শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

সড়কের উল্টোপথে চলা বন্ধ করতে হবে

প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জননিরাপত্তা বিধানে গণমাধ্যম ও পুলিশের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনাসভায় পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক বলেছেন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাই আইন লঙ্ঘন করেন। পুলিশ ইচ্ছা করলেই সবকিছু করতে পারে না। পুলিশের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেছেন, ভুলত্রুটি পুলিশেরও আছে। পুলিশের সমালোচনা করতে হবে। পুলিশ পরিবর্তনে বিশ্বাসী। গণমাধ্যমের পরামর্শ নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে চান বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেছন। ঢাকা মহানগর পুলিশের উদ্যোগে আয়োজিত এই সভায় ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, বল প্রয়োগ করেও লোকজনকে পথচারী সেতু ও আন্ডারপাস ব্যবহারে বাধ্য করা যায় না। পুলিশের সীমাবদ্ধতার উল্লেখ করে তিনি আরো বলেছেন, ঔপনিবেশিক আমল থেকে বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী মহল পুলিশকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। ইতিপূর্বে তিনি বলেছিলেন, সড়কগুলোর ভিডিওচিত্র সংগ্রহের মাধ্যমে যে চিত্র দেখা যায় তাতে পরিস্থিতি সুখকর নয়। সমাজের উচ্চ শ্রেণীর লোকেরাই ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে উল্টোপথে গাড়ি চালাচ্ছেন। বাস্তবতা হচ্ছে, প্রতিদিন যারা সড়কে চলাচল করছেন তারা প্রত্যক্ষ করছেন একদিকে সিগনাল দিয়ে জনসাধারণের যাতায়াত ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখা হচ্ছে অন্যদিকে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করে উল্টোপথে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন মন্ত্রী, এমপি, সচিব, সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। এ নিয়ে বহু লেখালেখি হলেও পরিস্থিতির কোন উন্নতি হচ্ছে না।
আইনের প্রয়োগ যে কখনো কখনো ব্যক্তি বুঝে হয়, তা লিখে বা বলে বুঝাবার কোন প্রয়োজন নেই। কোন সুনির্দিষ্ট প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা না করেই বলা যায়, আইন জনসাধারণ বিশেষ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে গেছে। এসব প্রসঙ্গ খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতেও পুলিশের দায়িত্বশীলরা আলোচনা করেছন। সাইরেন বাজিয়ে ফ্ল্যাগধারী গাড়ির রাস্তার উল্টো দিক দিয়ে চলার বিষয়টি এখন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এতে দুর্ঘটনাও ঘটছে। কিছুদিন আগে পুলিশের গাড়ী সড়কের উল্টোদিক দিয়ে যাবার কারণে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রকে প্রাণ দিতে হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীর সড়কে যারা যাতায়াত করেন তাদের এধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। উল্টোপথে চলার কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তারা আইনী কোন সহায়তা পাচ্ছে না। কারণ সড়কে যারা দায়িত্ব পালন করে তাদের পক্ষে উল্টোপথে চলা ভিআইপিদের বিরুদ্ধে মামলা করার মত সক্ষমতা নেই। সাধারণত সড়কে কনস্টেবল বা আনসাররাই দায়িত্ব পালন করে থাকে বেশি। তাদের পক্ষে ভিআইপিদের গাড়ির উল্টো যাত্রা ঠেকানো সম্ভব নয়। আলোচ্য অনিয়ম যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। আইজিপি এবং পুলিশের দায়িত্বশীলদের কথায় সেই বাস্তব চিত্রই ফুটে উঠেছে।
যারা আইন-প্রণয়ন করেন, যারা আইনের তদারকি করেন তারই যদি আইন ভঙ্গ করেন বা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন না করেন তাহলে দেশে আইনের বাস্তবায়ন খুবই দূরূহ ব্যাপার। একদিকে জনসাধারণকে বলা হবে আইন মানতে আর দায়িত্বশীলরা অমান্য করতে থাকবেন, এটা চলতে পারে না। পৃথিবীর কোন সভ্যদেশে এধরনের অনিয়মের নজির নেই। নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করে উল্টোপথে চলার এ সংস্কৃতি কোনোভাবেই চলতে দেয়া যায় না। এনিয়ে মন্ত্রীপরিষদে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। জনস্বার্থ নিশ্চিতকরণ ও আইনের বাস্তবায়নে বিন্দুমাত্র শৈথিল্য করা সমীচিন নয়। পুলিশের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তি বিষয়টির দিকে দৃষ্টিপাত দেয়ায় তাকে ধন্যবাদ। তবে এটুকুই যথেষ্ট নয়। কেউই যে আইনের ঊর্ধ্বে নয়, সেটি প্রমাণে কার্যকর উদ্যোগী হওয়া সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন