শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অভিনন্দন

প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ক্রিকেটকে বলা হয় গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। এ কথা যে কতটা সত্য, তা বিশ্ববাসী আরো একবার প্রত্যক্ষ করল কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে। ক্রিকেটে কখনো অসম্ভব হয়ে যায় সম্ভব। কখনো সম্ভব হয়ে যায় অসম্ভব। এটাও তারা দেখল। টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে টানটান উত্তেজনা। শেষ ওভারে সে উত্তেজনা তুঙ্গে। ওই ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জয় পেতে তুলতে হবে ১৯ রান। ৬ বলে ১৯ রান। অসম্ভব বলেই মনে হয়েছে সবার কাছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্যাম্পে বিষণœতার হাওয়া। সমর্থকরা বিমর্ষ। ইডেন গার্ডেনসের ৬৭ হাজার দর্শকের দৃষ্টি তখন মাঠে। অগণিত টেলিভিশন দর্শকের দৃষ্টি টিভির পর্দায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ কি পারবে ১৯ রান তুলে বিজয় করায়ত্ত করতে? এ প্রশ্ন ঘুরপাক পাচ্ছে সবার মনে। বল হাতে ইংল্যান্ডের নির্ভরযোগ্য বোলার বেন স্ট্রোকস। মোকাবিলা করবেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কার্লস ব্রাথওয়েট। বোলার হিসাবেই তার পরিচিতি। ইতোপূর্বে চার ইনিংসে সর্বসাকুল্যে তার সংগ্রহ ২৫ রান। প্রথম বল করলেন বেন স্ট্রোকস। কার্লস ব্রাথওয়েট উড়িয়ে মারলেন সে বল। ফাইন লেগের ওপর দিয়ে বল চলে গেল সীমানার বাইরে, ছক্কা। দ্বিতীয় বলে ফের ছক্কা হাঁকালেন কার্লস ব্রাথওয়েট লং অনের ওপর দিয়ে। তৃতীয় বলেও ছক্কা লং অফের ওপর দিয়ে। পর পর তিন ছক্কায় রান সমতা। দরকার ১ রান, বল আছে তিনটি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয় তখন সময়ের ব্যাপার। তারপরও ক্রিকেট বলে কথা! চতুর্থ বল করলেন বেন স্ট্রোকস। সে বলেও ছক্কা হাঁকালেন কার্লস ব্রাথওয়েট মিড উইকেটের ওপর দিয়ে। দুই বল হাতে থাকতেই স্বপ্নের জয় ধরা দিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের হাতে। রূপকথা হয়ে গেল ২০১৬ সালের টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনাল। এই মহাজয়ের নায়ক কার্লস ব্রাথওয়েটকে অভিনন্দন, অভিনন্দন টিম ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
টি-২০ মানেই নাটক। দর্শকরা এবার একটা মহানাটক দেখলো। নাটকের শুরু ম্যাচের শুরুতেই। টসে জিতে আগে ফিল্ডিং নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শুরুতেই ইংল্যান্ডকে একেবারে চেপে ধরেন ক্যারিবীয় বোলাররা। শেষাবধি ইংল্যান্ডের স্কোর দাঁড়ায় ৯ ইউকেটে ১৫৫ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে এই স্কোর মামুলি হওয়ার কথা ছিল। যারা সেমিফাইনালে ভারতের ১৯২ তাড়া করে জিতেছে, তাদের কাছে ১৫৬ রান এমন বড় কিছু নয়। অথচ শুরুতেই অঘটন। লিন্ডল সিমেন্স, ক্রিস গেইল ও জনসন চার্লসের বিদায় দলীয় স্কোর ১১ হতেই। এই বিপর্যয় থেকে মনে হচ্ছিল ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এলেন মারলন স্যামুয়েল। তিনি রুখে দাঁড়ালেন। ব্রাভো কিছুটা এগিয়ে দিলেন। রাসেল-সামী কিছু করতে পারলেন না। শেষে এসে অভাবিত চমক দেখালেন কার্লস ব্রাথওয়েট। মারলন স্যামুয়েল ৬৬ বলে ৮৫ রান করে অপরাজিত থাকলেন। ম্যাচসেরা তিনিই। পুরো টুর্নামেন্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অসাধারণ ছন্দময় ও নান্দনিক খেলা উপহার দিয়েছে। এমন একটা সময় ছিল যখন বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রথম পছন্দের দল ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বিশ্বের বহু খ্যাতিমান ও নন্দিত ক্রিকেটার এসেছেন ক্যারিবীয় দেশগুলো থেকে। তারা ক্রিকেটকে বিশেষ ধারায় ও উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। বিশ্ব ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অবদান অনন্যসাধারণ। ক্রিকেটের নেচারকেই পরিবর্তিত করে দিয়েছেন ক্যারিবীয় স্বনামখ্যাতরা। মাঝখানে দলটির অবস্থান নানা কারণে দুর্বল হয়ে পড়ে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আবার দলটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকারের অনুসরণ তাকে আবার সামনে নিয়ে এসেছে। ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে এখন অনেক অগ্রসর, টি-২০ বিশ্বকাপ জয় তার একমাত্র প্রমাণ নয়। একই দিনে মেয়েদের টি-২০ বিশ্বকাপও জয় করেছে ক্যারিবীয় মহিলা দল। অস্ট্রেলীয় মহিলা দলকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো দলটি চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। শুধু তাই নয়, গত ফেব্রুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিশোররা বাংলাদেশ থেকে জিতে নিয়ে গেছে যুব বিশ্বকাপ ট্রফি। ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই উত্থান বিশ্বের ক্রিকেটমোদীদের জন্য সুখবর।
ছন্দিত ও আক্রমণাত্মক ক্রিকেট পছন্দ করে ক্রিকেট প্রেমিকরা। এই ধরনের ক্রিকেট উপহার দেয়ার জন্য ক্যারিরীয় ক্রিকেটাররা বিশেষ প্রিয়তা অর্জন করেছেন। তাদের এই ধারা বা স্টাইল আগামীতে আরো বিস্তৃত হবে বলে ক্রিকেট-ক্রিটিকরা মনে করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের ক্রিকেট অনেক দূর এগিয়েছে। বিশ্বে যে কোনো দলের সঙ্গে বাংলাদেশ দল সমানে সমানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সক্ষমতা অর্জন করেছে। টি-২০ বিশ্বকাপ এবং এর আগে টি-২০ এশীয় কাপে বাংলাদেশের পারফরমেন্স সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তরুণ ক্রিকেটাররা বিপুল প্রশংসা পেয়েছেন। তাদের আরো এগিয়ে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে ক্রিকেটের খ্যাতিমান দলগুলো তাদের অনুপ্রাণিত করতে পারে। নিয়মিত অনুশীলন, দক্ষতা অর্জন, টিম ওয়ার্ক ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞা বিজয়ের চাবিকাঠি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল টি-২০ বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে এর প্রমাণ দিয়েছে। টি-২০ বিশ্বকাপের চমৎকার আয়োজনের জন্য আইসিসি ও ভারতের ক্রিকেট বোর্ড ধন্যবাদার্হ। বিশেষ করে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের নিখুঁত তত্ত্বাবধান ও অতিথেয়তা প্রশংসা লাভ করেছে। বলাবাহুল্য, ক্রিকেট আনন্দের একটি উপলক্ষ। এ আনন্দ বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়–ক, জয় হোক ক্রিকেটের।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন