শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

পরমাণু হামলার দ্বারপ্রান্তে আইএস

প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ইরাকি এবং সিরীয় প্রশাসনের কাছে ব্যাপকভাবে ভূমির দখল হারানোর মধ্যেও ইউরোপে সন্ত্রাসবাদী হামলার পরিকল্পনায় অনড় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জিহাদি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) প্রচলিত সন্ত্রাসের বাইরেও পরমাণু হামলার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এমন চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। হার্ভার্ডের বিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সংস্থা বেলফার সেন্টারের গবেষক ম্যাথু বান জানান, কিভাবে জিহাদি গোষ্ঠীটির বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় পরমাণু সন্ত্রাসবাদের উত্থান ঘটতে যাচ্ছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেলজিয়ামের পরমাণুকেন্দ্রগুলোতে সন্দেহজনক গতিবিধির বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে, ব্রাসেলসে জোড়া হামলার দুই দিন পর দেশটির পরমাণুকেন্দ্রের একজন প্রহরীকে হত্যা করা হলে এমন আশঙ্কা আরো দৃঢ় হয়। এর আগে, ২০১৪ সালের আগস্টে পরমাণু চুল্লির একটি ভাল্ভ খুলে ফেলেন একজন কর্মচারী। এতে প্রায় ১০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়। বেলজিয়ান প্রশাসন পরবর্তীকালে জানতে পারে, ইলিয়াস বোঘালাব নামের ওই কর্মচারী চাকরি ছেড়ে সিরিয়ায় আইএসে অংশ নেয়ার উদ্দেশে পালিয়ে গেছেন। এরপর গত নভেম্বরে প্যারিস হামলার পর বেলজিয়ান প্রশাসন মোহাম্মাদ বাক্কালি নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। তার কাছে বেলজিয়ামের একটি পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রের অভ্যন্তরীণ ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গিয়েছিল। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, ব্রাসেলসে দুই হামলাকারী ইব্রাহিম এবং খালেদ আল-বাকরাওই সেই ভিডিওগুলো সংগ্রহ করেছিলেন। সর্বশেষ গত ২৪ মার্চ দেশটির ফ্লেউরাস এলাকায় ন্যাশনাল রেডিওঅ্যাক্টিভ এলিমেন্ট ইন্সটিটিউটের একজন প্রহরীকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে গুলি করা হয়েছিল। এ ঘটনা নিয়ে বর্তমানে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা চলছে। ওই প্রহরীকে হত্যার পর তার আইডি কার্ড ব্যবহার করে কোনো অনধিকার প্রবেশ ঘটেছিল কিনা, এ ব্যাপারেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে ফ্লেউরাসে যাই ঘটুক, আইএসের যে পরমাণু বিপর্যয় ঘটানোর পরিকল্পনা রয়েছে, এ ব্যাপারে অনেকেই নিশ্চিত। হার্ভার্ডের গবেষকদের মতে, ইউরোপের পরমাণু চুল্লিতে হামলা, প্রচলিত বিস্ফোরকের সঙ্গে উচ্চমাত্রার তেজষ্ক্রিয় দ্রব্যের ব্যবহার অথবা উচ্চমানের সমৃদ্ধ পরমাণু দিয়ে নিজস্ব ফিসন বোমা প্রস্তুতের চেষ্টা চালাতে পারে আইএস। এগুলোর মধ্যে পরমাণু চুল্লিতে নাশকতামূলক সম্ভাব্য হামলা নিয়ে বেশি চিন্তিত সংশ্লিষ্টরা। কারণ, এমন নাশকতায় তারা সফল হলে মধ্য ইউরোপে যে বিভ্রাট ঘটবে, তা ফুকুশিমার পরমাণু বিপর্যয়ের মতো হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ভয়াবহ হামলার পর সব পরমাণু চুল্লি এবং গবেষণা কেন্দ্রেই বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে প্রশাসন।
তবে ম্যাথু বান সংশয় প্রকাশ করে বলেছেন, হাসপাতাল এবং শিল্পাঞ্চল এলাকার মতো কিছু কিছু স্থানে খুব সহজেই পাওয়া যায় পরমাণু তেজষ্ক্রিয় উপাদান। তিনি জানান, এসব তেজষ্ক্রিয় উপাদান ব্যবহারের মাধ্যমে সাধারণ মানের একটি বিস্ফোরণকে আকস্মিক বিপর্যয়ে পরিণত করা যায়। কারণ, এসব তেজস্ক্রিয় উপাদান ব্যবহারের ফলে পুরো এলাকার বাতাস বিষাক্ত হয়ে পড়ে। এতে বিস্ফোরণে প্রাণে বেঁচে যাওয়া আহতদের জীবনে নেমে আসে দীর্ঘমেয়াদি যন্ত্রণা। প্রতিবেদনটি ৩১ মার্চ এবং ১ এপ্রিল পরমাণু নিরাপত্তা সম্মেলনে প্রকাশ করা হয়। গবেষকরা লিখেছেন, জঙ্গিরা তেজস্ক্রিয় বোমা তৈরি করতে সক্ষম হলে তা অনেক মানুষকে একসঙ্গে হত্যা করবে। অন্তত যারা বিস্ফোরণের কাছাকাছি থাকবে, তারা সবাই মারা পড়বে। এর অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত ক্ষয়ক্ষতিও তুলনামূলক অনেক বেশি। আরো জানানো হয়, অপরিশোধিত পরমাণু বোমা তৈরির কাজ খুব একটা সহজ না হলেও গোষ্ঠীটির প্রযুক্তিগত দক্ষতা থেকে অনুমান করা যায়, তারা এই সক্ষমতার খুব কাছেই। সরকারি অনেক অনুসন্ধানেও এমন তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এদিকে, ইউরোপের যেসব দেশ নিজেদের পরমাণু কর্মসূচিতে আইএসের হামলার আশঙ্কা করছে, তাদের অবকাঠামোতে নিরাপত্তাব্যবস্থা প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। আইএস রাসায়নিক বা পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র প্রয়োগের দ্বারপ্রান্তেÑ এমন খবর প্রকাশের পর বিচলিত হয়ে পড়েছেন পশ্চিমা নেতারা। তাই নিজেদের পরমাণু অবকাঠামোর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা। তাই চলতি বছরের শেষদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন অনলাইনে পরমাণুকেন্দ্রে হামলা রোধে যৌথভাবে একটি মহড়া করতে যাচ্ছে। ডেইলি মেইল, ডিফেন্সওয়ান, এক্সপ্রেস।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন