শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

গাজীপুরে ধানের শীষের নির্বাচনী প্রচারণায় ২০ দলীয় জোটের কেন্দ্রীয় নেতারা

মো. দেলোয়ার হোসেন, গাজীপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ২৮ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের নির্বাচনী প্রচারণায় গতকাল শুক্রবার ২০ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন। জোটপ্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত নিজ বাসভবনে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে নির্বাচনী প্রস্তুতি বিষয়ক আলোচনা করেন। ড্যাব মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এ. জেড এম. জাহিদ, অধ্যাপক ডা. মোস্তাক রহিম স্বপন, অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, ডা. এবিএম মূসা, ডা. এম. এ কামাল, ডা. মো. আবুল কালাম, ডা. মো. শফিকুল ইসলাম, ডা. মো. শরিফুল ইসলাম, ডা. মো. সালমান প্রমুখ চিকিৎসকরা হাসান সরকারের সাথে সকালে বৈঠক করেন। এর পর সকাল ১০ টায় তিনি নগরির খাইলকৈরে নিজের প্রতিষ্ঠিত বাদশা মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন আপন মার্কেটে পথসভার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। এর পর খাইলকৈর হিন্দু বাড়ি মোড়, জয় বাংলা রোডে বটতলা স্কুল মাঠ, এরাবিয়ান গার্মেন্টস, মৈরান, জাঝর, ডেগের চালা, ছয়দানা দীঘির পাড়, ইছর মার্কেট, সাক্রাউরি মুন্সি মার্কেটে দিনভর পথসভা ও গণসংযেগ করেন। এসময় গণসংযোগে আরো অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবিএম আলতাফ হোসেন চৌধুরী, নিতায় রায় চৌধুরী, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামান হায়দার, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক এমপি আনোয়ারা বেগম, আহসান হাবীব লিংকন, বিএনপির উপজাতীয় বিষয়ক সহ-সম্পাদক কর্ণেল অব. মানষ দেওয়ান, কেন্দ্র্রীয় নেতা কর্ণেল অব. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, মেজর অব. মিজানুর রহমান, গোপালপুর জেলা বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, মহিলাদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ন সম্পাদক হেলেনা জেরিন, জাগপার কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা সভাপতি প্রিন্সিপাল হুমায়ুন কবির, মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি খায়রুল আনাম প্রমুখ ২০ দলীয় জোটের নেতারা।
জয়বাংলা রোডে পথ সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটকে দুর্বল করার জন্য মহানগর জামায়াতের আমিরসহ ৪৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এটা পুলিশের নিরপেক্ষ আচরণ নয়। তিনি বলেন, দুই স্বৈরশাসক এক হয়ে গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করছে।
গাজীপুর মহানগর জামায়াত আমিরসহ গ্রেফতার ৪৫
গাজীপুর মহানগর জামায়াতের আমির প্রিন্সিপাল এস.এম সানাউল্লাসহ জামায়াতের ৪৫ জন নেতাকর্মীকে শুক্রবার সকালে নির্বাচনী প্রচারণা থেকে আটক করেছে পুলিশ। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ২০ দলীয় জোট মেয়রপ্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকারের পক্ষে পূবাইল বাদুন এলাকায় শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের নির্বাচনী সভা থেকে তাদেরকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করে। অধ্যক্ষ সানাউল্লাহ গাজীপুর সিটি নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসেবে মেয়রপদপ্রার্থী ছিলেন। ২০ দলীয় জোটের সিদ্ধান্তে অবশেষে তিনি গত ২৩ এপ্রিল নির্বাচন থেকে সরে দাড়িয়ে বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকারকে সমর্থন দেন এবং দলীয় নেতাকর্মীদেরকে সাথে নিয়ে হাসান সরকারের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে থাকার ঘোষণা দেন। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন গাজীপুর মহানগরের সভাপতি মাও. আজাহারুল ইসলাম মোল্লা, জেলা শাখার সভাপতি মো. মুজাহিদুল ইসলাম, গাজীপুর জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মো. আশরাফ আলী কাজলও রয়েছেন।
শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, গ্রেফতারকৃতরা জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী। তারা গাজীপুর নগরীতে নাশকতার পরিকল্পনা করছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ তাদেরকে আটক করে। এ সময় পুলিশ তাদের কাছ থেকে ৪টি ককটেল, ১৫ টি বিষ্ফোরক জাতীয় দ্রব্য ও কয়েকটি হাত বোমা, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের আত্মজীবনী নিয়ে লেখা বেশ কিছু জিহাদী বই তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করেছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নোত্তরে পুলিশ সুপার বলেন, গ্রেফতারকৃতরা নির্বাচন সংক্রান্ত কোন সভা করছিল না বরং গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন যাতে সুষ্ঠ ও সুন্দর হয় সেজন্যে নগরীর ৮ স্থানে পুলিশ চেকপোষ্ট বসানো হয়েছে এবং পুলিশ টহল বাড়ানো হয়েছে।
হাসান সরকারের নিন্দা ঃ এদিকে জামায়াত নেতাদেরকে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ২০ দলীয় জোট মেয়রপ্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। তিনি অবিলম্বে তাদেরকে মুক্তি দিয়ে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দাবী জানান। হাসান সরকার বলেন, জামায়াত নেতাদের গ্রেফতার নির্বাচন নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবী জানিয়ে তিনি বলেন, ধানের শীষের নির্বাচনী প্রচারণা থেকে তাদেরকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের যাতে কোন মিথ্যা বা সাজানো ঘটনায় মামলা না দেয়া হয় সেব্যাপারে তিনি আইন শৃংখলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। হাসান সরকার আরো বলেন, নির্বাচনের এখনো ১৮ দিন বাকি এখনই যদি সরকার তাদের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ২০ দলীয় নেতাকর্মীদের ধরপাকড় করে তবে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কখনোই তৈরি হবে না। বিএনপি প্রার্থীকে নেতাকর্মী ও সমর্থকশূন্য করার গভীর চক্রান্ত চলছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, এই গ্রেফতার সিটি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র এবং ভোটররা আতংকিত হবে এবং নির্বাচনী পরিবেশ বিনষ্ট হবে বলে আমি মনে করি। তিনি অভিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে ধানের শীষের পক্ষে পুনরায় প্রচার কাজে সুযোগ দেয়ার জন্য পুলিশের প্রতি আহবান জানান। এক পথায় হাসান সরকার বক্তৃতায় বলেন, গাজীপুরে যখনই বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়; তখনই ককটেল বা পেট্রল বোমা দিয়ে তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এমনকি তাকেও (হাসান সরকারকে) গ্রেফতার করে বিষ্ফোরক দ্রব্য দিয়ে চালান করা হয়। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, গাজীপুরের পুলিশ এতো বিস্ফারক দ্রব্য কোথায় থেকে পায়।
মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি খায়রুল হাসান জানান, শুক্রবার সকাল ১০ টায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৪১ নং ওয়ার্ডের ডেমরপাড়ায় বিশ দলীয় জোটের এক নির্বাচনী সভা থেকে গাজীপুর মহানগর জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ এস এম সানাউল্লাহসহ ৪৫ জনকে আটক করা হয়।
বিশ দলীয় জোটের প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের পক্ষে জামায়াতের সমর্থনের পর প্রতিপক্ষ পরাজয়ের ভয়ে ভীত হয়ে গ্রেফতার নির্যাতনের পথ বেছে নেয়। নির্বাচন চলাকালীন সময় এই গণগ্রেফতার প্রমাণ করে আসলে সরকার নিজেই সুষ্ঠু নির্বাচন চায়না। তারা গ্রেফতার নির্যাতন চালিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে নির্বাচনে জিততে চায়। এমন পরিস্থিতি নি:সন্দেহে সব প্রার্থীর জন্য লেভেল প্লেয়িং নয়।
তিনি বলেন, আমি এই অন্যায় গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং নগর জামায়াতের আমীরসহ গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীদের নি:শর্ত মুক্তির দাবী করছি।
তাৎক্ষনিক বিক্ষোভ মিছিল ঃ গাজীপুর মহানগর জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ এস এম সানাউল্লাহসহ ৪৫ জনকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়ে এবং তাদের মুক্তির দাবীতে শুক্রবার বিকেলে ঢাকা- ময়মনসিংহ সড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, নগর জামায়াতের সাংগঠনিক সেক্রেটারি মো: আফজাল হোসাইন, প্রচার সেক্রেটারি ইরফানুল হক, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আইয়ুবী।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন