শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

তারল্য সঙ্কট ও সুদের লাগাম টানতে ব্যাংকগুলোকে ছাড়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সরকারি আমানতের অর্ধেক পাওয়ার পর আরও বড় ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক ছাড় পেয়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। এখন থেকে ব্যাংকগুলোর আমানতের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যে নগদ টাকা জমা রাখে (সিআরআর), তার এক শতাংশ কম রাখতে হবে। বর্তমানে ব্যাংকগুলো সাড়ে ৬ শতাংশ টাকা নগদ জমা রাখে। গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এক জরুরি সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়।
সভা শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, সরকারি যে সিদ্ধান্ত, তা দিয়ে দিয়েছি। সরকারি টাকার অর্ধেক বেসরকারি ব্যাংকে রাখা যাবে। অন্য সুবিধা আমি দিতে পারি না। ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক গভর্নর। আমি প্রভাবিত করতে পারি। এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে সাড়ে ৬ শতাংশ নগদ জমা রাখতে (সিআরআর) হয়, তা ১ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে মূল্যস্ফীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে না।
ব্যাংক উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে এ বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, ডেপুটি গভর্নর এস এম মুনিরুজ্জামান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপদেষ্টা এস কে সুর চৌধুরী, বিএবির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত উন্নয়নবিষয়ক উপদেষ্টা ও আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ এইচ বি এম ইকবাল, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান, ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আনিস এ খান, আইএফআইসি ব্যাংকের এমডি শাহ এ সারওয়ারসহ আর্থিক খাতের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, সুদের হার কমানোর চেষ্টা করছি আমরা। এরই অংশ হিসেবে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানত ৫০ শতাংশ রাখা হবে। ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। আর আজকের (গতকাল) বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর জমা রাখা সিআরআর এর ১ শতাংশ টাকা ব্যাংকগুলো ব্যবহার করতে পারবে। এর ফলে ১০ হাজার কোটি টাকার মতো টাকা বেসরকারি ব্যাংকগুলোর হাতে চলে আসবে। এতে তারল্য সংকট কমে গেলে সুদের হারও কমে যাবে। এত পরিমাণ টাকা বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কাছে দেওয়া হলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে কিনা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী সে আশঙ্কা উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি বাড়বে না, কোনোভাবেই বাড়বে না।
পরে বিএবি’র সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদারও বলেন, সিআরআর এর টাকা পেলে তারল্য সংকট কিছুটা কমে যাবে। এ সময় অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী আগামী এক মাসের মধ্যেই সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, অতি দ্রুত সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে আসবে। আগামী এক মাসের মধ্যে এটা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, অর্থমন্ত্রী বাস্তবসম্মত কথা বলেননি। কিছুটা সময় লাগবে।
উল্লেখ্য, বেসরকারি ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকে ঝুঁকি মোকাবিলায় মোট তহবিলের সাড়ে ৬ শতাংশ সিআরআর হিসেবে জমা রাখে। নতুন এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ব্যাংকগুলো ওই সিআরআর থেকে এক শতাংশ ব্যবহার করতে পারবে। এছাড়া সরকারি ব্যাংকগুলোতে এতদিন সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানত ৭৫ শতাংশ রাখা হত। বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে এ আমানত রাখা হত ২৫ শতাংশ। নতুন এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বেসরকারি ব্যাংকে ৫০ শতাংশ আমানত রাখা যাবে। আর সরকারি ব্যাংকগুলোতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানত রাখা যাবে ৫০ শতাংশ। বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদে ব্যাংক খাতের সংকট মেটাতে আর্থিক খাতের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকের ঘটনা এটাই প্রথম। এর আগে গত শুক্রবার রাতে বিএবি কার্যালয়েও এক সভা হয়। তবে সেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। এছাড়াও গতকাল এসব বিযয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মাহবুব ২ এপ্রিল, ২০১৮, ১:১০ এএম says : 0
অর্থনীতিবিদদের নিয়ে এই বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা দরকার।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন