বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কোরীয় উপদ্বীপে আর যুদ্ধ হবে না

ঐতিহাসিক বৈঠক : যৌথ ঘোষণায় পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে অঙ্গীকার

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

দুই কোরিয়ার শীর্ষনেতাদের ঐতিহাসিক সম্মেলনের যৌথ ঘোষণায় পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে অঙ্গীকারের কথা জানানো হয়েছে। ঘোষণায় আরো বলা হয়েছে, কোরীয় উপদ্বীপে আর কোনও যুদ্ধ হবে না। ফলে শান্তির এক নতুন যুগের শুরু হবে। যুদ্ধ অবসানের জন্য যুদ্ধবিরতির ৬৫তম বার্ষিকীতে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করবে। গতকাল শুক্রবার দুই দেশের নেতারা এক ঐতিহাসিক বৈঠকে বসার পর এসব সিদ্ধান্ত আসেন। ১৯৫৩ সালে কোরীয় যুদ্ধ অবসানের ৬৫ বছর পর এবারই প্রথম কোনও উত্তর কোরীয় রাষ্ট্রনায়ক আলোচনার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ায় পৌঁছান। এর আগে দুই কোরিয়ার নেতারা দুবার আলোচনায় বসলেও দুবারই সেই আয়োজন হয়েছিল পিয়ংইয়ংয়ে। এবারের বৈঠকের পুরো পরিকল্পনা আগে থেকেই তৈরি করা হয়েছে। বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন দুই দেশের নেতারা। এরপর ঘোষণা আসে তাদের পক্ষ থেকে। মুন জায়ে ইন বলেন, ‘কিমের সাহস ও ইচ্ছাশক্তির প্রশংসা করি আমি।’
বিবৃতির চুম্বক অংশ তুলে ধরে গার্ডিয়ান। সংবাদমাধ্যমটি জানায়, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ঐতিহাসিক সম্মেলনে নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। দক্ষিণ কোরীয় প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন ও উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উন একমত হন, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে শান্তিচুক্তি আলোচনায় বৈঠকে বসবেন। এছাড়া জানানো হয়, মানবিক সঙ্কটগুলো সমাধানে জরুরি ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে দুই দেশ। কোরীয় উপদ্বীপে সৃষ্ট সামরিক উত্তেজনা প্রশমিত করার চেষ্টা করবেন তারা। সেই লক্ষ্যেই মে মাসেই দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা বৈঠক করবেন। আর ১ মে থেকে বন্ধ হবে লাউডস্পিকার ও লিফলেট বিতরণসহ প্রচারণা কার্যক্রম। বিবৃতিতে জানানো হয়, সামনের শরতেই পিয়ংইয়ং সফরে যাবেন মুন। কিয়াসংয়ে দুই দেশের এক লিয়াজোঁ অফিস স্থাপনে একমত হয়েছেন দুই নেতা।
খবরে বলা হয়েছে, যৌথ ঘোষণায় কোনও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা হয়নি। তবে উচ্চাকাক্সক্ষী লক্ষ্যের কথা বলা হয়েছে। এতে মূলত উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। কোরিয়া যুদ্ধে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া পরিবার থেকে শুরু যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনে গুরুত্ব পেয়েছে।
পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের বিষয়টি শুধু একটা অংশে বলা হয়েছে এবং তা সাধারণ ধারণা মাত্র। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘দক্ষিণ ও উত্তর নিশ্চিত করছে, কোরীয় উপদ্বীপকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত রাখার সাধারণ লক্ষ্যের বিষয়ে।’
আরেক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, ‘কোরীয় উপদ্বীপকে সম্পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে’ উভয় নেতা একমত হয়েছেন। এছাড়া যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে, কোরীয় উপদ্বীপে আর কোনও যুদ্ধ হবে না। ফলে শান্তির এক নতুন যুগের শুরু হবে। বিবিসি আরও জানায়, যুদ্ধ অবসানের জন্য যুদ্ধবিরতির ৬৫তম বার্ষিকীতে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করবে।
এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে উভয় নেতা কোরীয় যুদ্ধের অবসানের অঙ্গীকার করেছেন। কিম বলেন, আশা করি অতীতের ভুল আবার করব না আমরা। আমি আশা করি দুই কোরিয়ার মানুষের জন্য অবাধে উত্তর থেকে দক্ষিণে যাতায়াতের একটি সুযোগ। আমাদের ইতিহাসের দায় আমাদেরকেই নিতে হবে।
এর আগে শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টায় (বাংলাদেশ সময় ৬.৩০) দক্ষিণ কোরিয়ায় পৌঁছান উত্তর কোরিয়ার নেতা। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন তাকে স্বাগত জানান। পরে কিছুক্ষণের জন্য উত্তর কোরিয়ার সীমান্তে দাঁড়ান দুই নেতা। পরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে দক্ষিণ কোরিয়ার পিস হাউসে আলোচনায় বসেন তারা।
দক্ষিণ কোরিয়ায় ঠান্ডা নুডলস্ খাওয়ার হিড়িক
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন যুদ্ধবিরতি রেখা অতিক্রম করে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবেশ করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু তিনি আসল তোলপাড় সৃষ্টি করেছেন ঠান্ডা নুডলস্ নিয়ে একটি মন্তব্য দিয়ে।
দুই নেতার আনুষ্ঠানিক করমর্দনের পর হাল্কা কথা-বার্তা এবং হাস্যরসের সুযোগ ছিল। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে মি: কিম বলেন, তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন’র জন্য তার দেশের বিখ্যাত ঠান্ডা নুডলস্ নিয়ে এসেছেন।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, মি: কিম বলেন, আমি খবরের দিকে নজর রাখছিলাম এবং দেখলাম লোকজন খাবার-দাবার নিয়ে অনেক কথা বলছে। তাই আমি প্রেসিডেন্ট মুনের জন্য পিওংইয়াং থেকে ঠান্ডা নুডলস্ নিয়ে এসেছি।
আরেকটি অনুবাদে বলা হয়, তিনি বলেন, এই নুডলস্ তারা ‘বহু দূর’ থেকে নিয়ে এসেছেন ... কিন্তু তারপরই কৌতুক করে বলেন, আহা, আমাদের হয়তো এত দূর বলা উচিত না।
তার এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে বিশাল কোন ব্যাপার না হলেও, দক্ষিণ কোরিয়ায় পিওংইয়াং ঠান্ডা নুডলস্-এর জন্য এক রকম উন্মাদনা সৃষ্টি করেছে।
দক্ষিণের ঠান্ডা নুডলস্-এর দোকানের সামনে ক্রেতাদের লম্বা লাইন তৈরি হয়েছে এবং সামাজিক মাধ্যমে ‘পিওংইয়াং ঠান্ডা নুডলস’ নিয়ে কথা-বার্তা শীর্ষ বৈঠকের চেয়ে বেশি হচ্ছে।
বাজরা দিয়ে তৈরি ‘পিওংইয়াং ন্যাংমিয়াং’ ঠান্ডা নুডলস্ মি: কিম দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের জন্য নিয়ে এসেছেন এবং কোরিয়া হেরাল্ড পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী এই নাম টুইটারে ট্রেন্ডিং শব্দগুলোর শীর্ষে চলে যায়।
একজন টুইট করেছেন, ‘কিম জং-উন ঠান্ডা নুডলস্ নিয়ে জোক করেছেন। এখন সেটাই শীর্ষ বৈঠকের চেয়ে বেশি ট্রেন্ড করছে। হোয়াট দ্য ...”
আরেকজন বিস্ময় প্রকাশ করে টুইট করেছেন, দুই কোরিয়ার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ঘটনা ঘটছে আর দক্ষিণ কোরিয়ায় মাঠ-পর্যায়ে প্রতীকী প্রতিক্রিয়া হচ্ছে পিওংইয়াং ঠান্ডা নুডলস্ (#ন্যাংমিয়াং)-এর জন্য লম্বা লাইন। ভাবলাম বিষয়টি বেশ মজাদার।
এই উন্মাদনা সামাজিক মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ ছিল না। দক্ষিণ কোরিয়ার যেসব রেস্টুরেন্টের মেনুতে এই ঠান্ডা নুডলস্ রয়েছে, সেখানে লাইন দিয়ে পিওংইয়াং ন্যাংমিয়াং খাওয়ার হিড়িক পড়ে গেছে।
সাংজু হান ইন্সটাগ্রামে একটি সেলফি দিয়ে লিখেছেন, দুই কোরিয়ার শীর্ষ বৈঠক উদযাপন করার জন্য আমি লাঞ্চে ঠান্ডা নুডলস্ খেয়েছি।
আমি যখন আসি তখন এখানে লম্বা লাইন ছিল। রেস্টুরেন্টে বসার কোন জায়গা ছিল না। ঠান্ডা নুডলস্ খাওয়ার জন্য আমাকে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে। আমার বিশ্বাস, সবাই একই কারণে এই রেস্টুরেন্টে এসেছেন, মি: সাংজু বিবিসিকে বলেন। দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদ সংস্থা এক রিপোর্টে বলে, পূর্ব সিউলে অবস্থিত একটি রেস্টুরেন্টে এত ভিড় যে গাড়ি পার্ক করার জায়গা ছিল না। সিউলের আরেকটি রেস্টুরেন্টে অপেক্ষমাণ লোকজন তাদের নাম ডাকার সাথে সাথে চিৎকার করে বলে উঠছে, এবার পিওংইয়াং ন্যাংমিয়াং খাওয়া যাক, কিম জং-উনের সাথে খেতে হবে!
দুই কোরিয়ার যৌথ ঘোষণাকে স্বাগত জানালো চীন
ঐতিহাসিক আন্তঃকোরিয়া সম্মেলন শেষে দুই কোরিয়ার দেওয়া যৌথ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে চীন। গতকাল শুক্রবার ওই যৌথ ঘোষণায় কোরীয় উপদ্বীপকে সম্পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের অঙ্গীকার করা হয়েছে।
চীনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চীন আশা করে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো সংলাপের এই মুহূর্ত ধরে রাখবে এবং যৌথভাবে কোরীয় উপদ্বীপকে ঘিরে রাজনৈতিক সমাধানে এগিয়ে আসবে। এই লক্ষ্যে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে আগ্রহী বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সূত্র : বিবিসি, গার্ডিয়ান, এএফপি।
শীর্ষ বৈঠক বিষয়ে দু’দেশের মানুষের ভাবনা
আল জাজিরা জানায়, দক্ষিণ কোরিয়ার নেতা মুন জায়ে-ইনের সাথে উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জন উনের শীর্ষ বৈঠক ফলপ্রসূ হবে কিনা সে বিষয়েও অনেকে উদ্বিগ্ন। শীর্ষ বৈঠক সম্পর্কে সার্বিক মনোভাব ও আলোচনা সফল হবে কিনা, আল জাজিরা তা নিয়ে সীমান্তের দু’পারের মানুষের সাথে কথা বলে তাদের মনোভাব এখানে তুলে ধরেছে।
কিম জু-হং, নাপিত, দক্ষিণ কোরিয়াঃ আমি এ আলোচনাকে স্বাগত জানাই। আশা করি তা সফল হবে। দু’পক্ষই আগে যেসব ভুল করেছে দক্ষিণ কোরীয়রা তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। আর এ জন্যই তারা আলোচনায় বিশ্বাস করে না। তবে আমি করি।কিম-এর পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ অঙ্গীকার নিয়ে আমার সন্দেহ আছে, তবে আমি আশা করি তিনি তার কথা রাখবেন। আমি মনে করি, আপাতত দু’দেশ একীকরণের চিন্তা ত্যাগ করে দু’দেশ ব্যবস্থাতেই থাকা দরকার। পরে এ বিষয়ে অভিন্ন মনোভাব সৃষ্টি হলে ও এর জন্য সঠিক পরিস্থিতি দেখা দিলে দু’দেশ এক হতে পারে।
লি মিন-বোক, মানবাধিকার কর্মী, উত্তর কোরিয়াঃ আমি আলোচনা সমর্থন করি, যেভাবে তা করা হচ্ছে তাকে নয়। দক্ষিণ কোরিয়া প্রশাসনের মনোভাব নমনীয়। প্রেসিডেন্ট মুন বলেছেন, তিনি বিষয়টিকে কাচের গ্লাসের মত বিবেচনা করছেন। এর কোনো প্রয়োজন আছে কি? উত্তর কোরিয়া গন্ডি থেকে বেরিয়ে এসেছে, কারণ তার আর কোনো পথ নেই। এমনকি চীন ও রাশিয়াও তাকে চাপ দিচ্ছে। আমাদেরকে কিমের এ প্রমাণ দেখানো প্রয়োজন যে তিনি পারমাণবিক পরীক্ষা ত্যাগ করেছেন। ততক্ষণ পর্যন্ত অবরোধ অবশ্যই বজায় রাখতে হবে। শীর্ষ বৈঠকে অবরোধ তুলে নেয়া হলে ভুল হবে।
সন জিয়ং-উক, ছাত্র, দ-কোরিয়াঃ আগের চেয়ে দু’দেশের মধ্যে বেশি সংলাপ হচ্ছে, এ কারণে উত্তরের সাথে আমরা নিশ্চিতভাবে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে পারি। কিন্তু আমি মনে করি না যে উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক কর্মসূচি বাতিলের অঙ্গীকারে স্থির থাকবে, কারণ তাহলে ক্ষমতা ও শক্তি হ্রাস পাবে। শীর্ষ বৈঠকে প্রথম যা করা উচিত তা হল দক্ষিণের প্রতি উত্তরের সহিংস উস্কানি বন্ধ করা। তারা আমাদের আবার আক্রমণ করবে না এ প্রতিশ্রুতি লাভও গুরুত্বপূর্ণ।
চোই সুং-গুক, ওয়েবটুন শিল্পী, উ-কোরিয়া : কোণঠাসা হয়ে পড়া কিম বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। ট্রাম্প কবে পদত্যাগ করেন তার জন্য অপেক্ষা করছেন কিম। এ শীর্ষ বৈঠক কিমের জন্য সময় কেনা। যদি তিনি বলেনও যে তিনি পারমাণবিক পরীক্ষা চালাবেন না তাতে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র থাকার পরিবর্তন হবে না। আমি আনন্দিত যে শীর্ষ বৈঠকটি হচ্ছে। আমি মনে করি এ বৈঠক বিশ্বকে বোঝার সুযোগ দেবে যে কিম প্রশাসন কতটা অনমনীয় ও অসহযোগী। কিমের অধীন উত্তর কোরিয়ার কখনো পরিবর্তন হবে। উত্তর কোরিয়ার যা প্রয়োজন তা হল নেতৃত্বের পরিবর্তন।
সুহ হিয়ুং-লিম, মহিলা কনসালট্যান্ট, দ-কোরিয়া : এ শীর্ষ বৈঠকের সাফল্য নির্ভর করবে উভয়পক্ষ অপারমাণবিকীকরণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে কতটা গুরুত্ব প্রদান করতে সক্ষম হবে। উত্তর কোরিয়ার অঙ্গীকারের ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে, কারণ অতীতে তারা কোনো প্রতিশ্রুতি রাখেনি। তবে আমি মনে করি এবারের ব্যাপারটি অন্যরকম হবে। কিম জং-উন আলোচনার জন্য পানমুনজমের দিকে হেঁটে যাবেন। বহু লোক দু’কোরিয়ার একীকরণের আলোচনা করবে। আমি মনে করি তা অনেক আগাম চিন্তা। দু’কোরিয়া একীকরণের আগে বহু কিছু করতে হবে।
কিম ইয়ং- হোয়া, মানবাধিকার কর্মী, উ-কোরিয়া : উত্তর কোরিয়ার একজন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে আমি এ শীর্ষ বৈঠক ও আলোচনার সমালোচক। দক্ষিণ কোরিয়া সামান্য ত্যাগও স্বীকার করছে না, তারা জনগণের অধিকার দমন করছে। এ শীর্ষ বৈঠক যদি মানবিক সাহায্য চালু করে তাহলে ভালো। কিন্তু এটা কিম মানুষকে আশাবাদী করবে? উত্তর কোরিয়া এমন একটি দেশ যে মানবাধিকার লংঘন করে। এ আলোচনার মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট মুন উত্তর কোরিয়াকে একটি শান্তিবাদী দেশ হিসেবে প্রদর্শন করছেন।
কোহ সাং-বিয়ম, ডিজাইনার, দ-কোরিয়া : উত্তর কোরিয়া তার পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগ করবে বিনা সে ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে। সে বলেছে, পারমাণবিক পরীক্ষা বন্ধ করবে। এর অর্থ কিন্তু তার আর পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। শান্তিচুক্তি দিয়ে কি হবে যদি উত্তর কোরিয়া এখনো উস্কানি দেয় ও হামলা করে যেমন সে করেছিল কয়েক বছর আগে ইয়েনপিয়ং দ্বীপে? একটি কাগজে স্বাক্ষর করা একটি আনুষ্ঠানিকতা। যেটা জরুরি তা হচ্ছে সামরিক উত্তেজনা হ্রাস। সৈন্যরা যদি ভারি অস্ত্রসজ্জিত সীমান্ত প্রহরা দেয় তাহলে শান্তিচুক্তি অর্থহীন।
ক্যাপ্টেন ইয়ন, স্বপক্ষত্যাগী ও সাবেক লেফটেন্যান্ট, উ-কোরিয়া : উত্তর কোরিয়ার জন্য আলোচনাই একমাত্র ্পথ। দেশটি এখন পর্যন্ত চীনের উপর নির্ভরশীল , কিন্তু তা আর সম্ভব নয়। উত্তর কোরিয়া যে কারণে পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদন বন্ধ করেছে সম্ভবত এ কারণে যে কিম জনগণের চোখে আর বৈধতা লাভ করতে পারছেন না। দেশের অর্থনীতি মৃত, মানুষ অনাহারে ও দীর্ঘদিন দুর্দশার কবলে। আরেকটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে যে কিম অত্যন্ত ভালো একটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করেছে। শীর্ষ বৈঠক বা আলোচনা উত্তর কোরিয়ার রাজনৈতিক কাঠামো পরিবর্তন করবে না। কারণ, যদি সমাজতান্ত্রিকব্যবস্থার অবসান ঘটে , কিম জন-উং থাকবেন না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
এম সাইফুল ইসলাম ২৮ এপ্রিল, ২০১৮, ৪:০৬ এএম says : 0
দুই কোরিয়ার শীর্ষনেতাদেরকে অভিনন্দন জানাচ্ছি
Total Reply(0)
জহির উদ্দিন ২৮ এপ্রিল, ২০১৮, ৪:০৬ এএম says : 0
তাদের থেকে অনেকেরই অনেক কিছু শেখার আছে
Total Reply(0)
Ziaur Rahman Khan ২৮ এপ্রিল, ২০১৮, ১১:৫৩ এএম says : 0
Welcome to North & South Korea. It will be more better when we will see reunification between both part of Korea.
Total Reply(0)
Jasim Uddin ২৮ এপ্রিল, ২০১৮, ১১:৫৩ এএম says : 0
দারুন অবাস্মরণীয় এক মুহূর্তু!
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন