বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রতিদিন ২৪ জনের প্রাণহানি - অরক্ষিত সড়ক

প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪২ পিএম, ৩ এপ্রিল, ২০১৬

হাসান-উজ-জামান : পরীক্ষাকেন্দ্রে বেঞ্চে নাম লেখা ছিল আরিফিন আক্তার যুথির। সহপাঠীরা সবাই পরীক্ষা দিলেও যুথির সিট ফাঁকাই ছিল। শিক্ষক- ম্যাজিস্ট্রেটের সবার দৃষ্টি ছিল ওই সিটের দিকে। অতঃপর তারা জানতে পারেন যুথি ৪ দিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে। সড়ক অরক্ষিত থাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় যুথির মতো কত মানুষের প্রাণ যাচ্ছে; কত মানুষ প্রিয়জনকে হারিয়ে চোখের পানি ফেলতে তার হিসাব কে রাখে? সড়ক দুর্ঘটনায় হঙ্গ হয়ে অসংখ্য মানুষ ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সংসারের এক মাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি পঙ্গু হওয়ায় স্বপ্নের সংসার ভেঙ্গে তছনছ হয়েছে এ সংখ্যাও কম নয়। যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক সমীক্ষায় দেখা গেছে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন সারাদেশে গড়ে ২৪ জনের প্রাণহানি ঘটছে।
এইচএসসি পরীক্ষা দেয়া হয়নি মতিঝিল মডেল কলেজের ছাত্রী আরিফিন আক্তার যুথির। গত ২৯ মার্চ মঙ্গলবার রাজধানীর কদমতলীর দনিয়া গোয়ালবাড়ী মোড়ে নিষিদ্ধ ইজিবাইকের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে মেধাবী এই ছাত্রীর। পরীক্ষার মাত্র চারদিন আগে যুথির এভাবে চলে যাওয়াকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না যুথির বাবা-মাসহ আত্মীয়-স্বজনরা। গতকাল রোববার প্রথম পরীক্ষার দিনে শোক যেনো আবার নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছিল। সকাল থেকেই যুথির বাবা ডা. আজিজুল হকের নূরপুরের বাসায় চলছিল শোকের মাতম। যুথির মতো ঘটনা ঘটেছে আবিরের ক্ষেত্রেও। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিনে বদরুন্নেছা কলেজ কেন্দ্রে একটি ফাঁকা আসনের দিকে ছিল সকলের দৃষ্টি। শিক্ষার্থী, শিক্ষকের পর প্রশ্ন রেখে ম্যাজিস্ট্রেট নিজেও একটু থমকে দাঁড়ান সেখানে। জানতে চাওয়ার আগেই এক শিক্ষক অস্পষ্ট করে কিছু বললেন তাকে। এর পরই মাথা নিচু করে নিরবে সেখান থেকে ফিরে গেলেন ম্যাজিস্ট্রেট। ফাঁকা ওই আসনটি ঢাকা কলেজের ছাত্র আরিফুর রহমান আবিরের। গতকাল তারও পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা। সহপাঠিরা যখন পরীক্ষা দিচ্ছিল, ঠিক সেই সময়ে আবিরের বাড়িতে চলছিল তার রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল। মাত্র চার দিন আগে মতিঝিলের মধুমিতা সিনেমা হলের সামনে বেপরোয়া বাস কেড়ে নেয় আবিরের তাজা প্রাণ। আবির কোন দিনই অংশ নিবে না পরীক্ষায়। ফিরবেও না কখনো। প্রিয় সন্তানের লাশ কাঁধে বহনের পর তা পাহাড়ের চেয়ে ভারী বলে বিলাপ করছিলেন আবিরের বাবা সোনালী ব্যাংকের কর্মচারী আবদুল ওয়াদুদ। যে পাহাড়ের চাপায় তিনি নিজেও পিষ্ট। শয্যাশায়ী ওয়াদুদের চিকিৎসা চলছে। আর পরিবারে চলছে শোকের মাতম। শুধু এক আবিরের পরিবারেরই নয়। সড়ক দূর্ঘটনার নামে যন্ত্রদানবের বেপরোয়া তা-বে এভাবে প্রতিদিনই কোন না কোন পরিবারে চলছে কান্নার রোল। একটি দুর্ঘটনায় অসমেয়ই অনেক স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটছে, থেমে যাচ্ছে অনেক পরিবারের গল্প। অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর মিছিলে আবিরের মতো প্রতিদিনই যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নাম।
বাংলাদেশ বন্ধু ফাউন্ডেশনের মনিটরিং অফিসার আবুল কালাম আজাদ। মাত্র ত্রিশ বছর বয়সি আবুল কালামের স্ত্রী আর দুই পুত্র নিয়ে সুখের সংসার। বড় ছেলে ইমরান পঞ্চম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র। নিজে ব্যর্থ হলেও পুত্র হবেন বড় সরকারি কর্মকর্তা- এ স্বপ্ন অন্তরে লালন করে আসছেন কালাম। ছেলেকে সেভাবে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার চেষ্টাও ছিল অব্যাহত। কিন্তু সব স্বপ্ন যেন হঠাৎই থেমে গেল। কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালির কালাম পেশাগত দায়িত্বে ছিলেন বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জে। গত বুধবার সকালে মোটরসাইকেল নিয়ে স্থানীয় গাবতলী অফিসে ফেরার পথে বেপরোয়া বাসকে সাইড দিতে গিয়ে ব্যাটারি চালিত ভ্যানের সঙ্গে সংষর্ষ। এরপর আর কিছু মনে নেই তার। জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে খুঁজে পান সেখানকার একটি হাসপাতালে। ডান পা ভাঙ্গা। যেন একই সাথে ভেঙ্গে গেছে ছেলেকে সরকারি কর্মকর্তা বানানোর তার লালিত স্বপ্ন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে আনা হয় ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে। সেখানের চিকিৎসকরা বলেছেন, তার পা রক্ষার নিরন্তর চেষ্টা চলছে। তবে সে সম্ভাবনা ক্ষীণ। কালামের স্ত্রী বলেছেন, মাত্র কয়েকদিনের চিকিৎসার ব্যয় মেটাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখন স্বামীকে বাঁচিয়ে রাখতে চলছে প্রাণপণ চেষ্টা। জমি বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বেঁচে থাকলেও তাকে সারা জীবনই পঙ্গুত্ব বহন করতে হবে।
গতকাল রোববার পঙ্গু হাসপাতালের একটি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, আবুল কালামের মতোই মুন্সিগঞ্জের পশ্চিম আনদি গ্রামের হকার আনোয়ার, ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার জাহানপুরের শাহীন, বগুড়ার মালতিনগরের সুজন, ফরিদপুরের এমদাদসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা রোগীদের আর্তনাদ। দিশেহারা তাদের স্বজন। সেখানের ভুক্তভোগীদের অধিকাংশই সড়ক দুর্ঘটনায় আহত। পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তিই এখন তাদের পরিবারের বড় বোঝা। একটি সড়ক দুর্ঘটনা সর্বশান্ত করে একটি পরিবারকে। বছর শেষে সড়ক দুর্ঘটনায় দেশে নিহতের সংখ্যাটাও কম নয়। বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মতে, সারাদেশে বছরে গড়ে ১২ হাজার মানুষ নিহত ও ৩৫ হাজার মানুষ আহত হন। কেউ কেউ একে তুলনা করেছেন মহামারির সঙ্গে।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের মতে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় যত মানুষ মারা যায়, পৃথিবীর কোন দেশের যুদ্ধেও এত মানুষ মারা যায় না।
কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না সড়ক দুর্ঘটনা। যন্ত্রদানবের দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রতিদিনই অকালে প্রাণ হারাচ্ছে দেশের বহু জ্ঞানী, গুণী, বুদ্ধিজীবী, নিষ্পাপ শিশু থেকে বৃদ্ধ, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী। চিরদিনের জন্য পঙ্গুত্ব বরন করতে হয়েছে অনেককেই। অদক্ষ ও আনাড়ি চালকের বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, খামখেয়ালীপনা, জনসচেতনাতার অভাব এবং দায়ী চালকের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তির বিধান না থাকায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন বিশেষঞ্জ মহল। তাদের মতে, দুর্ঘটনার জন্য বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা এবং পুলিশও অনেকাংশে দায়ী।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় আট হাজার ৬৪২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২১ হাজার ৮৫৫ জন। মোট দুর্ঘটনা হয়েছে ছয় হাজার ৫৮১টি। এই হিসাব মতে, গত বছর প্রতিদিন গড়ে ২৪ জন করে মানুষ রাস্তায় প্রাণ দিয়েছেন। ২০১৪ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে ৫৯২৮টি। এ সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৮ হাজার ৫৮৯ জন। আহত হয়েছে ১৭ হাজার ৫২৪ জন।
আর ২০১৩ সালে মারা গেছে ১৭৮২ জন। আহত হয়েছে ৯২৮ জন। ২০১২ সালে প্রাণ হারায় ১৯৫৩ জন এবং আহতের সংখ্যা ১৩৪২ জন, ২০১১ সালে নিহত হয়েছে ২০৭২ জন এবং আহতের সংখ্যা ১৪৪৮ জন, ২০১০ সালে মারা যায় ২৪৪৩ জন এবং আহত হয় ১৭০৬ জন, ২০০৯ সালে মারা গেছে ২৭০৩ জন এবং আহতের সংখ্যা ১৭৪৬ জন। প্রতিকারযোগ্য একটি কারণে চোখের সামনে প্রতিদিন এভাবে মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল।
গত ২৯ মার্চ ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার নুরুর দোকান নামক স্থানে বাস চাপায় অকালে প্রাণ হারান ত্রিশালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাশিদুল ইসলাম। সূত্র জানায়, বেপরোয়া দ্রুতগতির বাস পেছন দিক থেকে মোটরসাইকেল আরোহী রাশিদুলকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি।
সড়কে বেপরোয়া গতিতে দুইবাসের প্রতিযোগিতায় গত ২০ মার্চ খিলক্ষেতে নির্মম মৃত্যু হয়েছে প্রাইভেটকার আরোহী একই পরিবারের ৩ যাত্রীর। ভাই বোন ভগ্নিপতির অকাল মৃত্যুতে ওই পরিবারে এখনো চলছে শোকের মাতম।
চালকের খামখেয়ালী ও মোবাইল ফোনে কথা বলায় অকালে ঝরে যায় ৫৩ শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীর প্রাণ। ২০১১ সালের ১১ জুলাই চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ঘটে গেছে স্মরণকালের ওই ঘটনা আজো শোকাহত নিহতদের পরিবার। ওই ঘটনায় দায়ি দায়ী ট্রাকচালক মফিজ মিয়াকে গ্রেফতার করা হলেও তিনি জামিনে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক (পঙ্গু) সহ একাধিক হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেপরোয়া চালকের কারনে তারা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। পঙ্গু হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহতদের বেশিরভাগই এ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। তার মতে, ঢাকার বাইরে থেকে আসা রোগীদের ২০ ভাগ মোটর সাইকেল ৬০ ভাগ নসিমন, করিমন, ব্যাটারিচালিক রিকশা ও বাকি ২০ ভাগ বাস দুর্ঘটনায় আহত হন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘটনার পেছনে বেপরোয়া বাস-ট্রাকই দায়ি। তাদের চিকিৎসার পেছনেও স্বাস্থ্যখাতে সরকারের একটি বড় অংশ ব্যয় হয়। কাজেই সড়ক দুর্ঘটনারোধে সরকারের কার্যকরি ভূমিকা গ্রহণ করা উচিৎ।
একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে সারাদেশে ১৫ লাখ রেজিস্ট্রেশন করা মোটরযানের মধ্যে ১০ লাখ গাড়ি চালকের বৈধ লাইসেন্স রয়েছে। বাকি ৫ লাখ গাড়ি চালক ভুয়া লাইসেন্স দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। এ ধরনের জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে গাড়ি চালানো, চালকদের অদক্ষতা ও অসচেতনাতার কারনে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে।
বিআরটিএ’র হিসাব মতে, মহাসড়কগুলোতে চলছে প্রায় দেড় লাখ অনুমোদনহীন যানবাহন। পুলিশের সামনে দিয়েই এগুলো চলছে। হাইওয়ে পুলিশ ও বিআরটিএ মাঝে মধ্যে অভিযান চালালেও রহস্যজনক কারণে এর ধারাবাহিকতা না থাকায় ওইসব ফিটনেসবিহীন যানবাহন বছরের পর বছর রাস্তায় চলাচল করছে। মহাসড়কে নিরাপত্তা জোরদার ও দুর্ঘটনারোধে ২০০৫ সালে ৭২টি পুলিশ ফাঁড়ি নিয়ে হাইওয়ে পুলিশের কার্যক্রম শুরু হয়। পুলিশের এ ইউনিট গঠন করা হলেও দুর্ঘটনারোধে তেমন কোন কাজে আসছে না। চলন্ত অবস্থায় চালকের মোবাইল ফোনে কথা বলা সম্প্রতি নিষিদ্ধ হলে মোবাইল কোর্ট দিয়েও তা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেছেন, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় যত মানুষ মারা যায়, পৃথিবীর কোন দেশের যুদ্ধেও এত মানুষ মারা যায় না। বাংলাদেশে যত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে পৃথিবীর আর কোথাও এমনটি ঘটে না। গত বছর ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ এর তথ্যমতে ঢাকা শহরে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের হার বেশি।
অবৈধ লাইসেন্স দিয়ে গাড়ি চালানো প্রসঙ্গে দুর্ঘটনারোধে সক্রিয় সংগঠন অটোমোবাইলস ম্যাকানিক্স এসোসিয়েশনের সভাপতি খালিদ হোসেন বুদ্ধ বলেন, একটি অবৈধ পিস্তল মুহূর্তেই ১ জনকে হত্যা করতে পারে। কিন্তু একজন অদক্ষ চালককে অবৈধভাবে লাইসেন্স দেয়ার অর্থ তার হাতে একটি একে-৪৭ রাইফেল দেয়া, যা দিয়ে মুহূর্তেই অর্ধশত লোককে খুন করা যায়। কাজেই গাড়ি চালনার জন্য অর্থের বিনিময়ে এ লাইসেন্স বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। বুদ্ধ বলেন, গাজীপুরে রাস্তার অতি দুরে ঘাসের ওপর বসে বান্ধবীকে নিয়ে গল্প করছিলো তার স্কুল পড়ুয়া একমাত্র কন্যা। কিন্তু বাসের আনাড়ি চালক তার কন্যাকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। কন্যার শূন্যতা তার পরিবারকে সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে। তিনি আরো বলেন, অবৈধ লাইসেন্স দিয়ে গাড়ি চালানো, চালকের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের অভাব, যত্রতত্র পার্কিং, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো, ঘুমঘুম চোখে গাড়ি চালানো, সময়মত গাড়ির মেরামত না করানো, হ্যান্ড ব্রেক ঠিক না থাকা, গাড়ির সামনে রাবারিং চাকা, পেছনের ব্রেক লাইট ঠিক না থাকা, লুকিং গ্লাস না থাকা, হলুদ দাগের বাইরে গাড়ি চালানো, হেড লাইটের অর্ধেক অংশে কালো রং না করা দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দায়ী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর মাসুদা এম রশীদ চৌধুরী বলেন, দেশে মানসম্মত কোন ড্রাইভিং স্কুল না থাকায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিনিয়র ড্রাইভারদের কাছ থেকে অনেকে মোটরযান চালানো শিখেন। এতে পর্যাপ্ত শিক্ষা না নিয়েই তারা গাড়ি চালকের পেশায় যোগ দেয়।, দেশে শিক্ষিত, দক্ষ, যোগ্য ও সচেতন গাড়ি চালকের সংখ্যা বাড়ছে না। পরিণতিতে. প্রায়শই ঘটছে মারাতœক সড়ক দুর্ঘটনা। সরকারের উচিৎ জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রতিরোধ এবং পেশাজীবী গাড়িচালকেদের দক্ষতা ও সচেতনতা বাড়াতে একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের পাশাপাশি কাউন্সিলিং বাড়াতে হবে।
পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, প্রয়োজনের তুলনায় সড়ক খুবই কম। প্রতিদিনই গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু বাড়ছে না সড়কের সংখ্যা। এ জন্য মহানগরীতে একদিকে যেমন বাড়ছে যানজট। অপরদিকে ঘটছে দুর্ঘটনা।
এ প্রসঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট রোকন উদ-দৌলা বলেন, সব ধরনের চালকদেরই উপযুক্ত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। চালক ও সর্বসাধারণকে অনেক সচেতন হতে হবে। মহাসড়কগুলোতে রাতে রাতে ফাঁকায় চালকরা এতই বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালায় অনেক সময় রাস্তায় হয়তো নষ্ট গাড়ি কিংবা অন্যকিছু থাকলেও তা তাদের নজরে আসে না। ওভারটেকিং দুর্ঘটনার বড় কারণ। চলন্ত অবস্থায় চালকের মোবাইল ফোন ব্যবহাররোধে অভিযান চালানোর ধারাবাহিকতা রাখতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনার নিহতের ক্ষেত্রে ৩০৪/বি ধারামতে দায়ী চালক বা ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৩ বছর এবং গুরুতর আহত বা পঙ্গু হবার ক্ষেত্রেও ৩ বছর জেল কিংবা ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে। দু’ধরনের মামলাই জামিনযোগ্য বলে কাউকে জেলে থাকতে হয় না। আবার প্রয়োজনীয় সাক্ষীর অভাব, দীর্ঘসূত্রিতার কারনে আদালতে যেতে অনীহা, জামিন নিয়ে দোষীদের পালিয়ে থাকার কারণে এ ধরনের মামলা থেকে ক্ষতিগ্রস্তরা অনেক সময় বিচার বঞ্চিত হন। এ ক্ষেত্রে ১ কিংবা ২ মাসের একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এ সব মামলা নিষ্পত্তির বিধান করা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন