শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

সম্পর্কের বরফ গলাতে ‘ঘরোয়া আলোচনায়’ মোদি-জিনপিং

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ এপ্রিল, ২০১৮, ১০:৫৫ এএম | আপডেট : ১০:৫৬ এএম, ২৮ এপ্রিল, ২০১৮

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে শুক্রবার ঘরোয়া আলোচনা হয়েছে।
এ দুই শীর্ষ নেতা ৪০ মিনিটের ঘরোয়া আলোচনায় অংশ নেন। আজ বেইজিংয়ে তাদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। সীমান্তবর্তী ডোকলাম ঘিরে দু’দেশের মধ্যে ৭২ দিনের উত্তেজনার মধ্যে মোদি দু’দিনের সফরে চীন গেছেন। আনন্দবাজার।

দু’দেশের সম্পর্কের বরফ গলাতে জিনপিংয়ের সঙ্গে মোদি মধ্য চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী ও চীনা নেতা মাও সেতুংয়ের প্রিয় শহর ইউহানের ঐতিহ্যবাহী মিউজিয়াম ঘুরে দেখেন। সেখানকার একটি হ্রদে তারা নৌকাবিহারে অংশ নেন।

নৌকাবিহারের আনন্দ উপভোগের ফাঁকে তারা দু’দেশের বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। এ আলাপ-আলোচনার কোনো সরকারি এজেন্ডাও আগে থেকে ঠিক করা ছিল না। আলোচনার ফাঁকে চীনা প্রেসিডেন্ট জিনপিংকে আগামী বছর ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সফরের শেষ দিন আজ বেইজিংয়ে মোদি ও জিনপিংয়ের আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। এ বৈঠকেরও কোনো এজেন্ডা নেই বলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আগেই জানানো হয়েছে।

এ বৈঠক হবে একান্তই ‘ঘরোয়া’ পরিবেশে। কোনো পূর্বনির্ধারিত আলোচ্যসূচি থাকবে না। মন্ত্রণালয়ের নির্দিষ্ট কোনো প্রতিনিধি দলের বৈঠকও হবে না। যৌথ বিবৃতি অথবা যৌথ সংবাদ সম্মেলন করা হবে না। এমনকি মোদি-জিনপিংয়ের বৈঠকের নোটও নেয়া হবে না। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, এ অভিনব খোলামেলা পরিবেশে চীনের সঙ্গে সম্পর্কে আস্থা বাড়ানোই হল মোদির উদ্দেশ্য। ওবর (ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড) প্রকল্পের অধীনে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর থেকে শুরু করে এনএসজিতে ভারতের অন্তর্ভুক্তিসহ সব বিষয় নিয়েই খোলামেলা আলোচনা করতে চায় দিল্লি।

ডোকলামের মতো ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেটা নিশ্চিত করা এ মুহূর্তে মোদি সরকারের অগ্রাধিকার। দু’দেশের মধ্যে যৌথ মহড়া ফের শুরু করার লক্ষ্যও রয়েছে।

মোদি ও জিনপিংয়ের বৈঠক নিয়ে বৃহস্পতিবার কলকাতায় চীনের কনসাল জেনারেল মা ঝানউ বলেন, ‘শীর্ষ নেতারা শুধু নন, সবাইকে ইতিবাচক পদক্ষেপের বার্তা দিতে হবে। সামাজিক মাধ্যমে ইতিবাচক বার্তা দিন।

আপনাদের মতামত অন্যদের প্রভাবিত করতে পারে।’ মমতা ব্যানার্জি চীন সফর নিয়েও আশাবাদী ঝানউ। তার মতে, দু’দেশের সম্পর্কোন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রীদের বেইজিং সফর গুরুত্বপূর্ণ। তাতে রাজ্যগুলোতে চীনা বিনিয়োগের পথ সুগম হবে।

উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও শিগগিরই চীন সফরে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

শুক্রবার দিল্লি থেকে রওনা হওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিক বিষয় থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক স্তরে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলব। কয়েক মাসে ভারত-চীন সম্পর্কের হাল কতটা ফিরল, তাও খতিয়ে দেখা হবে।

আলোচনা করব সেই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়েও।’ উহানে পৌঁছে মোদি বলেন, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় একবার তিনি চীনের এ এলাকা সফর করেছেন। সেই দিনের সব স্মৃতি আজ তার মনে পড়ছে।

উহানের ইস্ট লেকের পাশে যে বাংলোয় মোদি উঠেছেন, সেখানে মাও সেতুং অবকাশ যাপন করতেন। ১৯৬৬ সালে রটে গিয়েছিল তিনি গুরুতর অসুস্থ।

কিন্তু হঠাৎ তাকে এখানে দেখা যায়। লেকটিতে তিনি সাঁতারও কেটেছিলেন। এ শহর থেকে শুরু হয়েছিল চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব। উহানে বার্ষিক সাঁতার উৎসব আজও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ‘এ বৈঠকের যে ঘরোয়া আঙ্গিক, তার সঙ্গে এ নিঃসর্গ খাপ খায়। দিল্লির চীনা রাষ্ট্রদূত লুও ঝাংহুইয়ের বাড়িও উহানে।

একটি ভিডিও বার্তায় তিনি জানান, ‘আমার নিজের শহরে এই যে ঐতিহাসিক বৈঠকটি হচ্ছে, এটা আমারও গর্বের বিষয়।’ জানা গেছে, এ বৈঠকের তাগিদটা কিন্তু বেশি দিল্লির। লোকসভা ভোটের আগে ডোকলামের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে বেকায়দায় পড়তে চায় না মোদি সরকার। পাশাপাশি বাণিজ্য প্রশ্নে আমেরিকা ও ইউরোপের রক্ষণশীলতার মধ্যে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের নতুন দরজা খুলতে পারলে দিল্লি লাভবান হবে।

আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে ভারতের বিশাল বাজারকে ধরতে পারাটাও জিনপিংয়ের অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ছে। ভারত সরকার বেশ কিছু ক্ষেত্রে চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক না বসিয়েও আমদানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম বাধা তৈরি করছে বলে অভিযোগ বেজিংয়ের। এ বিষয়ে জোর দেবেন চীনা প্রেসিডেন্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন