হিসেবে কেউ কারাগারে এলেই তার কাছ থেকে পরিবারের দুটি নম্বর নেওয়া হবে। ওই দুটি নম্বরে মাসে দু’বার করে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট কথা বলা যাবে। কারাগারে ডেভেলপ করা সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভেরিফায়েড হওয়ার পর ওই দুটি নম্বরে সংশ্লিষ্ট কারাবন্দিকে কথা বলার সুযোগ দেয়া হবে। মহিলা, বৃদ্ধ, শিশু ও অল্প বয়স্ক কিশোর বন্দিরা কথা বলার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। নির্ধারিত সময়ের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে কল কেটে যাবে। সময় শেষ হওয়ার ৩ মিনিট পূর্বে সতর্কসূচক ‘বিপ’ শব্দ হবে। তবে বন্দিরা আপাতত কোনো আইনজীবীর সাথে কথা বলতে পারবেন না।
টাঙ্গাইল জেলা কারাগারের জেল সুপার মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন বলেন, এ লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এই প্রকল্প চালু হওয়ার পর থেকে অনেক সুবিধা পাবেন কারাবন্দিরা। বন্দিরা যাতে পরিবারের খোঁজ-খবর নিতে পারেন বা নিজের অবস্থা তাদের জানাতে পারেন, এজন্য এই ফোন সেবা চালু করা হচ্ছে। যে কোনো দুটি নম্বরে বন্দিরা কথা বলতে পারবেন। এই নম্বর দুটি হতে হবে বন্দির মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান কিংবা আত্মীয়-স্বজনের। এর বাইরে কেউ কথা বলতে পারবেন না। তবে এর আগে কর্তৃপক্ষ এসএমএস বা ফোন কলের মাধ্যমে স্বজনদের জানিয়ে রাখবেন কারাবন্দি কোনো সময় কথা বলবেন। তিনি আরো বলেন, স্বজনদের সঙ্গে বন্দির পুরো কথোপকথনটির পুরোটারই রেকর্ড আমাদের কাছে থাকবে। এমনকি কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা সেই আলাপচারিতা লাইভ শুনতে পারবেন। এছাড়া অ্যাডমিনিস্ট্রেটর প্রয়োজনবোধে যেকোনো কল যেকোনো পর্যায়ে কেটে দিতে পারবেন। ফোন সেট বা ফোন বুথের কোনো সিস্টেমের কোনো ধরনের ক্ষতি করলে ওই বন্দিকে জরিমানা দিতে হবে।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারের জেলার আবুল বাশার বলেন, আমরা খুবই আনন্দিত যে, প্রথমবারের মতো টাঙ্গাইল কারাগারে বন্দিরা স্বজনদের সাথে আলাপ করতে পারবেন। এটি চালু হওয়ার পর বন্দিদের সাক্ষাতকারের ঝামেলা কমবে।
অন্য জেলার বন্দি যারা রয়েছেন, তাদের স্বজনরা সহজেই কথা বলতে পারবেন। যে শিশু অপরাধী নয়, ওই শিশু তাদের মা কিংবা বাবার সাথে আলাপ করতে পারবে। এ লক্ষে আমার ১৫ দিন আগে থেকেই পরীক্ষামূলকভাবে বন্দিদের স্বজনদের সাথে আলাপ করানোর ব্যবস্থা করেছি।
বাংলাদেশে এই প্রথম বারের মতো টাঙ্গাইল কারাগার থেকে এই সেবা চালু হচ্ছে। তবে অন্যান্য দেশে এমন সেবা রয়েছে। ৪টি বুথে প্রতিদিন প্রায় ৫০ জনের মতো কারাবন্দি তাদের স্বজনদের সাথে আলাপ করতে পারবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে কারাগারে ১২৮৫ জন কারাবন্দি রয়েছেন, এর মধ্যে মহিলা ২৭ জন। প্রাথমিক অবস্থায় বন্দিরা বিনামূল্যে কথা বলতে পারবেন। তবে পরে বন্দিদের কাছ থেকে প্রতি মিনিট ১ টাকা করে আদায় করা হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন