উত্তর: নাম ও বংশ: নাম আবদুল্লাহ। উপনাম আবু বকর। উপাধি আতিক ও সিদ্দিক। বাবার নাম উসমান এবং তাঁর উপনাম আবু কুহাফা ছিল। হজরত আবু বকর (রা.)-এর একজন দাদা আমজাদ বিন মুররা বিন কাআব বিন লুয়াই সূত্রে তাঁর বংশের ধারা নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে মিলে যায়।
জন্ম সন: ৫৭৪ হিজরি। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত ‘আসহাবিল-ফিল’ ঘটনার ঠিক তিন বছর পর।
নবীজি (সা.) এর সঙ্গে সম্পর্ক:
হজরত আবু বকর (রা.) নবী করিম (সা.) থেকে বয়সে দুবছর ছোট ছিলেন। তিনি ৫৯০ খ্রিস্টাব্দে ১৮ বছর বয়সে নবীজি (সা.) এর বন্ধু হওয়ার অমূল্য দৌলত অর্জন করেন। তিনি তৎকালীন সময়ে মক্কার নেতৃস্থানীয়দের একজন ছিলেন। নবীজি (সা.)-এর বয়স তখন ২০ বছর ছিল। এটিই ছিল তাঁদের পরস্পর বন্ধুত্বের সূত্রপাত। যা পরবর্তী সময়ে এমন গভীরতা লাভ করে যে তার নিদর্শন দুনিয়ায় বিরল। এবং তিনি ১৮ বছর বয়স থেকে ৬১ বছর পর্যন্ত জীবনের এ ৪৩টি বছরে নবীজি (সা.)-এর নবুওতয়াতের স্বাদ ও সৌন্দর্য খুব কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য লাভ করেন।
ইসলাম গ্রহণ:
নবী করিম (সা.) কতৃক নবুওয়াতের ঘোষণার পর হজরত খাদিজা (রা.) ছাড়া যিনি সর্বপ্রথম নবীজি (সা.)-এর ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন আবু বকর (রা.)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আবু বকরের সমান এমন কোন ব্যক্তি নেই, যে ইসলামের দাওয়াত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কোন রকম যাচাই-বাছাই বা যুক্তি-তর্কের পেছনে না পড়ে নিশ্চিন্তে ইসলাম গ্রহণ করেছে।
ইসলামে সেবায় তাঁর অবদান, পুরুষদের মধ্যে তিনি সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তিনিই সর্বপ্রথম কোরআন সংকলন করেছিলেন এবং বাইতুল মাল বা রাষ্ট্রীয় কোষাগার স্থাপন করেছেন। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘আমার উম্মতের মধ্যে আবু বকর সবার আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর ইন্তেকালের আগে স্পষ্টভাবে কাউকে খলিফা নিযুক্ত করে যাননি। তাই মহানবী (সা.)-এর ইন্তেকালের পর খলিফা নির্বাচন নিয়ে মুসলমানরা আনসার ও মুহাজির দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েন। উভয় দলই তাঁদের মধ্য থেকে খলিফা নির্বাচনের দাবি করছিল। “সাকিফায়ে বনি সায়েদাহ” এ বিষয়ে বাক-বিতান্ডা চরম আকার ধারণ করে। একদিকে এখনো নবীজি (সা.)-এর দাফন-কাফনের কাজ সমাধা হয়নি। অন্যদিকে খেলাফত নিয়ে তুমুল বিতর্ক, এমন পরিস্থিতিতে হজরত আবু বকর (রা.) এগিয়ে আসেন এবং তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি হাদিস শোনালেন। “কোরাইশ খেলাফতের দায়িত্বের অধিকারী”। আনসারগণ এটা মেনে নেন এবং তাঁরা তাঁদের দাবি প্রত্যাহার করে নেন। এভাবেই তিনি উম্মতের ঐক্যকে সুদৃঢ় করেন। সাহাবায়া (রা.) নবী করিম (সা.)-কে নিজের জান-মাল ও আত্বীয়-স্বজন থেকেও বেশি মহব্বত করতেন। তাই তাঁর ইন্তেকালের পর তারা দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটতে লাগলেন। উম্মুক্ত তলোয়ার নিয়ে হজরত উমর (রা.) এর মতো বীর-বাহাদুর শোকে বিহ্বল হয়ে বলতে লাগলেন, যে বলবে মুহাম্মদ (সা.) ইন্তেকাল করেছেন তার গর্দান উড়িয়ে দেব। এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে হজরত আবু বকর (রা.) এগিয়ে আসেন। এবং একটি জ্ঞানগর্ভ অভিভাষণের মাধ্যমে তিনি পরিস্থিতি অনুকূলে নিয়ে আসেন।
ধর্মত্যাগের মতো মারাত্বক ফেতনার মোকাবিলা।
নবীজি (সা.) এর ইন্তেকালের পর আরব দেশের কোন কোন অঞ্চলে ধর্মত্যাগের এক প্রবল ঝড়ে উত্থিত হয়েছিল। এই ঝড়ের ঝাঁপটায় দুর্বল ইমানদার এবং নতুন ইসলাম গ্রহণকারীদের অন্তর থেকে ইমানের আলো নিভে যাওয়ার উপক্রম হলো। আবু বকর (রা.) অত্যন্ত দৃঢ়তা ও সীমাহীন ধৈর্যের সঙ্গে বিদ্রোহীর মোকাবিলায় অগ্রসর হন। বিভিন্ন ফেতনা ও বিদ্রোহ দমন করার জন্য তিনি মুজাহিদ বাহীনিকে মোট ১২ ভাগে বিন্যস্ত করেন। প্রত্যেক অঞ্চলের সেনাপতি ও ধর্মত্যাগীদের নামে তিনি যেসব দিকনির্দেশনামূলক পত্রাবলি প্ররণ করেছেন, ইসলামের যুদ্ধনীতি ও ধর্মত্যাগের ফেতনা নির্মূলে তা আজও সমভাবে প্রযোজ্য। তাঁর যোগ্য নেতৃত্বের ফলে খুব সহজেই ধর্মত্যাগীদের ফেতনা দমন করা সম্ভব হয়।
উত্তর দিচ্ছেন: দিলাওয়ার আহমদ কাসেমি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন