সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম) থেকে : সীতাকুন্ডে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটে চলেছে। শুধু গত এক মাসেই এখানে ৫টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। কখনো আর্থিক লেনদেন, কখনো জায়গা জমি সংক্রান্ত বিরোধ, কখনো রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, আবার কখনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় এসব হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে। এছাড়া একই সময়ে পাহাড়, সাগরসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার হয়েছে কয়েকটি লাশ। যা সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তবে প্রত্যেকটি খুনের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সীতাকু-ে হঠাৎ খুন-খারাবি বেড়ে গেছে। গত এক মাস সময়ে নিয়মিত বিরতিতেই এখানে খুনের ঘটনা ঘটছে। গত কয়েকদিন আগে দু’দিনের ব্যবধানে এখানে দুটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে একটি ঘটনা ঘটেছে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে এবং অন্যটি ঘটেছে গত ২৪ মার্চ সোনাইছড়ি ইউনিয়নের জোরআমতল এলাকায় প্রকাশ্যে দিবালোকে মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলায়। এলাকাবাসী জানিয়েছে, সোনাইছড়িতে প্রতিদিনই প্রকাশে মাদক ব্যবসা চলে আসছে। এলাকার কিছু বখাটে যুবক মদ, গাঁজা, ইয়াবা প্রভৃতি বিক্রি করে যুবক সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ইতোপূর্বে কেউ এসব মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়নি। গত ২৪ মার্চ প্রথমবার স্থানীয় উত্তর ঘোরামরা ছরারকূল গ্রামের নুরুল আবচারের পুত্র রুবেল মাদক সেবন ও বিক্রি দেখে প্রতিবাদ করায় মাদক ব্যবসায়ীরা তাকে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। ঘটনার পর পুলিশ লাশ উদ্ধার করেছে। এ বিষয়ে হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর আগে গত ২২ মার্চ উপজেলার বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের বড়দারোগারহাটে আ.লীগ চেয়ারম্যান প্রার্থী রায়হান উদ্দিন রেহানের পক্ষে প্রচারণা করে ফেরার পথে মহালঙ্গা গ্রামে সন্ত্রাসী হামলায় নির্মমভাবে খুন হন যুবলীগ নেতা রিয়াজ উদ্দিন নয়ন (২৮)। এ ঘটনায় সুনির্দিষ্ট ১৪ ও অজ্ঞাত ৫/৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীর মা নাজমা বেগম। গত ১৯ মার্চ বাড়বকু- ইউনিয়নের মান্দারীটোলা গ্রামে মাটি কাটা নিয়ে দু’পক্ষের বিরোধের জেরে খুন হন ওই গ্রামের মৃত আবুল কাসেমের পুত্র আলাউদ্দিন (২৮)। থানায় মামলা হয়েছে ওই ঘটনাতেও। ১৫ মার্চ উদীচীর সীতাকু- উপজেলা শাখার সভাপতি দিপক চন্দ্র দে’ কে সোনাইছড়ি ইউনিয়নের পাক্কা মসজিদ এলাকায় বাস থেকে নামিয়ে একটি ঘরে আটকে রাখে দুষ্কৃতিরা। তার কাছ থেকে পাওনা টাকা আদায়ে দু’দিন আটকে রাখার পর তার লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় হত্যা মামলা করেন নিহতের পুত্র। পুলিশ ইতোমধ্যে মোর্শেদ নামক এক আসামিকে গ্রেপ্তারও করেছে। এর আগে ২৩ ফেব্রুয়ারি কুমিরা ইউনিয়নের সুলতানা মন্দির এলাকায় জিপিএইচ ইস্পাত কারখানার কর্মী মাশরাফি প্রেমিকার সাথে দেখা করতে গিয়ে খুন হয়। প্রেমিকার বাবা ও ভাই তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। এছাড়া একই সময়ে অর্থাৎ গত এক মাসে সাগর, পাহাড়সহ বিভিন্ন স্থান থেকে আরো কয়েকটি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রত্যেকটি ঘটনায় থানায় আইন অনুযায়ী মামলা ও মাঝেমধ্যে গ্রেপ্তারও হয়েছে। কিন্তু খুন বন্ধ হয়নি। বরং হত্যার ঘটনা যেন বেড়েই চলেছে। এতে এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এলাকাবাসী চান সীতাকু-ে যেন নতুন করে আর কোন খুন-খারাবি না ঘটে। এ ব্যাপারে তারা প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। অন্যদিকে এ হত্যাকা-গুলো বিষয়ে জানতে চাইলে সীতাকু- থানার ওসি মো. ইফতেখার হাসান বলেন, প্রত্যেকটি খুনের ঘটনায় মামলা দায়ের ও আসামিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আসামিরা কোন ছাড় পাবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন