দেশের উপকূল রক্ষী বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি সহ আধুনিকায়নের লক্ষ্যে খুলনা শিপইয়ার্ডে ২টি বড় মাপের টাগ এবং ১৩টি পন্টুন নির্মান কাজের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেছেন কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার এডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী এনবিপি, ওএসপি, বিসিজিএম, বিসিজিএমএল, এনডিসি, পিএসসি-বিএন। দুপুরে খুলনা শিপইয়ার্ডের রিভার সাইড পার্কে কিললে অনুষ্ঠানে কোস্ট গার্ডের ডিজি এসব নৌযানের নির্মান কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে বলেন, উপকূল রক্ষী বাহিনী দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সরকার কোস্ট গার্ডের আধুনিকায়ন সহ এ সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষে স্বল্প,মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী কর্মসূচী গ্রহন করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় এসব টাগ ও পন্টুন নির্মান করা হচ্ছে। আদুর ভবিষ্যতেই বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড একটি আন্তর্জাতিক মানের উপকূল রক্ষী বাহিনীতে পরিণত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
খুলনা শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডোর আনিসুর রহমান মোল্লা (এল) এনইউপি, পিএসসি-বিএন’এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সেনা বাহিনী, নৌ-বাহিনী ও কোস্ট গার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগন উপস্থিত ছিলেন। সম্পূর্ণ দেশীয় তহবিল থেকে প্রায় ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে এসব নৌযান নির্মিত হচ্ছে।
কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক বলেন, দেশের সমুদ্র সীমা নির্ধারিত হওয়ায় বাংলাদেশ এক বিশাল সমুদ্র এলাকার অধিকারী হবার পাশাপাশি আমাদের ‘ব্লু-ইকনমী’র অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের ভূমিকা ও গুরুত্ব যথাযথ বিবেচনায় নিয়েই সরকার এ আধাসামরিক বাহিনীটির উন্নয়নে ২০১৫ থেকে ’৩০ সাল পর্যন্ত স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইতোপূর্বে ৩টি ‘ইনশোর পেট্রোল ভেসেল’ ও ‘সেলফ প্রপেলড ফ্লোটিং ক্রেন’ এর নির্মাণ কাজ শুরুর পরে গত নভেম্বরে হাইস্পিড বোট-এর নির্মাণ শুরু হয়েছে খুলনা শিপইয়ার্ডে। চলতি বছরের মধ্যে এসব নৌযানের নির্মান কাজ সম্পন্ন হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব নৌযান কোস্ট গার্ডের সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এর ধারই ধারাবাহিকতায় আজ নতুন ২টি টাগবোট ছাড়াও ১৩টি পন্টুন নির্মান কাজের সূচনা হল ।
কোস্ট গার্ডের মহা পরিচালক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৃতপ্রায় খুলনা শিপইয়ার্ডকে ১৯৯৯সালের অক্টোবরে নৌ বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে যে দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন, আজ তা প্রমাণিত হয়েছে। খুলনা শিপইয়ার্ড আজ দেশের গর্ব। পাশাপাশি তিনি এ প্রতিষ্ঠান আজ দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ নির্মান শিল্পে যে অবদান রাখছে তাকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিয়ে যাবারও আহবান জানান। তিনি বলেন, কোরিয়ার ডাইউ শিপ বিল্ডার্স মাত্র ৬মাসে সাড়ে ৪লাখ টন ক্ষমতার অয়েল ট্যাংকার তৈরি করছে। আমরা ততটা না পারলেও আরো দ্রুত যেন নৌযান নির্মান করতে পারি সে বিষয়ে তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি কোষ্টগার্ড ও বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন খুলনা শিপইয়ার্ডের মধ্যে এসব নৌযান নির্মাণে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। নেদারল্যান্ডের টাগ ও ড্রেজার নির্মান প্রতিষ্ঠান ‘ডামেন’র নকশা ও যৌথ কারিগরি সহায়তায় সাড়ে ৩ হাজার টন লোডেড জাহাজ অপসারণ ছাড়াও ১শ’ মিটার দূরবর্তী নৌযানে অগ্নি নির্বাপণ এবং বন্দর ও পোতাশ্রয়ে দূষণ প্রতিরোধী স্প্রে নিক্ষেপণ ক্ষমতা সম্পন্ন এ দুটি টাগ বোট নির্মিত হচ্ছে।
প্রায় ১শ’ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩৫ ফুট প্রস্থ এসব টাগ বোটের ড্রাফট প্রায় ১৫ ফুট। ২ হাজার ৫০০ অশ্ব শক্তির দুটি করে আমেরিকার ‘ক্যাটার পিলার’ কোম্পানির মূল ইঞ্জিন সমৃদ্ধ এসব টাগ ৫৬৫ টন পানি অপসারণ করে ঘণ্টায় প্রায় ২৪ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম হবে। টাগগুলোতে ১৬ কিলোওয়াটের ২টি করে জেনারেটর ছাড়াও ইকোসাউন্ডার, নেভিগেশনাল রাডার ও জিপিএস সহ অত্যাধুনিক নৌচলাচল সরঞ্জাম সংযোজন করা হবে বলে জানা গেছে। এসব টাগ একসাথে প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার নৌপথ অতিক্রমে সক্ষম হবে। টানা জাহাজগুলো ‘স্কট টাগ’ হিসেবেও ব্যবহৃত হবে বলে জানা গেছে। প্রতিটি টাগে ১৬ জন করে জনবল নিয়োজিত থাকবে।
একইসাথে খুলনা শিপইয়ার্ডে প্রায় ১শ’ ফুট দৈর্ঘ্য, ৩০ ফুট প্রস্থ ও ৭ ফুট উচ্চতা স¤পন্ন আড়াই ফুট ড্রাফটের ১৩টি পন্টুন নির্মান কাজের সূচনা হচ্ছে আজ। এসব পন্টুনের প্রতিটিতে ১টি করে ২০ কেভিএ জেনারেটর ছাড়াও অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা থাকবে।
অনুষ্ঠানে খুলনা শিপইয়ার্ডের এমডি কমোডোর আনিসুর রহমান মোল্লা-বিএন বলেন, এ প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে সাবমেরিন টাগ সহ অত্যন্ত শক্তিশালী টাগ তৈরির মাধ্যমে যথেষ্ট সক্ষমতা অর্জন করেছে। এখন আমরা কোষ্টগার্ডের জন্য আরো শক্তিশালী টাগ নির্মান করতে যাচ্ছি। এরফলে অদূর ভবিষ্যতে দেশ টাগ নির্মাণে সক্ষমতা অর্জন করবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড দেশের সমৃদ্ধ সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় আমাদের নৌ সীমা সহ উপকূলীয় ও অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করছে। কোস্ট গার্ড ইতোমধ্যে দেশের উপকূলীয় এলাকা সহ বিভিন্ন নৌ-বন্দর এবং নৌপথে আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীকেও পরিণত হয়েছে। মৎস্য সম্পদ সহ নানা প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ আমাদের বিশাল সমুদ্র এলাকা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেশের বিশাল সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তা, সম্পদ আহরণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে কোষ্টগার্ড বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে। আর এসব কারণেই অত্যাধুনিক কোষ্টগার্ডের কোন বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড তার টহল নৌযানসমুহের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় এলাকায় নিয়মিত টহল প্রদান করছে। চোরাচালান ও মাদক বিরোধী অভিযান এবং ইলিশ সহ দেশের অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় মৎস্য সম্পদ রক্ষার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায়ও বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ইতোমধ্যে দেশের মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।
মন্তব্য করুন