বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কল ড্রপে ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না গ্রাহকরা

প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ফারুক হোসাইন : ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরও কল ড্রপের ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না মোবাইল ফোন গ্রাহকরা। আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ সংস্থার মান অনুযায়ী কল ড্রপের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে বলে দাবি করেছে মোবাইল ফোন অপারেটররা। আর এজন্যই গ্রাহকদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে না। অপারেটরদের পক্ষ থেকে কল ড্রপের মাত্রা সহনীয় বলা হলেও তা পরিমাপের কোনো যন্ত্রপাতি নেই টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বিটিআরসি) কাছে। অপারেটরের দেয়া তথ্যেই নির্ভর করতে হয় প্রতিষ্ঠানটিকে। তাই প্রতিদিন কী পরিমাণ কল ড্রপ হচ্ছে তা নির্ধারণ করতে বিটিআরসির শীঘ্রই যত্রপাতি কেনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। এদিকে কল ড্রপে মোবাইল ফোন অপারেটরদের জন্য নির্দিষ্ট ক্ষতিপূরণ প্রদানে নতুন নির্দেশনা (গ্রাহকদের নির্দিষ্ট ক্ষতিপূরণ পদ্ধতি) জারি করতে যাচ্ছে বিটিআরসি। এই নির্দেশনায় প্রতিটি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর জন্য পৃথকভাবে ক্ষতিপূরণ পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে কমিশন। আগের নির্দেশনায় ৩ শতাংশ হারে কল ড্রপের জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদানের কথা বলা হয়েছে। তবে নতুন নির্দেশনায় একজন ফোন ব্যবহারকারীর প্রতি ১০০ কলে ৪টি কল ড্রপ হলেই ক্ষতিপূরণ প্রদান করার কথা বলা হয়েছে। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের জন্য কল ড্রপ একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রাহকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, প্রয়োজনীয় কোনো বিষয়ে কথা বলার সময় হঠাৎ ফোন লাইন কেটে যাওয়ার এই বিড়ম্বনার যেন শেষ নেই। কথা না হলেও ঠিকই কেটে নেয়া হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ের টাকা। এমন ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ হিসেবে কল সময়ের মূল্য ফেরত পাওয়ার নির্দেশনা বা আশ্বাস থাকলেও তা পাচ্ছেন না বলেও তারা জানান। কল ড্রপ থেকে মুক্ত নন সাধারণ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী থেকে এমপি-মন্ত্রীরাও। কল ড্রপে অতিষ্ঠ হয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছেন সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী। কল ড্রপ সহনীয় পর্যায়ে রাখতে এবং কল ড্রপের শিকার গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ দিতে সকল মোবাইল ফোন অপারেটরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) কঠোর নির্দেশনা দেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। প্রতিমন্ত্রী বলছেন, মোবাইল অপারেটরদের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এ ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এখন তাদের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। তাদের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। তবে সেই নির্দেশনার আড়াই মাস অতিক্রম হলেও এখনো কল ড্রপের ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না গ্রাহকরা। অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব টি আই এম নুরুল কবির বলেন, মোবাইল অপারেটরগুলো আইটিইউ’র নির্দেশনা মেনে চলছে। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী ৩ শতাংশ কল ড্রপ হলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বর্তমানে মোবাইল ফোন অপারেটরদের কল ড্রপ ৩ শতাংশেরও কম। প্রতিদিন কী পরিমাণ কল ড্রপ হচ্ছে তা জানতে বিটিআরসি’র একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার সাথে কথা বললে জানা যায়, এর নির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান কমিশনের কাছে নেই। এমনকি কল ড্রপের সংখ্যা নির্ধারণের জন্য কোনো প্রযুক্তিও প্রতিষ্ঠানটির কাছে নেই। ফলে অপারেটরদের পক্ষ থেকে কল ড্রপের যে সংখ্যা দেয়া হয় তাই মেনে নিতে এবং প্রচার করতে হয় কমিশনকে। প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তা এবং ভুক্তভোগী গ্রাহকরা এ বিষয়ে বলেন, কোনো অপারেটর কি নিজে থেকেই বলবে আমার কল ড্রপের সংখ্যা নির্ধারিত ব্যারোমিটারের চেয়ে বেশি। তারা নিজেরা চাইবে অন্যদের চেয়ে কল ড্রপের সংখ্যা কম দেখাতে। তবে বিটিআরসির প্রযুক্তি না থাকলেও গত আগস্ট মাসে কল ড্রপসহ সেবার মান নির্ণয়ের জন্য সারাদেশের ১৫টি জেলার মাঠপর্যায়ে একটি জরিপ পরিচালনার উদ্যোগ নেয় কমিশন। কোন অপরেটরের কল ড্রপ কত পরিমাণ এবং সেবার মান কেমন তা জানতে সরাসরি গ্রাহকদের সাথে কথা বলে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে পারেনি বিটিআরসি।
এরই মধ্যে কল ড্রপের ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য নতুন নির্দেশনা প্রদান করতে যাচ্ছে কমিশন। নতুন এই নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি গ্রাহক তার কল ড্রপের জন্যই ক্ষতিপূরণ পাবেন। ইতোমধ্যে এই নির্দেশনা প্রস্তুত চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, আগের নির্দেশনাটি অপারেটরা মেনে না চলায় এই নতুন নির্দেশনা প্রস্তুত করা হয়েছে। সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা বলেন, আগের নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো অপারেটরের কল ড্রপ ৩ শতাংশের বেশি হলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এই নির্দেশনার কারণে আমরা কোনো অপারেটরকে ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য করতে পারি না। এজন্য আমরা নতুন নির্দেশনা প্রতিটি গ্রাহকের কল ড্রপ হিসেব করে ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশনা দিচ্ছি। এই নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিদিন একজন গ্রাহকের ১০০ কলের মধ্যে ৪টি কল ড্রপ হলেই ওই গ্রাহক ক্ষতিপূরণ পাবেন। এক্ষেত্রে অপরেটরটির কল ড্রপের মোট সংখ্যা ৩ শতাংশের চেয়ে কম হোক বা বেশি হোক। গত ১৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি) থেকে মোবাইল অপারেটরদের চিঠি দিয়ে প্রতি কল ড্রপে এক মিনিট কল ফেরত দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। এর একদিন পর গত ২১ জানুয়ারি অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব টি আই এম নুরুল কবির বিটিআরসিতে এক চিঠি দিয়ে এই নির্দেশনা স্থগিত করে আলোচনার অনুরোধ করেন। এরপর গত ২৮ জানুয়ারি মোবাইল ফোন অপারেটরদের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর তারানা হালিম বলেন, আইটিইউ’র নির্দেশনা অনুযায়ী ৩ শতাংশের বেশি কল ড্রপ হলে গ্রাহককে কল ফেরত দিতে হবে। পাশাপাশি সপ্তাহে একদিন একটি ম্যাসেজের মাধ্যমে কতটি কল ড্রপ হলো এবং গ্রাহক কতটি কল ফেরত পেলেন, তা জানাতেও তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন। বিটিআরসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, গত কয়েক মাসে মোবাইল ফোন গ্রাহকরা প্রচুর পরিমাণে কল ড্রপ, মিউট কলসহ নি¤œমানের নেটওয়ার্কের অভিজ্ঞতা পেয়েছেন। গ্রামীণফোন এবং বাংলালিংকের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তাদের কল ড্রপ ১ শতাংশের কম। গত বছর নভেম্বর মাসে বাংলালিংক বিটিআরসির একটি জরিপের কথা উল্লেখ করে কল ড্রপ ১ শতাংশের নিচে বলে প্রচার-প্রচারণাও চালায়। এর আগে প্রমোশনাল অফার হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়েই এবং প্রতিযোগিতা করে কল ড্রপে মূল্য ফেরত অফার চালু করে গ্রামীণফোন ও বাংলালিংক। টেলিযোগাযোগ সেবার মান নিশ্চিত করতে গত বছরের জানুয়ারিতে অন্তর্বর্তী নির্দেশনা দেয় বিটিআরসি। এতে ১৩টি বিষয়ে সেবার মান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে কলড্রপের বিষয়টিও রয়েছে। এতে প্রাথমিকভাবে কল ড্রপের হার ধরা হয় সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৫ শতাংশ, যা পরে ১ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়। আর কল সাকসেস রেটের ন্যূনতম মানদ- ধরা হয় ৯৫ শতাংশ, যা পর্যায়ক্রমে ৯৭ শতাংশে উন্নীত করার কথা। এ নির্দেশনা অনুযায়ী, নির্দিষ্ট ছকে প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে কল ড্রপ হারসহ নেটওয়ার্কের অন্যান্য সেবার বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয় অপারেটরগুলোকে। এ অনুযায়ী জমা দেওয়া সর্বশেষ প্রতিবেদনে কল ড্রপের হার ১ শতাংশের নিচে বলে উল্লেখ করেছে গ্রামীণফোন ও বাংলালিংক। এর আগে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সেবার মান যাচাই করতে গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় কারিগরি জরিপ চালায় কমিশন। এতে দেখা যায়, গ্রামীণফোনের কল ড্রপের হার ৮ দশমিক ৭, বাংলালিংকের ২ দশমিক ৬৩ ও রবির ২ দশমিক ১৩ শতাংশ। অন্যদিকে সাকসেস রেটের দিক থেকে গ্রামীণফোনের ৯১ দশমিক ৩, বাংলালিংকের ৯২ দশমিক ১১, রবির ৯১ দশমিক ৪৯, এয়ারটেলের ৯৭ দশমিক ২২ ও টেলিটকের ৮১ দশমিক ১৩ শতাংশ কল সঠিকভাবে হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন