বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সংস্কার হচ্ছে না দিনাজপুর শহররক্ষা বাঁধ আতঙ্কিত স্থানীয়রা

| প্রকাশের সময় : ৬ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মাহফুজুল হক আনার দিনাজপুর থেকে : বর্ষা মৌসুম আসন্ন। বর্ষা মানেই বন্যা আতঙ্ক। গত বর্ষা মৌসুমের বন্যার আতঙ্ক এখনো কাটেনি দিনাজপুর অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে। গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ সংস্কার না হওয়ায় আবারও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে এ অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়া বাঁধগুলি গত বন্যায় আরো নষ্ট হয়ে গেছে। এবার বন্যা নয় প্রবল বর্ষনেই ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অতি বৃষ্টি অথবা কথিত বন্ধু প্রতিম ভারত যদি নদীর উজানে দেয়া বাঁধের গেটগুলি খুলে দেয় তাহলে বন্যা অবধারিত। শহর ও শহরতলীকে রক্ষা’র জন্য দেয়া বাঁধ যদি ঠিক থাকে তাহলে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হলেও ক্ষতির পরিমান কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু বাঁধ ঠিক না থাকলে গ্রাম ও শহর তলিয়ে যেতে সময় লাগে না। ঠিক যেমনটি হয়েছিল গতবছর। রাতে ঘুমানোর পর জীবন নিয়ে বের হওয়ার সময় পায়নি অনেকেই। নিমিষেই পানিতে ভর্তি গেছে শোয়ার ঘর। গত বছরের বন্যার তান্ডবে কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। বর্ষা আসন্ন হলেও ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ নির্মানের কাজ শুরুই করা হয়নি। পানি উন্নয়ন বোডের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে একাধিকবার কাট ছাট করে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। অনুমোদন হওয়ার পর বরাদ্দ এলেই কাজ শুরু করা হবে। এর পরেও কথা রয়েছে-বাঁধের দু’পার্শ্বের স্থাপনা উচ্ছেদ করা না হলে সংস্কার কাজ করা সম্ভব হবে না। আর এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ পানি উন্নয়ন বোর্ডের একার পক্ষে সম্ভব নয়। রাজনৈতিক ও সামাজিক সহযোগিতা প্রয়োজন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন এসে যায়, কবে বরাদ্দ আসবে আর কতদিনে রাজনৈতিক ও সামাজিক সহযোগিতায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হবে আর কবে বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু হবে। মাঝে খুব বেশী হলে আর ১’শ দিনের মত বাকি রয়েছে ভরা বর্ষা মৌসুমের। বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু না হওয়ায় সকল মহলেই আতংক সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই সাংবাদিকদের কাছে জানতে চাচ্ছেন বাধ সংস্কার হবে কিনা। নদী তীরবর্তী মানুষ ও কৃষকেরা বেশী উৎকন্ঠিত হয়ে উঠেছে। আবারও গত বছরের মত হবে নাতো। ফসল ভেসে যাবে নাতো বানের পানিতে।
দিনাজপুর শহরে দুই প্রান্তে দুটি শহর রক্ষা বাঁধ রয়েছে প্রায় ২০৮ কিলোমিটার। একটি পুনর্ভবা ও আর একটি গর্ভেশ্বরী নদীর এক পার্শে। গতবছর আগষ্টের মাঝামাঝিতে অতিবৃষ্টি আর উজান থেকে ভারতের ছেড়ে দেয়া পানিতে দুই পাশের বাঁধের বেশ কিছু অংশ ভেঙ্গে শহরে বন্যার পানি ঢুকে পড়ে। দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ পর অপেক্ষাকৃত উচু শহর হিসাবে পরিচিত দিনাজপুর শহরের প্রধান সড়কগুলি পানির নীচে তলিয়ে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী জেলায় মোট ২০৮ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে বন্যায় ৫৮টি স্থানে ভেঙ্গে যায় এবং মোট দুই কিলোমিটার পাড় ক্ষতিগ্রস্থ হয়।এলাকাবাসীর অভিযোগ সেই ভেঙ্গে যাওয়া কিছু বাঁধ সংস্কার করা হলেও পাড়গুলো সংস্কারের কোন ব্যাবস্থা গ্রহন করছেনা সরকার। ফলে শহরসহ নদীর আশে পাশের মানুষেরা পরিবার নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে দিনানিপাত করছে। আগামী বর্ষাকালের আগে এই সংস্কার কাজ শুরু করার দাবীও জানিয়েছেন তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড দিনাজপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুর রহমান জানান, গত বন্যায় শহররক্ষা বাঁধের ক্ষতিগ্রস্থ ৫৮টি জায়গা চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে তাৎক্ষনিকভাবে মেরামত করা হয়েছে মাত্র ৬টি জায়গায়। বন্যাকালীন সময়ে দ্রæত মেরামতের কারনে এসবে সংস্কার কাজও সন্তোষজনক নয় বলে মত প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ নির্মানে সবচেয়ে বেশী অসুবিধা হচ্ছে অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। তার মতে ইতিমধ্যেই প্রায় ১২’শ অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে তাদেরকে স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এদের উচ্ছেদ করা কঠিন শক্ত কাজ। রাজনৈতিক ও সামাজিক সহযোগিতা ছাড়া এদের উচ্ছেদ করা অসম্ভব। আর এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা না হলে সঠিকভাবে বাঁধের সংস্কার কাজ করা যাবে না। যতটুকুই করা হবে তাও আবার ক্ষতির মুখে পড়বে।
অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের আরো বড় মাথা ব্যাথার কারন হয়ে দাড়িয়েছে অর্থ বরাদ্দ। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মতে বরাদ্দ পত্র কাট ছাট করে সীমিত আকারে পাঠানো হয়েছে বোর্ডের কাছে। অনুমোদন হলেই টেন্ডার আহবান করা হবে। তারপর কাজ শুরু। বরাদ্দ, টেন্ডার, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে আসন্ন বন্যার আগে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে কি। এ প্রশ্ন সকল মহলের। বাঁধ সংস্কারের অভাবে আবারো যদি বন্যার ক্ষতির মুখে পড়তে হয় তাহলে এর দায় কে নেবে!!!

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন