বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ট্রাম্পের সোজাসাপ্টা অবস্থানে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া

প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে বেশ সোজাসাপ্টা অবস্থান নিয়েছেন। বর্তমান ওবামা প্রশাসন পররাষ্ট্র সংক্রান্ত যেসব ক্ষেত্রে পরোক্ষ ভূমিকা পালনের মাধ্যমে বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে, সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেকটা স্পষ্ট এবং সরাসরি ভূমিকা পালনের পক্ষে কথা বলেছেন। ট্রাম্পের এ ধরনের পররাষ্ট্রনীতির কথায় সমালোচনামুখর হয়েছেন একদল বিশ্লেষক। তারা এ ধরনের বক্তব্যকে আগ্রাসী বলে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু আরেকটি অংশ আবার ট্রাম্পের এ ধরনের সোজাসাপ্টা অবস্থানেই সমস্যার সমাধান দেখছেন। ট্রাম্পের বেশকিছু মন্তব্য আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী হিসেবে দেখা দেবে বলে জানিয়েছেন সিআইএর সাবেক পরিচালক মাইকেল হেইডেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে এ ধরনের মন্তব্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প তার কয়েকটি বক্তব্যে বলেছেন, ওবামা প্রশাসন বেশকিছু ভুল করেছে। ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। একইসঙ্গে আফগানিস্তানে এভাবে আটকে থাকার কারণ সম্পর্কেও যথেষ্ট বিস্ময় প্রকাশ করেছেন রিপাবলিকান এ মনোনয়নপ্রত্যাশী। ডোনাল্ড ট্রাম্প আরো প্রশ্ন তুলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই যদি সারাবিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনী থাকে, তাহলে আইএস এত ভয়ঙ্কর হওয়ার সুযোগ পায় কীভাবে? ট্রাম্প আরো বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন কোনো জায়গায় বিজয়ী হয় না। সব জায়গায় হেরে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার অবস্থান ক্রমশ শক্তিশালী হওয়া নিয়ে শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন তিনি। এর পাশাপাশি পাকিস্তান মিত্রের, নাকি শত্রুর ভূমিকা পালন করছে, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প।

প্রসঙ্গত, পররাষ্ট্র ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্টের জন্য বেশকিছু চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার অবস্থানের সঙ্গে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ইরানের উত্থানও নভেম্বরের নির্বাচনে জয়ী প্রেসিডেন্টের জন্য বড় অস্বস্তির বিষয় হিসেবে আবির্ভূত হবে। একইসঙ্গে ইরাক-সিরিয়ায় আইএসের প্রভাব এবং লিবিয়া-ইয়েমেনের সহিংসতা থামানো নতুন প্রেসিডেন্টের জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এদিকে ইরাকে সাদ্দাম হোসেন, লিবিয়ায় মুয়াম্মার গাদ্দাফি এবং মিসরে হোসনি মোবারকের পতনকে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই তিন একনায়ক এতদিন ক্ষমতায় থাকলে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি আরো শোচনীয় পর্যায়ে গিয়ে ঠেকত বলে মনে করেন এই রিপাবলিকান মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে ইরাক আক্রমণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ঠিক যেভাবে উপকৃত হওয়ার কথা ছিল, তেমনটা হয়নি বলেও জানিয়েছেন ট্রাম্প। প্রায় ২ ট্রিলিয়নের বেশি মার্কিন ডলার ব্যয়ের কারণ হওয়া ইরাক থেকে যুক্তরাষ্ট্র বলার মতো কোনো সুবিধা পায়নি বলেও জানিয়েছেন ট্রাম্প। অপরদিকে মধ্যপ্রাচ্যসহ সারাবিশ্বের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ভøাদিমির পুতিন, অ্যাঙ্গেলা মার্কেলসহ আরববিশ্বের শেখদের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক করার মানসিকতাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষক অ্যারম্যান্ড ভি. কুচিনিয়েলু। রিপাবলিকান মনোনয়নপ্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে একজন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কূটনৈতিক অবস্থান ভিন্ন হবে বলেই মনে করেন কুচিনিয়েলু। তবে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে ট্রাম্পের বেশকিছু মন্তব্য আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী হিসেবে দেখা দেবে বলে জানিয়েছেন সিআইএর সাবেক পরিচালক মাইকেল হেইডেন। তবে প্রত্যেক প্রেসিডেন্টের আইন উপদেষ্টা, সামরিক উপদেষ্টা, বুদ্ধিজীবী মহল এবং কূটনৈতিক কর্মকর্তা রয়েছেন। এসব ব্যক্তি প্রেসিডেন্টের যে কোনো সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা রাখেন। সে হিসেবে ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে, তিনি তার অবস্থান থেকে সরে আসবেন বলেই মত তাদের। যেমন, প্রেসিডেন্ট ওবামা তার নির্বাচনী ইশতেহারে গুয়ানতানামো বে কারাগার বন্ধ করে দেবেন বলে ঘোষণা দিলেও বাস্তবে তা কতটা অসম্ভব, সে সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়েছেন এই সাত বছরে। আবার ড্রোন ব্যবহার করায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিতর্কিত হলেও তা কী পরিমাণ কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে, সে সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল যুক্তরাষ্ট্রর বিদায়ী প্রেসিডেন্ট। এজন্য বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করতে হয় বলে জানান বিশ্লেষক কুচিনিয়েলু। নির্বাচনী প্রচারণা এবং ইশতেহারে যেসব অঙ্গীকার করা হয়, বাস্তবতার নিরিখে তা পালন করা প্রায়ই কঠিন। তবে অনেকেই বলছেন, পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে ট্রাম্পের আরো সচেতন হওয়া উচিত। তার বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে তিনি আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করবেন, এ ধরনের মনে করার মধ্যে ত্রুটি দেখছেন অনেকেই। কারণ, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে এবং পরের বাস্তবতার মধ্যে বড় ধরনের ফারাক সবসময়ই থেকে যায়। এজন্যই ডোনাল্ড ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে এখনই সমালোচনা করার কিছু দেখছেন না বলে মনে করেন বিশ্লেষক কুচিনিয়েলু। পরিস্থিতি অনুযায়ী সবকিছু বদলে যায় বলেই এমনটা বলছেন কুচিনিয়েলু। ইউএস টুডে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন