বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

আবারও কৃষ্ণাঙ্গ হত্যাকারী দুই মার্কিন পুলিশের দায়মুক্তি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

 অতীতের ধারাবাহিকতায় আবারও দায়মুক্তি পেলেন কৃষ্ণাঙ্গ হত্যাকারী দুই মার্কিন পুলিশ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ২০১৬ সালে এক কৃষ্ণাঙ্গকে হত্যাকারী দুই মার্কিন পুলিশকে বিচারের আওতায় না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্য। ভিডিও ফুটেজে অ্যাল্টন স্টার্লিং নামের ওই ৩৭ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গকে হত্যার স্পষ্ট আলামত মিললেও লুইজিয়ানার অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ ল্যান্ড্রির দাবি, দুই পুলিশ কর্মকর্তা মার্কিন আইনের সীমা লঙ্ঘন করেননি। গত বছরের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকেও একই পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছিলো।
যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের নির্বিচারি কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার ধারাবাহিক সংস্কৃতি বিরাজমান। একইভাবে নির্বিচারি পুলিশি দায়মুক্তিও সেখানে সাধারণ ঘটনা। তবে ২০১৪ সালে উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে পুলিশ কর্তৃক এক কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার ঘটনায় উত্তাল বিক্ষোভ হয়। অঙ্গরাজ্যের মিলওয়াউকি নামের শহরে ডন্ট্রে হ্যামিলটন নামে এক নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় জোরালো বিক্ষোভ সত্তেও জড়িত পুলিশকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়। পরে একই ধরনের অন্যান্য ঘটনায় বিক্ষোভ হলেও পরিস্থিতির বদল ঘটেনি। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার বিদায়ী ভাষণে মার্কিন গণতন্ত্রের জন্য যে তিনটি হুমকির কথা বলেন, তার প্রথমটি বর্ণবাদ। ২০১৫ সালের এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনও বর্ণবাদের অভিশাপমুক্ত হতে পারেনি। এর রন্ধ্রে রন্ধ্রে বর্ণবাদ এখনও দৃঢ়ভাবে গেঁথে আছে। ২০১৬ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের পুলিশ বাহিনী বর্ণবাদী মনোভাবে আক্রান্ত বলে উল্লেখ করে বিশেষ এক মার্কিন টাস্ক ফোর্স। এইসব স্বীকারোক্তি পরিস্থিতি পরিবর্তনে কোনও ভূমিকা রাখেনি।
২০১৬ সালের ৫ জুলাই একটি দোকানের সামনে ৩৭ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ অ্যাল্টনকে গুলি করে হত্যা করে দুই পুলিশ। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় অ্যাল্টনকে দুই কর্মকর্তা ধরে রেখেছেন এবং তাদেরই একজন তাকে গুলি করছেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে অ্যাল্টন মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। প্রাথমিক ময়নাতদন্তে তার বুকে ও পিঠে বেশ কয়েকটি গুলির আঘাত শনাক্ত হয়। এ ঘটনা তুমুল আলোড়ন তৈরি করে। এ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে লোকজন রাস্তায় নেমে আসে। বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ব্যাটন রুজ এলাকা। বিক্ষোভ থেকে ন্যায়বিচারের দাবি জানানো হয়। অনেকে আবার ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার স্লোগানও দেন। এতাকিছুর পরও গত বছরের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে তাদের পর্যবেক্ষণ জানানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল, অ্যাল্টন স্টার্লিংয়ের কাছে অস্ত্র ছিল এবং তিনি পুলিশের নির্দেশ অমান্য করছিলেন। তখন স্টার্লিংয়ের আইনজীবী বলেছিলেন,পুলিশের এমন আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। তারা কোনওরকম আইনী প্রক্রিয়াই অনুসরণ করেনি।
জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (২৭ মার্চ) লুইজিয়ানার অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ ল্যান্ড্রি বলেন, অ্যাল্টনের হত্যাকারী ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হবে না। ওই দুই কর্মকর্তা ঘটনার দিন যা করেছিলেন তা যৌক্তিক। অবশ্য পেশাগত নীতিমালার আওতায় তারা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন কিনা, পুলিশ বিভাগকে তা খতিয়ে দেখতে বলেছেন তিনি। অ্যাল্টনের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার পর এক সংবাদ সম্মেলনে ল্যান্ড্রি বলেন, ‘আমি জানি স্টার্লিং এর পরিবার যন্ত্রণা ভোগ করছে। আমি জানি, তারা হয়তো এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হবে না।’
বিবিসি জানায়, মঙ্গলবার অ্যাল্টন স্টার্লিং এর বিষক্রিয়া ও প্রসাব পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। ফলাফলে, মৃত্যুর সময় স্টার্লিং এর শরীরে কোকেন, মেথামফেটামাইনসক কয়েকটি মাদকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ল্যান্ড্রির অফিস থেকেই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন