শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ব্রিটেনে মুসলিমবিরোধী প্রচারণায় মসজিদ গীর্জার বিভ্রান্তিকর তথ্য

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্যে ব্রিটেনে লিভ ডট ইইউ নামে যে গ্রুপটি প্রচারণা চালাচ্ছে, তাদের একটি টুইট বার্তাকে কেন্দ্র করে গ্রুপটিকে নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ব্রিটেনে বসবাসরত মুসলিমদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার পর সমালোচনার মুখে পড়ে গ্রুপটি টুইটারে তাদের একটি বার্তা মুছে দিয়েছে। তাদের টুইটে দাবি করা হয়েছে, ‘লন্ডনে ৪২৩টি নতুন মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, ৫০০টি গির্জা বন্ধ হয়ে গেছে’।
একই সাথে রাজধানীর নামকরণ করা হয়েছে ‘লন্ডনিস্তান’ এবং সেখানে লন্ডনের মেয়র পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সাদিক খানের একটি ছবিও দেওয়া হয়েছে।
‘লিভ ডট ইইউ’র এই টুইট বার্তার তীব্র সমালোচনা করেছেন ব্রিটেনে বিরোধী লেবার পার্টির একজন এমপি ওয়েস স্ট্রেটিং। ইসলাম সংক্রান্ত একটি সংসদীয় কমিটির সহ-সভাপতি তিনি। বলেছেন, লিভ ডট ইইউ গ্রুপ এখন একটি ‘দক্ষিণপন্থী সংগঠনে’ পরিণত হয়েছে। ওই গ্রæপটি দাবি করছে, ব্রিটিশরা এখন আর মুসলিমদের নিয়ে কথা বলতে পারে না। তাদের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, ‘মুসলিম ইস্যুতে ব্রিটিশরা এখন কথা বলতে ভয় পায় কারণ তাকে বর্ণবাদীর তকমা দেওয়া হতে পারে’।
ইউরোপ থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে আসার ব্যাপারে এই গ্রুপটি প্রচারণা চালালেও এটি কিন্তু তাদের মূল বা আনুষ্ঠানিক কোন গ্রুপ নয়। ব্রেক্সিটের ব্যাপারে বর্তমানে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে যে আলোচনা চলছে, সেসবের ব্যাপারে অত্যন্ত সরব এই গ্রুপটি।
গত মঙ্গলবার এক টুইট বার্তায় গ্রæপটি দাবি করে যে, ‘বহুসংস্কৃতিবাদী (মাল্টিকালচারালিস্ট) ব্রিটিশদের কারণে ইসলামি উগ্রপন্থা টিকে আছে। ইংলিশ খ্রিস্ট ধর্মের ধ্বংসাবশেষের উপর গড়ে উঠেছে লন্ডনিস্তান’।
লেবার এমপি ওয়েস স্ট্রেটিং বলেছেন, এ ধরনের একটি টুইট ‘বর্ণবাদী রাজনীতি ছাড়া আর কিছুই নয়’।
তিনি বলেন, এসব টুইটের সাথে ইউরোপিয়ান গণভোটের কোন সম্পর্ক নেই।
‘আমার মনে হয় তারা এখন একটি দক্ষিণপন্থী সংগঠনে রূপ নিয়েছে। তারা চেষ্টা করছে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ঘৃণা ছড়িয়ে বিভক্তি সৃষ্টি করতে,’ বলেছেন ব্রিটিশ এই এমপি।
তিনি অভিযোগ করেন, এই গ্রুপটি আগুন নিয়ে খেলছে। বলেছেন, ‘এই টুইট যারা পশ্চিমের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ায় তাদের জন্যে একটি উপহার’।
কিন্তু গ্রæপের মুখপাত্র লেবার এমপির এই বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেছেন, কোন একটি বিষয়ে বামপন্থীরা যখন কথা বলতে চায় না তখন তারা এই পথ বেছে নেয়।
কিন্তু লন্ডন লেবার বলছে, বর্ণবাদী এজেন্ডাকে চাঙ্গা করতে তাদের এসব পরিসংখ্যান যার কোন ধরনের ভিত্তি নেই।
এসব পরিসংখ্যানের উৎস
কিন্তু বিভিন্ন সূত্র বলছে, কতো সময়ের মধ্যে এতো মসজিদ তৈরি হয়েছে এবং এতো গির্জা বন্ধ হয়ে গেছে সেসবের কোন উল্লেখ নেই। এই পরিসংখ্যান আসলে তুলে ধরা হয়েছিলো দক্ষিণপন্থী একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান গেইটস্টোন ইন্সটিটিউটে।
গির্জা বন্ধের তথ্য দেওয়া হয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে বাড়িঘর বা প্রপার্টি সংক্রান্ত একটি নিবন্ধ থেকে। সেটি ছাপা হয়েছিলো ২০১২ সালে। তাতে বলা হয়েছে, ২০০১ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ৫০০টি গির্জা ফ্ল্যাটে রূপান্তর করা হয়েছে। কিন্তু তাতে বলা হয়নি কখন এসব বন্ধ হয়েছে। কিম্বা নতুন গির্জা তৈরি হওয়ার কথাও এখানে উল্লেখ করা হয়নি।
ব্রিয়ারলি কনসালটেন্সি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০০৫ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে লন্ডনে ৭০০টি নতুন গির্জা চালু হয়েছে।
৪২৩টি নতুন মসজিদের কথা এসেছে মুসলিমস ইন ব্রিটেন সংগঠনের একটি মানচিত্র থেকে। সারা যুক্তরাজ্যে মুসলিমরা যাতে তাদের ধর্মীয় স্থান সহজে খুঁজে পান সেজন্যে তারা এই মানচিত্রটি তৈরি করেছে। এই ওয়েবসাইটে বলা হয়নি এসব মসজিদ নতুন নাকি পুরনো। কিন্তু ওই মানচিত্রে পূর্ব লন্ডনের মসজিদ, ফিন্সবারি পার্ক মসজিদ এবং আরো যেসব মসজিদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো নির্মিত হয়েছে কয়েক দশক আগে।
ওয়েবসাইটের একটি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে পুরো যুক্তরাজ্যে ২৩২টি নতুন মসজিদ তৈরি হয়েছে। এগুলো আকারে একেক ধরনের। নানা কাজে এগুলো ব্যবহৃত হয়। সূত্র : বিবিসি অনলাইন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন