শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

আবাসিক এলাকার বাণিজ্যিক স্থাপনা সরানোর উদ্যোগ

প্রকাশের সময় : ৬ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অনেক দেরিতে হলেও ঢাকা শহরের আবাসিক এলাকা থেকে বাণিজ্যিক ভবন সরানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ঢাকাকে ‘বাসযোগ্য’ করার প্রাথমিক উদ্যোগ হিসেবে আগামী ৬ মাসের মধ্যে আবাসিক অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত সব বাণিজ্যিক স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে মন্ত্রিপরিষদ। ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে ফুটপাতসহ সরকারী জমির অবৈধ দখলমুক্তির পাশাপাশি আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক ভবনের অবস্থানকে অন্যতম প্রতিবন্ধক হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। বিশ্বের সব দেশেই নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনার এলাকাভিত্তিক ব্যবহার সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু ঢাকার রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি কর্পোরেশনসহ গণপূর্ত অধিদফতর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে শুরু থেকে এ পর্যন্ত উদাসীনতা অথবা দায়িত্বে অবহেলা করে এসেছে। নানাবিধ সংকটে ইতিমধ্যে ঢাকা নগরী বিশ্বের অন্যতম নোংরা, বিশৃঙ্খল ও অনিরাপদ শহরের তালিকায় প্রথম সারিতে স্থান লাভ করেছে। এক সময়ের গার্ডেন সিটি এখন যানজট, জনজট, পানিজট, বায়ুদূষণ, পানিদূষণ ও শব্দদূষণে নাকাল হয়ে পড়েছে। আর এ সবের জন্য দায়ী মূলত অপরিকল্পিত নগরায়ন। যুগোপযোগী নগর পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে সরকার এবং নগর কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার কারণেই প্রায় দু’কোটি মানুষের রাজধানী নগরী এখন তার আবাসিক চরিত্র হারিয়ে একটি বাণিজ্যিক নগরীতে পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ শহরের আবাসিক এলাকা এবং বাণিজ্যিক এলাকার অবকাঠামো এবং পরিবেশগত সুযোগ-সুবিধার মধ্যে পার্থক্য না থাকায় দু’কোটি মানুষের শহরটি এখন বিশ্বের কাছে বসবাসের অযোগ্য নগরী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ঢাকাকে যানজট ও জনদুর্ভোগ মুক্ত করতে বিভিন্ন সময়ে রাজউক, সিটি কর্পোরেশনের নানাবিধ পরিকল্পনা এবং উদ্যোগও দেখা গেছে। ফুটপাত থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ, নদী, খাল ও সরকারী জমির অবৈধ দখল উচ্ছেদের নামে অনেক ‘ইঁদুর-বেড়াল খেলা’ও দেখা গেছে। বিপুল ঢাকঢোল পিটিয়ে বুলডোজার দিয়ে অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দেয়ার কিছুদিনের মধ্যে উচ্ছেদকৃত জমিতে পুনরায় নতুন দলবাজির ঘটনা অহরহই ঘটতে দেখা যাচ্ছে। এর মাঝখান দিয়ে উচ্ছেদের নামে একদিকে সরকারী টাকার শ্রাদ্ধ হচ্ছে, অন্যদিকে হাতবদলের মধ্য দিয়ে পুনরায় দখলবাজি ও নতুন স্থাপনা নির্মাণের মধ্যদিয়ে আরো কোটি কোটি টাকার অপচয় হচ্ছে। সরকারী জমি ও স্থাপনার অবৈধ দখল এবং আবাসিক ভবনের বাণিজ্যিক ব্যবহার বন্ধে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়া এবং উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি জনস্বার্থে সরকারী জমির সদ্ব্যবহার এবং সংরক্ষণে কোন কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় রাজউক, সিটি কর্পোরেশনকে দখলবাজদের সাথে অনবরত ইঁদুর বিড়াল খেলায় লিপ্ত থাকতে হচ্ছে। এমনকি শহরের আবাসিক চরিত্র ও বাসযোগ্য নাগরিক পরিবেশ বজায় রাখতে সরকারী বিভিন্ন সংস্থার কর্মকা-েও চরম সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা যায়। ঢাকা শহরকে সত্যিকার অর্থে আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে প্রথমেই উচ্ছেদের নামে ক্ষণস্থায়ী নাটকীয়তা বন্ধ করে সরকার জমি, রাস্তা ও ফুটপাতের সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে সিটি কর্পোরেশন, রাজউক, ওয়াসা, বিদ্যুৎ, টেলিকমিউনিকেশন, বিআরটিএসহ সব ইউটিলিটি সার্ভিসের কর্মকা-ের মধ্যে একটি কার্যকর সমন্বয় গড়ে তুলতে হবে।
ঢাকার দুই সিটি কর্র্পোরেশনের মেয়রদের দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রায় এক বছর অতিবাহিত হতে চলেছে। নির্বাচনের আগে সরকারী দলের সমর্থনপ্রাপ্ত মেয়রদ্বয় রাজধানী শহরটিকে আধুনিক, বাসযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ঢাকা উত্তরের মেয়র দীর্ঘদিন বেদখলে থাকা ট্রাকস্ট্যান্ড, ফুটপাত থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কঠোর অবস্থান গ্রহণের মধ্য দিয়ে নিজের সদিচ্ছার পরিচয় তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। তবে অর্ধশতাধিক বছরে অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে ওঠা ঢাকা বিশৃঙ্খল নগরায়ন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এটুকু উদ্যোগই যথেষ্ট নয়। ঢাকার বেশীরভাগ রাস্তার ফুটপাত এখনো পথচারীদের জন্য ব্যবহারযোগ্য হয়নি। এখনো প্রায় অর্ধেক রাস্তায় কোন ফুটপাতই নেই। গত কয়েক দশকে বেড়ে ওঠা নতুন শহরের বেশীরভাগ এলাকায় পরিকল্পিত স্যুয়ারেজ লাইনই নেই। শুধুমাত্র আবাসিক এলাকা থেকে বাণিজ্যিক ভবন সরিয়ে এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। বাসযোগ্য নগরী গড়ে তুলতে এটি অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আবাসিক এলাকা থেকে বাণিজ্যিক স্থাপনা সরিয়ে নিতে ৬ মাসের সময় বেঁধে দেয়া হলেও এ সময়ের মধ্যে লক্ষ্য অর্জন করতে হলে প্রয়োজনীয় সহায়তা এবং কার্যকর নজরদারীর ব্যবস্থা করতে হবে। আবাসিক ভবনের বাণিজ্যিক ব্যবহার বন্ধের পাশাপাশি বাণিজ্যিক এলাকা ও বাণিজ্যিক ভবনগুলোর নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থাসহ বিল্ডিং কোড মেনে চলার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ঢাকা থেকে বিভিন্ন শিল্প ও প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণের পাশাপাশি আবাসিক ভবনের বাণিজ্যিক ব্যবহার বন্ধ হলে ঢাকার ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ এবং বাড়িভাড়াসহ জীবনযাত্রার ব্যয় অনেকটা কমে আসবে বলে আশা করা যায়। এ জন্য সরকারকে কঠোর ভূমিকার মাধ্যমে সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন