শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

সৈয়দ হযরত আবদুর রহিম (রহঃ)

মাওলানা মুহাম্মদ হাসেমুর রশিদ | প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

আল্লাহু রাব্বুল আলামিন ইসলামের আলো প্রজ্জলিত রাখার জন্য যুগে যুগে আল্লাহর প্রিয় বান্দা বা হক্কানি রাব্বানি আলেম ওলামাদের মাধ্যমে দ্বীন ইসলাম তাওহিদ ও রেসালত ও বেলায়তের আলোক ধারা এই পৃথিবীতে অব্যাহত রাখেন। এই নূরীর ধারার ধারাবাহিকতায় উপ মহাদেশে আল্লাহর অনেক প্রিয় বান্দা ও আধ্যাত্মিক সাধকগণ আল্লাহর মনোনীত ইসলাম ধর্ম প্রচার প্রসার কল্পে সমগ্র জমিনে ছড়িয়ে পড়ে সামাজিকভাবে অবদান রেখে গেছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার পূর্ব গুজরা গ্রামের প্রখ্যাত অলিয়ে কামেল মৌলানা আবদুর রহিম (রঃ) যার অবদান অনস্বীকার্য।
হযরত মৌওলানা আবদুর রহিম (রঃ) এর জন্ম ও শিক্ষা লাভঃ তিনি ১৯০৫ সালে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে সৈয়দ মৌওলানা সাহবউদ্দিন মিয়াজির ঔরশে জন্মগ্রহণ করেন। স্থানীয় মক্তবে হাতেখড়ি শিক্ষালাভ করেন। তৎকালীন চট্টগ্রাম মোহসনিয়া মাদ্রাসায় (বর্তমান হাজী মোহাম্মদ মহসিন কলেজ) মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষা সম্পাদন শেষে স্বীয় পিতার পরামর্শক্রমে সুদূর ভারতবর্ষেও মুরাদাবাদ শহওে প্রতিষ্ঠিত তৎকালীন প্রসিদ্ধ অলিয়ে কামেল আল্লামা নইমুদ্দিন মুরাদাবাদী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা দারুল উলুমে ভর্তি হন। তথায় তিনি উলুমুল হাদিস ও অন্যান্য বিষয়ে বুৎপত্তি গত জ্ঞান অর্জন করেন। তথায় মুরাদাবাদী (রঃ) কর্তৃক দসতারে ফযিলত গ্রহণ করে নিজ এলাকায় ফিরে আসেন।
কর্মজীবন শুরুঃ হযরত মৌলানা আবদুর রহিম (রঃ) ১৯৩৬ সালে নব-প্রতিষ্ঠিত রাউজানের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান কদলপুর হামিদিয়া মাদ্রাসায় মোহাদ্দেস হিসাবে নিয়োজিত হয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। একটানা ১৯৩৬-১৯৪৮ সাল পর্যন্ত দরসে হাদিস এর হেদমত আনজাম দিয়েছেন। পাশাপাশি ঊনসত্তরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। ইহা ছাড়াও স্থানীয় দ্বীন সম্পর্কে অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে ওয়াজ-নসিহতের মাধ্যমে ইসলামের প্রতি অনুপ্রাণিত করার কাজে সর্বদা সচেষ্ট থাকতেন। উনার কন্ঠস্বর এত সুমধুর ছিল যে, অনর্গল তিনি ৩-৪ ঘন্টা মাইক ছাড়া ওয়ায করতেন। অনেকদুর পর্যন্ত তার কন্ঠস্বর শুনা যেত।
হযরত মৌওলানা ক্বারী সৈয়দ আবদুর রহিম (রঃ) কর্তৃক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা: নিজ গ্রামের অবহেলিত ও ইসলাম সম্পর্কে অনগ্রস্বর জনগোষ্ঠীকে ওয়াযের মাধ্যমে ধর্মীয় কাজে জাগিয়ে তুলতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন। এই ধারাবাহিকতায় এলাকাবাসীর মধ্যে দ্বীনের প্রতি একান্ত আগ্রহ ও অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে। তিনি ১৯৪৮ইং সালে উনার নিজ বাড়ির পার্শ্বে পূর্ব গুজরাস্থ বঙ্গদিঘীর পাড় হিসাবে প্রসিদ্ধ ও পরিচিত পূর্ব গুজরা মুহাম্মদিয়া মাদ্রাসার নাম করণের মধ্য দিয়ে একটি দ্বীনি শিক্ষা নিকেতন গড়ে তুলেন। তিনি অনুধাবন করতে পারছিলন যে, এই দ্বীনি শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা অনগ্রসর এলাকাকে আলোকিত করতে হলে দ্বীনি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই। যেই স্থানটি একসময় অপসংস্কৃতি ও শরীয়ত বিরোধী কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু ছিল তথায় তিনি প্রিয় রসুল (সঃ) এর নামে মাদ্রাসাটি স্থাপন করে নবী প্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে যান। তার নবী প্রেমের এই অমর কীর্তি ইতিহাসের পাতায় ভাস্কর হয়ে এখনো সমুজ্জল হয়ে আছে। উনার নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানটির সবকিছু ওনি নিজ হাতে সার্বিক তদারকি ও তত্তাবধান করতেন। আমৃত্যু প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব যথাযথভাবে আনজাম সাধনের মধ্য দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটির উন্নত প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান হিসাবে রুপান্তরিত করে গেছেন। সর্বস্তরের মানুষের নিকট তিনি ছিলেন একজন পরম শ্রদ্ধেয় ও সম্মানি ব্যক্তিত্ব। সফলভাবে মাদ্রাসা পরিচালনার মধ্য দিয়ে তিনি ১৯৪৮ইং সনে প্রতিষ্ঠান প্রধান এর পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন পরবর্তীতে উক্ত প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের প্রতিষ্টাতা সদস্য/সভাপতি হিসাবে আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
হযরত আবদুর রহিম (রঃ) এর খেলাফত ও আধ্যাত্মিক দিক্ষা লাভঃ দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের খেদমত ছাড়াও তিনি তৎকালীন প্রসিদ্ধ আশরাফিয়া তরিকার প্রখ্যাত অলিয়ে কামেল আলী হোসেন আশরাফির হাতে বায়াত গ্রহণ করেন। এক পর্যায়ে স্বীয় পীর সন্তুষ্ট হয়ে উনাকে খেলাফতের মহান দায়িত্ব অর্পন করেন। পীর হিসাবে তার পরিচিতি বেশি প্রসারিত না হলেও তনি একজন অনলবর্ষী, শিরী বয়ান বক্তা হিসাবে ধর্মপ্রাণ মুসলিম মিল্লাতের প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেন। এলাকার মানুষষকে বাতিল আকিদা পোষণ করা থেকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য তৎকালীন সুন্নিয়তের কান্ডারী প্রখ্যাত আশেকে রাসুল (সঃ) পীরে বাঙ্গাল, আওলাদে রাসুল (সঃ) সৈয়দ আহমদ শাহ সিরোকোটি (রঃ) এর হাতে নিজ ও শত শত মুরীদ সহ ১৯৫৪ সালে উনার নুরানী হস্তে বায়েত গ্রহণ করেন। তথাপি তিনি শুধুমাত্র বায়েত হয়ে ক্ষান্ত থাকেননি। এলাকার মানুষদেরকে কাদেরীয়া তরীকায় বায়েত গ্রহণের ও প্রসারের কাজে নিজে আরো বেশি মনোনিবেশ করেন। ওয়াজের মাধ্যমে এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে সঠিক ইমান ও আকিদার প্রতি উদ্ভুদ্ধ করে শত শত মানুষকে কাদেরীয়া তরিকার প্রতি বায়েত গ্রহন করতে অনুপ্রাণিত করে তুলতে সক্ষম হন। যা সত্যিই উনার ত্যাগী ও রুহানী শক্তির একটি উজ্জল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
ইন্তেকাল : এই মহান সাধক উল্লেখিত কর্মাদির মাধ্যমে সকলের স্মৃতিপটে স্থান করে নিয়েছে। হাজার হাজার ভক্তবৃন্দকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে বিগত ১২ই ফাল্গুন রোজ রবিবার সন্ধ্যা ৭ ঘটিকায় ইহজগত ত্যাগ করেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নাইলাইহি রাযিউন)----আল্লাহ রাব্বুল আলামিন উনার দীর্ঘ বর্ণাঢ্য জীবনের মহান খেদমতকে গ্রহণ করে জান্নাতুল ফেরদৌসের আলা মোকাম নসিব করুন। যেহেতু তিনি মহান রাসূল (স:) এর হিযরতের প্রতি অনুপ্রাণিত ছিলেন সেহেতু তিনি ১৯৪৮ইং সনে নিজ গ্রাম হতে অনতিদূরে ঊনসত্তর পাড়া গ্রামে গিয়ে বসতি স্থাপন করেন বিধায় তথায় উনার পবিত্র মাজার শরীফ বিদ্যমান রয়েছে। প্রতিদিন শতশত মানুষ তার মাজার জেয়ারতের মাধ্যমে উনার রুহানী ফুয়ুজাত হাসিল করে ধন্য হচ্ছেন। প্রতি বছর ১২ইং ফাল্গুন অত্যন্ত যাকজমকের সাথে উক্ত মহান সাধকের ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। হাজার হাজার ভক্তবৃন্দের উপস্থিতিতে সেদিন তার মাজার প্রাঙ্গন মিলন মেলায় পরিণত হয়।
সন্তান সন্তুতি: বর্তমানে উনার ৪জন ঔরশ জাত পুত্র সন্তান রয়েছে। একজন অধ্যক্ষ হিসেবে রাউজান পূর্ব গুজরা মোহাম্মদিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় কর্মরত থেকে তাহার প্রাণের গড়া প্রতিষ্ঠানকে তিলে তিলে গড়ে তুলে অনেক উচ্চতায় নিয়ে এসেছেন। আরেকজন বাগরাবাদ গ্যাস কোম্পানীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসাবে কর্মরত আছেন। বাকী দুইজনের একজন ব্যবসায়ী ও অন্যজন প্রবাসী হিসাবে কর্মে নিয়োজিত আছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন