বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

গড়ে উঠেছে মশার অভয়ারণ্য

কচুরিপানা ময়লা-আবর্জনা আর দখলের কবলে ঢাকার জলাশয় ৮//গুলশান-বনানী লেকের পচা পানি, ময়লা-আবর্জনা আর কচুরিপানাতে

সায়ীদ আবদুল মালিক | প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

দখল আর দূষণের কবলে পড়ে রাজধানীর লেকগুলো অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। দিন দিন ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করে দখল করে নিচ্ছে অসাধু চক্র। রাজধানীর খাল, লেক ও জলাশয়গুলোর রক্ষণা বেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো উন্নয়নের নামে চোর-পুলিশ খেলছে। একদিকে উচ্ছেদ ও আবর্জনা পরিষ্কার করছেন, অন্যদিকে আবারও দখল ও ভরাট হয়ে যাচ্ছে লেকগুলো। কোনোভাবেই দখল-দূষণের হাত থেকে লেকগুলোকে মুক্ত করতে পারছেন না। সিটি কর্পোরেশনের হিসাবমত প্রতিবছরই এই লেক ও জলাশয়গুলোর আয়াতন কমছে। এসব ঝিল, জলাশয় ও লেকগুলোর কচুরিপানা ও নোংরা আবর্জনায় জন্মাচ্ছে মশা। এগুলোকে মশার আদর্শ প্রজননস্থল বলে মনে করছেন কীটতত্তবিদরা। পর্যাপ্ত বাজে থাকার পরও দুই সিটি কর্পোরেশন এবছর খাল, লেক ও জলাশয় থেকে কচুরিপানা পরিষ্কার করেনি। ফলে সারা ঢাকা শহরজুড়ে দেখা দিয়েছে মশার অসহনীয় দৌরাত্ম্য, যার ভুক্তভোগী রাজধানীবাসী।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর গুলশান, বনানী লেকের গোডাউন বস্তি, বাইদানির ঘাট, বেলতলা বস্তি, এরশাদ বস্তি, করাইল বস্তি ও গাউছুল আজম মসজিদের পিছনের অংশ ঘুরে দেখা গেছে, লেকটি দুই পাড় দিয়েই দখল হতে হতে প্রায় অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। সামান্য যে অংশবিশেষ এখনো দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে কাদা পানি, ময়লা-আবর্জনা আর কচুরিপানার দখলে রয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ এটা এখন মশা উৎপাদনের কারখানা। অনেকটাই অভিভাবকহীন লেকের এই অংশটি দীর্ঘদিন ধরে অযতœ আর অবহেলায় রয়েছে। ভূমিদস্যু আর দখলদার অসাধু চক্রের কবলে পড়ে এ লেকটির বড় অংশই ক্রমে ক্রমে দখল হয়ে গেছে। বকি যেটুকুন রয়েছে তাও দখল হতে আর বেশিদিন লাগার কথা নয়।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ মফিজুর রহমান গতকাল শুক্রবার ইনকিলাবকে বলেন, গুলশান লেকের বড় অংশজুড়ে উন্নয়নের কাজ চলছে। সেখানে এখন পানি নেই। বনানী লেকও গত দুই মাস আগে পরিষ্কার করা হয়েছে। গোডাউন বস্তি, বাইদানির ঘাট ও গাউছুল আজম মসজিদের পাশের লেকের অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ এ অংশে কিছু সমস্যা রয়েছে। এখানে দখল ও ময়লা-আবর্জনা আছে। তবে বাজেট সংঙ্কটের কারণে এ কাজটুকু করা যাচ্ছে না বলে তিনি জানান।
মহাখালী গাউছুল আজম মসজিদ সংলগ্ন এলাকা থেকে বনানী গোডউন বস্তি, বাইদানির ঘাট ও কড়াইল বস্তির বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে। গুলশান লেকের কড়াইল বউবাজার অংশের দখলদাররা লেকটির বড় অংশ দখল করে ফেলেছে। দখলদাররা লেকের নতুন জায়গাসহ উচ্ছেদকৃত অংশে বাঁশের খুঁটি গেড়ে টিনের ছাউনি দিয়ে দুই শতাধিক ঘর তুলেছে। কড়াইল গুদারা ঘাট ও পাকা ঘাটের লেক পাড়ে রয়েছে শত শত টঙঘর। এ ছাড়াও চামেলীর মার ঘাট ও মোমিনের ঘাটে শতাধিক টঙঘর গড়ে উঠেছে।
টিঅ্যান্ডটি কলোনি ঘাটে সরাসরি আর্বজনা ফেলা হচ্ছে। লেকের বিশাল অংশ এসব ময়লা-আর্বজনায় ইতোমধ্যে ভরাট হয়ে গেছে। মহাখালী গাউসুল আজম মসজিদসংলগ্ন লেকের অংশ থেকে বনানী ব্রিজ পর্যন্ত চোখে পড়েছে লেকের দখল-দূষণের নানা চিত্র। লেকের পানিতে কাপড়ের টুকরা, হাস-মুরগির বিষ্ঠা, মরা কুকুর ও বিড়াল ভাসতে দেখা গেছে। করাইল বস্তি সংলগ্ন লেকের পাড় ঘেঁষে অর্ধশতাধিক খোলা ল্যাট্রিন করা হয়েছে। যার সরাসরি সংযোগ দেয়া হয়েছে লেকে।
বনানী লেকপাড় দিয়ে গড়ে ওঠা কড়াইল বস্তির বাসিন্দাদের ব্যবহার করা খোলা টয়লেটের পয়ঃবর্জ্য সরাসরি পড়ছে লেকের পানিতে পড়তে দেখা গেছে। এতে আশপাশের এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বস্তির পার ঘেঁষে ভাসছে হাজার হাজার পানির বোতল আর প্লাস্টিকের সামগ্রী। যেগুলো ক্রমেই লেক ভরাট ও পরিবেশ নষ্ট করছে। এ সমস্ত ময়লা-আবর্জনা আর পচা পানিতে জন্ম নিচ্ছে মশা। স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ ভুলু মিয়া বলেন, লেকের পানির দুর্গন্ধ আর মশার যন্ত্রণায় টিকে থাকা দায়। বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে লেকপাড় দিয়ে একটু হাঁটব সেই পরিবেশও নেই। মাঝে মাঝে সিটি কর্পোরেশন থেকে মশা মারার স্প্রে করা হয় এবং কিছু কিছু ময়লা-আবর্জনা আর কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়। এতেতো আর মশা নিধন হয় না।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর আবদুর রাজ্জাক বলেন, গুলশান, বনানী এবং উত্তরার কয়েকটি লেকের মালিক রাজউক। গৃহায়ন ও গণপুর্ত অধিদপ্তর, রেলওয়েরও জলাশয় আছে। খালগুলোর মালিক ঢাকা ওয়াসা। বিমানবন্দর এলাকায় লেকগুলোর মালিক সিভিল এভিয়েশন। এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচ্ছন্ন করার দায়িত্ব তো তাদের। প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানই ইনডিপেনডেন্ট। তারা যদি এগুলো পরিষ্কার না করে তাহলে সিটি কর্পোরেশনের সেখানে কী করার থাকে? সিটি কর্পোরেশন তাদের কাজে সাহায্য অবশ্যই করবে। কিন্তু জায়গাটা যার নিয়ন্ত্রণে, উদ্যোগটা তাদেরই নিতে হবে।
গোডাউন বস্তি এলাকাবাসীর অভিযোগ, লেকের এই অংশে ময়লা-আবর্জনা, কচুরিপানাসহ বিভিন্ন লতাপাতা জন্মে এটা এখন মশার খামারে পরিণত হয়ে আছে। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ লেকের এ অংশ কখনও মশার ওষুধ ছিটানো হয়েছে বলে কেউ বলতে পারেনি। গত ১০ বছর যাবত এটি পরিষ্কারও করা হয় না বলে তদের অভিযোগ। এটিকে ‘মশার খামার’ বলে মন্তব্য করে বাইদানির ঘাট এলাকার বাসিন্দা জমিরুল আলম বলেন, মাঝে মধ্যে এখানে সিটি কর্পোরেশনের লোকজন এসে ধোয়া দিয়ে যেতে দেখি কিন্তু তাতে কি হবে। তারা ধোয়া দেয় আবার আমাদেরকে দিনে রাতে ২৪ ঘণ্টা মশাও কমড়ায়। এ ধোয়া দেয়ার কি দরকার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
গনতন্ত্র ৩১ মার্চ, ২০১৮, ৩:১৪ পিএম says : 0
জনগন বলছেন, “ জীব হত্যা “ জীব হত্যা মহাপাপ, বৌদ্ধ ধর্মে আছে,তাইতো মশা মারার নেই গরজ,আমার সোনার দেশ ৷ বন্ধু দেশের টুরিষ্ট মশা,আসছে আমাদের দেশে,রক্ত চুষে ভাইরাস ঢুকাবে,দেখবো হেসে হেসে ৷ জাতিসংঘ করছে তদারকি,জীবসংরক্ষন সংস্হাও আছে,একটি মশা হত্যা করলে,যেতে হবে কারাবাসে ৷
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন