শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বগুড়ায় জঙ্গি ঘাঁটিতে গ্রেনেড বিস্ফোরণে দু’জনের মৃত্যু

প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : বগুড়ার শেরপুরে গত রোববার রাত সাড়ে ৮টায় শেরপুর উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের জোয়ানপুর কুঠিরভিটা গ্রামের একটি বাড়িতে শক্তিশালী গ্রেনেড বিস্ফোরণে অজ্ঞাতনামা ২ ব্যক্তি নিহত হয়েছে। নিহত ২ জনই জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্য বলেই পুলিশের ধারণা।
সোমবার পুলিশ ওই বাড়ি থেকে ২০টি গ্রেনেড, ৪টি বিদেশী পিস্তল, ৮টি পিস্তলের ম্যাগজিন, ৪০ রাউন্ড তাজা গুলি, ২টি ধারালো চাকুসহ বৈদ্যুতিক তার গ্রেনেডের ডেটোনেটরসহ প্রায় ৫ বস্তা বিস্ফোরক তৈরীর (আরডিএস জেল) সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। বাড়িটি ভাড়া নিয়ে জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা এটিকে তাদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, রোববার রাতে বিকট শব্দে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ওই গ্রেনেড বিস্ফোরণের সময় সেখানে থাকা ওই বাড়িতে থাকা দু’ব্যক্তির মধ্যে একজনের দুটি হাত ও পা উড়ে গেছে। শক্তিশালী বোমার স্প্রিন্টারে আঘাতে ঘরের দরজা-জানালার কাঁচ ও লোহার শিটের তৈরী গ্রীল পর্যন্ত ভেঙ্গে গেছে। গ্রেনেড বিস্ফোরণের পর আশপাশের লোকজন প্রথমে শেরপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে খবর দেয়। এরপর শেরপুর থানার ওসি খান মো. এরফান. ওসি তদন্ত মো. মিজানুর রহমান এবং সেকেন্ড অফিসার বুলবুল হোসেন পুলিশ ফোর্স নিয়ে ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয়। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের পাশে মহিপুর ডেইরি ফার্মের পূর্বপাশে ওই বাড়ি থেকে আহত দু’জনকে উদ্ধার করে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। কিন্তু আঘাত গুরুতর হওয়ায় হাসপাতালে দু’জনেরই মৃত্যু হয়।
বাসাটিতে বিস্ফোরক ও বোমার মজুদ থাকায় ঢাকা থেকে সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা চৌধুরী মোহাম্মদ রহমতুল্লাহর নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি ‘বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ’ বগুড়ায় এসে সোমবার সকাল ৯টা থেকে শুরু করে উদ্ধার অভিযান। উদ্ধার অভিযান শেষে বগুড়ার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান উপস্থিত সাংবাদিকদের বাড়িটিকে গ্রেনেড ও বোমা তৈরীর ওই কারখানা হিসেবে উল্লেখ করে সেটির ভেতরের অবস্থান সম্পর্কে ব্রিফ করেন। তিনি জানান, ওই বাড়ি থেকে ২০টি গ্রেনেড, ৪টি বিদেশী পিস্তল, ৮টি পিস্তলের ম্যাগজিন, ৪০ রাউন্ড তাজা গুলি, ২টি ধারালো চাকুসহ বৈদ্যুতিক তার গ্রেনেডের ডেটোনেটরসহ ৫ বস্তা বোমা তৈরীর (আরডিএস জেল) সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকালে জনতা ব্যাংক শেরপুর শাখার ব্যাংক একাধিক হিসাবের চেক বই এবং বিভিন্ন প্রকার জেহাদী বই ও পাওয়া যায়।
উদ্ধার অভিযান শেষ হলে ঢাকা থেকে আগত চৌকশ বোমা বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যরা গ্রেনেডগুলো নিষ্ক্রিয় করার কাজ সম্পন্ন করার কথাও তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, নিহতদের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। তবে তাদের বয়স অনুমান ৩২ থেকে ৩৫ বছর হতে পারে। তিনি বলেন- গ্রেনেড বিস্ফোরণের পর এটা পরিষ্কার বোঝা গেছে এটা জেএমবি অথবা অন্য কোন জঙ্গিদের ঘাঁটি ছিল।
জঙ্গিরা বাড়ির মালিক মজিবর রহমানের পুত্র বর্তমানে ঢাকা নিবাসি মাহবুবার রহমানের কাছে সিএনজি চালক পরিচয়ে নওগাঁ জেলার মিজান নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে বাড়িটি ভাড়া নিয়ে সস্ত্রিক বসবাসের নামে বাড়িটিকে জঙ্গি ঘাঁটি বানিয়ে ফেলেছিল। তবে বিস্ফোরণ ঘটনার দু’দিন আগে মিজান তার স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে যায়। এসময় ঘটনাস্থলে পুলিশের পিবিআই ইউনিট, র‌্যাবের বিশেষ বোমা বিশেষজ্ঞ দল এবং বগুড়ার ডিবির ওসি মো. আমিরুল ইসলাম এবং ফায়ার সার্ভিস দলসহ শত শত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। অবশ্য রোববার রাত থেকে শেরপুর থানার পুলিশ ওই বাড়িসহ পুরো এলাকাটি ঘিরে রাখে।
স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, মাহবুব হোসেনের ওই বাড়ীতে সিএনজি চালক পরিচয় দিয়ে মিজানুর রহমান নামের একব্যক্তি প্রায় ৬ মাস আগে ২ হাজার ২০০ টাকা মাসিক ভাড়ায় বাড়িতে উঠে। মিজানের পরিবারে এক স্ত্রী এবং একমাত্র ৫/৬ বছর বয়সের একটি কন্যা সন্তান আছে। দু’দিন আগে সিএনজি চালক মিজানুর রহমান তার পরিবারকে নিয়ে নওগাঁ জেলায় চলে যায়। এরপর অজ্ঞাত পরিচয় নামা বেশ কয়েকজন লোক তালা খুলে বাড়িতে উঠে। গত রোববার রাতে বোমা বিস্ফোরণের সময় ২ জন মারা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, জামায়াত আমীরের ফাঁসি সংক্রান্ত বিষয় অথবা আসন্ন বাংলা নববর্ষের আনন্দ অনুষ্ঠানে হামলা করার প্রস্ততির অংশ হিসেবে জঙ্গিরা এখানে সার্বিক প্রস্ততি নিচ্ছিল। তবে বিস্ফোরণে দুই জঙ্গির মৃত্যুতে হয়তো বহুসংখ্যক নিরীহ মানুষের প্রাণ বেঁচে গেল।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন