বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

‘ইলিশ উৎপাদন জোরদারকরণ’ প্রকল্পের কাজ শুরু

বি এম হান্নান, চাঁদপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইলিশ উৎপাদন জোরদারকরণে ৩৩ কোটি টাকার ৫ বছর মেয়াদী একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে সরকার। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউট চাঁদপুর নদী কেন্দ্রে এ প্রকল্প নিয়ে পরিচালকের কার্যালয়ও খোলা হয়েছে। এ কারণে ইলিশের অভয়াশ্রম ও মা ইলিশ রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপসহ অনেকগুলো কাজ হাতে নিয়েছে মৎস্য বিভাগ । ২০০৩ সাল থেকে ইলিশের অভয়াশ্রম ও মা ইলিশ রক্ষার পদক্ষেপগুলো ক্রমেই জোরদার করা হচ্ছে। ফলে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে অনেক গুণ। পাশাপাশি জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানে প্রকল্পও হাতে নেয়া হয়েছে। দেশের মৎস্য বিভাগ এরই মধ্যে ৫টি নদী ও উপকূলীয় অঞ্চলকে অভয়াশ্রম বা ইলিশের বিচরণক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। চাঁদপুরের ষাটনল থেকে ল²ীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদীর অববাহিকায় ১ শ’ কি.মি, ভোলার মদনপুর থেকে চরপিয়াল পর্যন্ত শাহবাজপুর শাখা নদীর ৯০ কি.মি, ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালীর চররুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলীয়া নদীর প্রায় ১শ’ কি.মি. এবং শরীয়তপুরের নড়িয়া ভেদেরগঞ্জ উপজেলার অংশে পদ্মায় ২০ কি.মি। এছাড়া বরিশালের হিজলা থেকে ২২ কি.মি নতুন একটি এলাকাকে মৎস্য বিভাগ অভয়াশ্রম ঘোষণা করতে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি চট্টগ্রামের মিরসরাই এলাকায় ভোলার তমুদ্দিন, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, কক্সবাজার এলাকার কুতুবদিয়া এলাকাও ইলিশের প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। প্রজনন মৌসুমে এসব অভয়াশ্রমে মা ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ রয়েছে। সূত্রমতে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে আপাতত ইলিশের জন্যে ২ শ’ ১৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। এ প্রকল্প দেশের ২৯ জেলার ১শ’ ৩৪ উপজেলায় বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। এসব উপজেলাগুলো কোনো না কোনোভাবে ইলিশ উৎপাদন, বিপণন, প্রক্রিয়া ও বাজারজাতকরণে নিয়োজিত। এসব জেলার শতকার ২ ভাগ লোক এসব কাজে জড়িত। জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান ব্যবস্থা নিশ্চিতের পাশাপাশি অবৈধ জালের ব্যবহার বন্ধ করতে পারলে এবং ’মৎস্য সংরক্ষণ আইন’ কঠোর ভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হলে ইলিশের উৎপাদন বাড়বে। রাষ্ট্রের জাতীয় সম্পদ রক্ষায় এসব কাজেই এ অর্থ ব্যয়ের নির্দেশনা রয়েছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ওইসব অভয়াশ্রম থেকে একশ্রেণির জেলে জাটকা ইলিশ শিকার করে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চাঁদপুর মৎস্য অধিদপ্তর ও নদী গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘বিদ্যমান ৫টি ইলিশের অভয়াশ্রম ব্যবস্থাপনা গতিশীল করতে বেশ কিছু কার্যক্রমে পরিবর্তন আনা হয়েছে।’
এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, জেলেদের মধ্যে ‘আর্দশ মৎস্যজীবী গ্রাম’ প্রতিষ্ঠা, জাটকা আহরণকারী ৪০ হাজার জেলে পরিবারের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, একই সঙ্গে মৎস্য সংরক্ষণ আইনের আওতায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ও অভিযান জোরদার ইত্যাদি। মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তারা বলেছেন, দেশে প্রতি বছর যে পরিমাণ মাছ উৎপাদন হয় তার ১১ শতাংশ আসে ইলিশ থেকে। দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে ইলিশের উৎপাদন ১ শতাংশ। গত বছর পৌনে ৫ লাখ মে. টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক এম এ বাশার বলেন, ‘৩৩ কোটি টাকা প্রকল্পের অধীনে চাঁদপুরে জেলেদের প্রশিক্ষণ ও তাদেরকে সচেতন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, অভয়াশ্রমগুলো সার্বিক পরিস্থিতি নির্ণয়, ইলিশ গবেষণা জোরদার ও ছোট ছোট ইলিশের পেটে ডিম আসার কারণ নিরূপণ, ইলিশের বিচরণ ক্ষেত্র পরিবর্তনের কারণ নির্ণয়, জলবায়ূ পরিবর্তনের ওপর কাজ করা, ইলিশের সুষ্ঠু বাজারজাতকরণ ও মূল্য নির্ধারণ, ইলিশের ডিম ও রেণুর সঠিক পরিসংখ্যান নির্ণয় ও মজুত, ইলিশ গবেষণাগারের পরিমার্জন ও সংস্করণসহ ইত্যাদি বিষয়ে চাঁদপুরের ‘ইলিশ উৎপাদন জোরদারকরণ প্রকল্প’ গ্রহণ করা হয়েছে।’ বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউট চাঁদপুর নদী কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বিশিষ্ট ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান বলেন,‘মা ইলিশ সংরক্ষণ ও ডিম পাড়ার সুযোগ দেয়া, জাটকাকে বড় হতে সুযোগ দেয়া ও রক্ষা করা, অভয়াশ্রমগুলোকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সংরক্ষণে রাখা, জেলেদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সচেতন করে তোলা ও আইন প্রয়োগে কঠোর অবস্থানে থাকলে এবার ৫ লাখ মে.টন ইলিশ উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নদীতে প্রচুর ইলিশ আছে ভালো অবস্থানে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন