শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ

| প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সবচেয়ে গুরুতর মানবাধিকারের লংঘন ঘটেছে। ২০১৭ সালের ওপর ভিত্তি করে প্রনীত ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, নির্যাতন খেয়ালখুশিমতো ও বেআইনীভাবে আটকে রাখা, নিরাপত্তারক্ষীদের দ্বারা জোর করে গুম করার কথা। তাতে নাগরিক স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা, মত প্রকাশের সীমাবদ্ধতা, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সীমাবদ্ধতার কথাও বলা হয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় স্বাধীনতা নেই বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখেনা, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যে কোনো আলোচনায়, সমীক্ষায় ও প্রতিবেদনে ঘুরেফিরে এই কথাগুলোই উঠে আসে। দেশী-বিদেশী মানবাধিকার সংস্থাগুলো এব্যাপারে লাগাতারই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। মানবাধিকার পরিস্থিতি যখন দীর্ঘদিন ধরে একই অবস্থায় থাকে তখন আরো উদ্বিগ্ন ও বিচলিত হতে হয়। যখন দেখা যায়, মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা একের পর এক ঘটছে; অথচ তার প্রতিকার হচ্ছে না তখন উদ্বেগ-বিচলনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। কোনো দেশে গণতন্ত্রের অবাধ চর্চা, সহনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ, সুশাসন, আইনের শাসন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বিচারপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা এবং সকল অপরাধ ও দুষ্কৃতির ত্বরিত প্রতিকারের ব্যবস্থা থাকলে মানবাধিকার পরিস্থিতি কখনোই উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে না। আমাদের দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির নাজুক হালের জন্য প্রকৃতপক্ষে কী কী কারণ ও প্রভাবক দায়ী তা খতিয়ে দেখে পরিস্থিতি উত্তরণে সচেষ্ট হওয়া আবশ্যক। ‘বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে’, এ ধরনের মন্তব্য দেশের ভাবমর্যাদার জন্য মোটেই অনুকূল নয়।
একথা অস্বীকার করা যাবে না, দেশে নাগরিক নিরাপত্তার দু:খজনক অভাব রয়েছে। মানুষ যখন তখন নিখোঁজ ও গুম হয়ে যাচ্ছে। কেউ ফিরে আসছে, কেউ আসছে না। যারা ফিরছে না তাদের কারো লাশ পাওয়া যাচ্ছে, কারো যাচ্ছে না। বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ও নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যুও সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে না। দায়মুক্তির সংস্কৃতিও আছে। সুশাসনের অভাবে কোথাও শৃংখলা নেই। কোনো ক্ষেত্রেই প্রায় জবাবদিহিতা নেই। বিচারহীনতার এক পরিস্থিতিও গড়ে উঠেছে। গণতান্ত্রিক রাজনীতি এবং সহনশীল রাজনৈতিক অবস্থাও উধাও। এমতাবস্থায়, মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটছে বিভিন্ন পর্যায় থেকে। এ অবস্থার আশু অবসান কাম্য। দেশ- বিদেশ থেকে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ সম্বলিত যেসব রিপোর্ট বা প্রতিবেদন পাওয়া যাচ্ছে তা পুরোপুরি অস্বীকার বা নাকচ করা উচিৎ নয়। বরং তা আমলে নিয়ে যথাসম্ভব এবং যতদ্রæতসম্ভব পরিস্থিতি উত্তরণে ব্রতী হওয়াই সঙ্গত। মনে রাখতে হবে, বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে, বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে মানবাধিকারের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে। বিশ্বের যেসব দেশে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটছে সে সব দেশের সঙ্গে অনেক দেশই সম্পর্ক সম্প্রসারনে, বিনিয়োগ ও ব্যবসা বাণিজ্য বিস্তারে আগ্রহ প্রদর্শন করে না। আমাদের দেশ যখন উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পর্যায়ে আছে, যখন উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার অঙ্গীকারও আছে তখন বহির্বিশ্বের সঙ্গে আরো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা, বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারণ শুধু জরুরী নয়, আবশ্যকও বটে। এই বিবেচনা থেকেও আমাদের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানো দরকার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আলোচ্য প্রতিবেদনের পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে এদেশে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ সতর্কতাও জারি করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, অপরাধ ও সন্ত্রাসের কারণে মার্কিন নাগরিকদের ভ্রমণে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। উল্লেখ করা হয়েছে, অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ উত্তর-পূর্ব এলাকা ভ্রমণে মার্কিন নাগরিকরা যেন দ্বিতীয়বার ভাবেন। শহরাঞ্চল বিশেষ করে ঢাকার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ঢাকায় অপরাধ প্রবণতা বেশী এবং রাতে তা অনেকটা বেড়ে যায়। সাধারণভাবে এসব অপরাধের মধ্যে রয়েছে জালিয়াতি, চুরি, ডাকাতি, গাড়ি চুরি, ধর্ষণ, হামলা, ছিনতাই ইত্যাদি। এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা, নাগরিক নিরাপত্তা ও আইনশৃংখলা পরিস্থিতি যদি সুষ্ঠু থাকে তবে বিদেশীরা ভ্রমণেই শুধু নয়, বিনিয়োগেও এগিয়ে আসবে না। অথচ আমাদের উন্নয়ন আকাঙ্খা পূরণে বিদেশী বিনিয়োগ অপরিহার্য। ইতোমধ্যেই খবর প্রকাশিত হয়েছে বিদেশী বিনিয়োগ কমেছে। এটা কোনো ভালো সংকেত বহন করেনা। বিদেশী বিনিয়োগই কেবল নয়, দেশী বিনিয়োগ বাড়াতেও নাগরিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তাসহ আইনশৃংখলার উন্নয়ন সাধন করতে হবে। এদিকে সরকার প্রয়োজনীয় দৃষ্টিপাত করবে ও যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে বলে আমরা আশা করি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
অাব্দুল ওয়াহাব ২৩ এপ্রিল, ২০১৮, ৬:২৬ এএম says : 0
প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ সঠিক।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন