বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

৮ উপজেলায় ২০২টি সেতু নির্মাণ - চাঁদপুরে অর্ধশত কোটি টাকার টেন্ডারবাজি

প্রকাশের সময় : ৬ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চাঁদপুর জেলা সংবাদদাতা : চাঁদপুরে অর্ধশত কোটি টাকার টেন্ডারবাজি হচ্ছে। একটি প্রভাবশালী মহল ২০২টি ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ কাজের দরপত্র কিনতে বাধা দিচ্ছে ঠিকাদারদের। অনেক ঠিকাদার জানেনই না এ টেন্ডার কাজের বিষয়ে।
কেউ যাতে ওই কাজের দরপত্র শিডিউল সংগ্রহ বা জমা দিতে না পারে সেজন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাহারা দিচ্ছে বহিরাগতরা। চাঁদপুর সদর উপজেলার পিআইও অফিস, উপজেলা প্রকৌশল অফিস ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা টেন্ডারবাজদের সহযোগী হিসেবে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে।
বিষয়টি জেনে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: শাহ কামাল, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো: আব্দুস সবুর ম-ল ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উদয়ন দেওয়ান। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ জেলা আ’লীগ শীর্ষ নেতৃবৃন্দও।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন তথা গ্রামীণ রাস্তায় চাঁদপুর জেলার ৮টি উপজেলার ২০২টি ব্রিজ/কালভার্ট নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে দেশের প্রতিটি উপজেলার জন্য এ দরপত্র একত্রে আহ্বান করা হয়।
দ্বিতীয় পর্যায়ের দরপত্রে চাঁদপুরের ৮ উপজেলার ২০২টি সেতু/কালভার্ট নির্মাণের আহ্বানকৃত দরপত্র বিক্রির শেষ তারিখ ৫ এপ্রিল। আজ দরপত্র দাখিল। দরপত্র আহ্বান এবং গ্রহণে সরকারের শতভাগ সদিচ্ছা থাকলেও একটি প্রভাবশালী মহলের বাধার মুখে সাধারণ ঠিকাদাররা সোমবার (৪ এপ্রিল) পর্যন্ত একটি দরপত্রও কিনতে পারেননি।
সরেজমিন দেখা গেছে, চাঁদপুর সদরের উল্লেখিত সেতু/কালভার্টের কাজের জন্য সাধারণ ঠিকাদার এমনকি সরকারি দলের অধিকাংশ ঠিকাদার দরপত্র শিডিউল ক্রয় করতে পারছেন না। কয়েকজন বিশেষ ঠিকাদার সিন্ডিকেট করে দরপত্র ক্রয় ও জমা দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন।
অন্য কেউ যাতে দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে না পারে সেজন্য চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে নিজস্ব পাহারাদার বসিয়েছেন ওইসব ঠিকাদার। এতে অন্য ঠিকাদাররা চরমভাবে ক্ষুব্ধ। ক্ষুব্ধ ঠিকাদাররা বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকেও জানিয়েছেন।
এই টেন্ডারবাজি নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দও চরমভাবে ক্ষুব্ধ। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেন্ডার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত করতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন সেখানে চাঁদপুর জেলা সদরে এই টেন্ডারবাজিতে বিব্রত দলীয় নেতৃবৃন্দ।
ক’দিন যাবৎ চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ এলাকায় পিআইও অফিস ঘিরে রেখেছে একটি প্রভাবশালী মহল। নিয়ম রক্ষার জন্য ওই অফিস থেকে বেশ কিছু দরপত্র জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠিয়ে ওই চক্র সব ক’টি কিনে নিয়ে গেছে। এমন চিত্র জেলার অধিকাংশ উপজেলাতেই।
মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলার সাধারণ ঠিকাদাররা জানেনই না যে, ওই অফিস থেকে কোটি কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। সেখানকার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তারা নিজেদের অফিসে তালা ঝুলিয়ে বাইরে নিরাপদ স্থানে বসে তাদের দরপত্র বিক্রি ও গ্রহণের কাগুজে আনুষ্ঠানিকতা সারছেন বলে জানা গেছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, চাঁদপুর সদর উপজেলার ১৬টি, শাহরাস্তিতে ২১টি, ফরিদগঞ্জে ১৯টি, হাইমচরে ৬টি, কচুয়ায় ১৫টি, মতলব দক্ষিণে ৩৯টি এবং মতলব উত্তরে ৬৬টি সেতু/কালভার্ট নির্মাণে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা ব্যয় হবে। আজ (মঙ্গলবার) এসব দরপত্র বিক্রির শেষ দিন। বুধবার দরপত্র গ্রহণের ৭ দিনের মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ শেষ করতে হবে। পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে কাজ শুরু করতে হবে। ঠিকাদার নিয়োগের ১ মাসের মধ্যে অর্থাৎ ৩০ মে’র মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করতে হবে।
দরপত্র বিক্রি ও গ্রহণে প্রভাবশালীদের অযাচিত হস্তক্ষেপ ও বাধার বিষয়টি চাঁদপুরের জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। সদরের বিষয়টি জানার পর তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে দরপত্র গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আজ তার কার্যালয়ে পুলিশের সহায়তা চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
চাঁদপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয়ের কেউ এ ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হননি। ২-৩ জন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সাথে আলাপকালে তারাও এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি।
এ বিষয়ে জানতে চাঁদপুরের বেশ কয়েকজন সাংবাদিক সদর উপজেলা পরিষদে যান। কিন্তু প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান করেও সংশ্লিষ্ট কাউকেই অফিসে পাওয়া যায়নি। পিয়নরা জানিয়েছে, ইউএনও সাহেব ডিসি অফিসে মিটিং করছেন। থানা ইঞ্জিনিয়ার অফিসে নেই। পিআইও অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকায় মাঝে মাঝে আসেন, আজ আসেননি। পিআইও অফিসের কর্মচারী আক্তার হোসেন ডিসি অফিসে গেছেন। অর্থাৎ দরপত্র শিডিউল ক্রয়-বিক্রির সাথে জড়িত কেউই উপস্থিত নেই। অথচ পাহারাদাররা ঠিকই সেখানে অবস্থান করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: শাহ কামাল সাংবাদিকদের বলেন, আমি বিষয়টি দেখার জন্য ডিসি সাহেবকে বলব। যাতে আগ্রহী ঠিকাদাররা দরপত্র ক্রয় করতে পারেন।
জেলা প্রশাসক মো: আব্দুস সবুর ম-ল বলেন, আমি যেহেতু বিষয়টি জেনেছি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করব।
চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উদয়ন দেওয়ান মুঠোফোনে বলেন, আমি এ ব্যাপারে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো। আগ্রহী সব ঠিকাদার যাতে দরপত্র ক্রয় করতে পারেন সে বিষয়টি নিশ্চিত করব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন