শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

শ্রমিকের অধিকার ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা

আশরাফুল আলম | প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিশ্বের শ্রমিক মেহনতি, খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের দীর্ঘ সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের ইতিহাসকে মনে করিয়ে দিতে এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নতুন করে উজ্জীবিত হওয়ার প্রত্যয় নিয়ে প্রতি বছরই ১লা মে দিনটি শ্রমিক দিবস হিসেবে পালিত হয়ে থাকে। ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেট স্কোয়ারে মূলতঃ আট ঘণ্টা শ্রমের দাবিতে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে যে রক্তাক্ত ইতিহাসের সূত্রপাত হয়েছিল তাকে স্মরণ করে প্রথমে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো পরবর্তীতে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ ১লা মে শ্রমিক সংহতি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
বিশ্ব সভ্যতার বিনির্মাণে শ্রমিক মেহনতি মানুষের ভূমিকা ব্যাপক। আজ আমরা বিশ্বব্যাপী যে সকল উন্নতি ও অগ্রগতি, বিলাস, চাকচিক্য, জাকজমকতা দেখতে পাই তার সব কিছুরই পিছনে আছে কোন না কোন শ্রমিকের ব্যক্তিগত বা সম্মিলিত প্রচেষ্টার ঘাম ঝরানো স্মৃতিচিহ্ন। উৎপাদনের চারটি মূল উপাদানের অন্যতম প্রধান উপাদান হলো শ্রম। জ্ঞান বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রয়োগ ও আধুনিক যন্ত্রপাতির আবিষ্কারের ফলে উৎপাদন ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয় ও সহজতর হলেও শ্রমিকবিহীন উৎপাদন কখনও কল্পনা করা যায় না। সৃষ্টির শুরু থেকেই উৎপাদন ব্যবস্থায় এই শ্রমনির্ভরতা চলে আসছে। কিন্তু যারা যুগে যুগে এই শ্রম দিয়েছে, ঘাম ঝরিয়েছে তারা শ্রমের ফসল ভোগ করতে পারেনি কোন কালেই। সম্পদের মালিকানাকে কেন্দ্র করে যে সমাজ বিকাশ লাভ করেছে সেখানে দুটো আলাদা শ্রেণির অস্তিত্ব ছিল দৃশ্যমান অর্থাৎ একটা মালিক শ্রেণি ও অন্যটি শ্রমিক বা দাস শ্রেণি। অতঃপর সামন্তবাদী সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠলে সেখানেও এই দুটি বিপরীতধর্মী শ্রেণি একইভাবে বিরাজমান লক্ষ করা যায়। একটা শ্রেণি ভূমির মালিক আরেকটি শ্রেণি কৃষিশ্রমিক বা ভূমিদাসে পরিণত হয়। এখানে কৃষিশ্রমিক শ্রেণির বৈশিষ্ট্য বা জীবনযাপনে পূর্বের দাসদের থেকে দৃশ্যমান কোন ইতিবাচক পার্থক্য লক্ষ করা যায়নি। শুধুমাত্র তারা পূর্বের দাস থেকে ভূমিদাসে রূপান্তরিত হয়েছে মাত্র। এসব কৃষিশ্রমিকের কোন স্বাধীনতা ছিল না, ছিল না ন্যূনতম মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের সুযোগ। তাদের কাজ ছিল রাজা বা সামন্তপ্রভূদের (ইধৎড়হং/ঘড়নষবং) সেবায় জীবন উৎসর্গ করা। অষ্টাদশ শতকে শিল্পবিপ্লব বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোয় এক বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসে। উৎপাদন ব্যবস্থায় আসে আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞান ও যন্ত্রের প্রয়োগ। ইংল্যান্ডকেন্দ্রিক এই শিল্পবিপ্লব শুরু হলেও অল্প দিনেই এর ঢেউ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক হারে শিল্পায়ন হতে থাকে। এর ফলে উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পায়, অর্থনীতির পালে হাওয়া লাগে, চিন্তা-চেতনা ও জীবন যাত্রায় আসে ব্যাপক পরিবর্তন। শিল্পবিপ্লবের পেট থেকে জন্ম নেয়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুঁজিবাদী ব্যবস্থা হিসেবে বিকশিত হতে থাকে। কিন্তু এই পরিবর্তনের ছোঁয়া যেন কালোমেঘ হয়ে শ্রমিকের জীবনকে সেই তিমির অন্ধকারেই ঠেলে দেয়। এই পরিবর্তন বা ব্যবস্থায় শ্রমিক আবারও পরিণত হয় এক ধরনের দাসে বা শ্রমদাসে। মালিক বা পুঁজিপতিগণ অন্যান্য উপকরণের মতই শ্রমিককে তাদের মুনাফা লাভের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে থাকে। শ্রমিকের জীবনমান পূর্বে যে স্তরে ছিল সেই স্তরেই যেন আটকা পড়ে। যুগ যুগ ধরে এভাবে উৎপাদন ব্যবস্থায় বিভিন্নমুখি পরিবর্তন সাধিত হলেও শ্রমিকশ্রেণির অবস্থার কোন কাঙ্খিত পরিবর্তন সাধিত হয়নি। উপরন্তু তাদের কর্মঘণ্টাও সুনির্দিষ্ট ছিল না। কোন কোন ক্ষেত্রে ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত হাড় ভাঙা শ্রম দিতে হয়েছে। একটা সময় দেশে দেশে তারা অধিকার প্রতিষ্ঠা ও আট ঘণ্টা শ্রমের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে এবং বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করে। কাজের চাপে নিস্পেষিত হয়ে মরার চেয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অত্মত্যাগ করাকে অনেক শ্রমিকই শ্রেয় মনে করে। অবশেষে ১৮৮৬ সালে ১ মে শিকাগো শহরের হে মার্কেট স্কোয়ারে সাড়ে তিন লাখের মত শ্রমিক ৮ ঘন্টা শ্রমের দাবিতে একত্রিত হয়। শিকাগো যেন শ্রমিকের মিলন মেলায় পরিণত হয়। ৩ মে ম্যাককর্মিক রিপার নামক কারখানায় মালিক শ্রেণির সমর্থন পুষ্ট শাসক গোষ্ঠির লেলিয়ে দেয়া পুলিশের গুলিতে ৬ জন শ্রমিকের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়। ফলে আন্দোলনের দাবানল দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। ৪ মে হে মার্কেট স্কোয়ারে আবারও শ্রমিক সমাবেশের ডাক দেয়া হয়। সেদিনের বৃষ্টি উপেক্ষা করে দলে দলে শ্রমিক যোগ দেয় সেই সমাবেশে। সমাবেশের শেষ পর্যায়ে পুলিশ শ্রমিক সমাবেশে নির্বিচারে গুলি চালায়। শ্রমিকের রক্তে রঞ্জিত হয় হে মার্কেট স্কোয়ার। পুলিশ-শ্রমিক চলমান সংঘর্ষের এক পর্যায়ে বোমা বিষ্ফোরণে ৮ জন পুলিশ মারা যায়। যে কারণে পুলিশ আরো মারমুখি হয়ে পড়ে। পুলিশের গুলিতে মারা যায় অসংখ্য শ্রমিক। বহু শ্রমিককে কারারুদ্ধ করা হয়। শ্রমিক আন্দোলনে নেতৃত্বে দেয়ার অভিযোগে বেশ কয়েকজন নেতৃস্থানীয় শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে শ্রমিক নেতা পার্সন্স, স্পাইজ, জজ এঞ্জেল ও ফিসারকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।
নানা প্রহসনের পর অবশেষে শ্রমিকদের দাবির কাছে সরকার নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। পরিশেষে যুক্তরাষ্ট্রে ‘ওয়াল্স্ হিভেল অ্যাক্ট’ এবং ‘ফেয়ার লেবার স্ট্যান্ডার্ড অ্যাক্ট’ প্রণীত হয়- যার মাধ্যমে ৮ ঘণ্টা শ্রমের দাবি স্বীকৃতি পায়। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কনভেনশনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের ৮ ঘণ্টা কর্মের অধিকারকে স্বীকৃতি প্রদান করে।
তবে যে চেতনাকে ধারণ করে, যে অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রক্তাক্ত ঘটনা ঘটেছিল ও তার স্মরণে যে দিবসটি পালন করা হয় তার কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে সে প্রশ্ন আজও রয়ে গেছে। দেশে দেশে শ্রমিক শোষণ, নিপীড়ন আজও অব্যাহত আছে। অনেক দেশেই শ্রমিকদের ন্যূনতম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, ১০ ঘণ্টার বেশি সময় কাজ করেও বিশ্বের ৮০ ভাগ শ্রমিক দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করছে। ১.২ বিলিয়ন শ্রমিকের আয় ১ ডলার ৫০ সেন্টের নিচে। ৭৫ ভাগ শ্রমিকের কোন সামাজিক নিরাপত্তা নেই। নানা অজুহাতে ২০২ মিলিয়ন শ্রমিক ২০১৩ সালে চাকরিচ্যুত হয় যা ২০১২ সাল থেকে ৫ মিলিয়ন বেশি। এখনও অনেক ক্ষেত্রে তাদের মজুরি নির্ধারণ করা হয় সাব্সিসটেন্স থিওরী (ঝঁনংরংঃবহপব ঞযবড়ৎু ড়ভ ডধমবং) অনুসারে। অর্থাৎ কোন রকমে বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু। এর চেয়ে বেশিও নয় কমও নয়। কোন রকমে বেঁচে থাকাই যেন শ্রমিক শ্রেণির বড় পাওয়া। ভালভাবে বেঁচে থাকার কোন অধিকার তাদের নেই।
বাংলাদেশেও মে দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালিত হয়ে আসছে, যা কিছুটা সন্তুষ্টির বিষয়। কিন্তু এ কথাও সত্য যে, ব্যাপক সংখ্যক শ্রমিক মেহনতি খেটে খাওয়া মানুষের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামক যে রাষ্ট্রের জন্ম, স্বাধীনতার এত বছর পরও প্রকৃত অর্থে সেই শ্রমিকশ্রেণির মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ তেমন কোন পরিবর্তন সাধিত হয়নি বলে মনে করা হয়। এখানে শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক জোরদার হয়নি কাক্সিক্ষত মাত্রায় ও শ্রমিকদের জীবন যাত্রার মানে লাগেনি সুখ-স্বচ্ছন্দ্যের ছোঁয়া। শ্রমিকশ্রেণি যেন আলাদা কোন শ্রেণি হয়ে মালিক শ্রেণির করুণায় বেঁচে আছে। অনেক ক্ষেত্রেই তাদের ন্যূনতম অধিকারটুকু প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বিশেষ করে যে মূল দাবিকে কেন্দ্র করে মে দিবসের ঘটনা ঘটেছিল সেই ৮ ঘণ্টা কাজের অধিকার আজও সর্বক্ষেত্রে পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। যদিও বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুসারে একজন শ্রমিকের ৮ ঘণ্টা শ্রমের কথা বলা হয়েছে। তবে এখানেও যেন এক ধরনের ফাঁক বা দুর্বলতা রয়ে গেছে। শ্রম আইনের ১০০ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট বলা আছে, ‘কোন প্রাপ্ত বয়স্ক শ্রমিক কোন প্রতিষ্ঠানে ৮ ঘণ্টার অধিক সময় কাজ করিবেন না বা তাহাকে দিয়ে কাজ করানো যাইবে না।’ কিন্তু এই অনুচ্ছেদই শেষ কথা নয়। এর সাথে শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে, আর তা হলো, ‘১০৮ নং অনুচ্ছেদের বিধান সাপেক্ষে একজন শ্রমিক ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করিতে পারিবেন।’ এক্ষেত্রে অবশ্য অতিরিক্ত কাজের জন্য দ্বিগুণ হারে ভাতা প্রদানের কথা বলা হয়েছে। আর গরমিলটা এখানেই। কেননা ৮ ঘণ্টা কাজ করে একজন শ্রমিক যে মজুরী পায় তা দিয়ে তার সংসার চলে না। মজুরী এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে যে, মালিক না চাইলেও শ্রমিক চাইবেন অতিরিক্ত সময় কাজ করতে। কেননা অতিরিক্ত সময় কাজ না করলে মাস শেষে যে মজুরী পাবেন তাতে তার সারামাসের সংসার খরচ বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। একজন শ্রমিক যদি ৮ ঘণ্টা পরিশ্রম করে যে মজুরী পাবেন তাতে যদি সে মোটামুটিভাবে তার সংসার চালাতে পারেন তাহলে অনেক শ্রমিক আছে যাদের দিয়ে অতিরিক্ত সময় কাজ করানো সম্ভব নয়। বলা হয়েছে, ‘বিশেষ বিশেষ শিল্পের ক্ষেত্রে সরকার লিখিত আদেশ দ্বারা জনস্বার্থ বা অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে এই শর্ত (অনুচ্ছেদ-১০০) শিথিল করিতে অথবা উহা হইতে এককালীন সর্বোচ্চ ৬ মাস মেয়াদের জন্য অব্যাহতি দিতে পারিবে অর্থাৎ শ্রমিককে দিয়ে অতিরিক্ত সময় কাজ করাতে পারিবেন।’ এই শর্ত যতটা না জনস্বার্থ বা অর্থনৈতিক স্বার্থে তার চেয়ে বেশি মালিকের স্বার্থে- এটা বেশ স্পষ্ট। মূলতঃ কম মজুরী ও প্রয়োজনের চেয়ে কম সংখ্যক শ্রমিক নিয়োগ দান- এই দুটি কারণে শ্রমিকের ৮ ঘণ্টা কর্ম সময় আজও পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। আর এই সুযোগটা মালিকদের জন্য করে দেয়া হয়েছে আইনগত কাঠামোর মধ্য দিয়েই। উপরন্তু, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, মালিক শ্রেণি শ্রম আইন বা সরকারি কোন নির্দেশনা মানেন না। শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি, গ্রাচুইটি, ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার ইত্যাদি আইনে স্বীকৃত হলেও বাস্তবে অনেক প্রতিষ্ঠানে এ সবের প্রয়োগ নেই। অস্বাস্থ্যকর ও অনুন্নত কর্ম পরিবেশ, নানা অজুহাতে শ্রমিক ছাটাই, মজুরী কর্তন, হয়রানি, যৌন নিপীড়ন তো আছেই। এ রকম চিত্র বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক অনেক খাতেই চোখে পড়বে। বাংলাদেশে প্রায় ৪২টি আনুষ্ঠানিক খাত রয়েছে যেখানে মাত্র ১৪ শতাংশ শ্রমিক কাজ করছে। এর মধ্যে গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রি সর্ববৃহৎ খাত, যেখানে আনুষ্ঠানিক খাতের অর্ধেক শ্রমিক কাজ করে যা প্রায় ৪২ লক্ষ। এই ১৪ শতাংশ শ্রমিকের মজুরী এবং অন্যান্য ব্যবস্থাবলী সম্পর্কে সরকারের এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ লক্ষ করা যায় বা নিয়ন্ত্রণে থাকার পরও এ অবস্থা।
অন্যদিকে অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অবস্থা তো আরও শোচনীয়। বাংলাদেশে ৬ কোটি শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে ৮৬ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক যারা শ্রম আইনের আওতাভুক্ত নয়। তারা বিভিন্নভাবে বেঁচে থাকার তাগিদে নীরবে তাদের শ্রম দিয়ে যাচ্ছে, তারা বিভিন্নভাবে হচ্ছে শোষিত, বঞ্চিত, যার খবর ক’জনইবা রাখে। তাদের কর্মঘণ্টা, বেতন কাঠামো বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা আজও সুনির্দিষ্ট বা স্পষ্ট নয়। তাদের সব কিছুই মালিকের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর নির্ভরশীল।
কাজেই বলা যায়, আমাদের দেশে শ্রমিকদের অধিকার আজও সুপ্রতিষ্ঠিত নয়। স্বাধীন শ্রম অধিকার চর্চার প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগের ক্ষেত্র এখনও তৈরি হয়নি। অথচ প্রত্যেক শ্রমিক ন্যায্য মজুরী পেলে, উন্নত জীবন পেলে, কর্মনিরাপত্তা নিশ্চিত হলে একদিকে যেমন শ্রমিক অসন্তোষ কমবে, তেমনি উৎপাদনশীলতাও বৃদ্ধি পাবে, গতিশীল হবে দেশের অর্থনীতি, যার সুফল সবাই ভোগ করবে। এ ব্যাপারে সরকার, মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে, শ্রমিক বাঁচলে দেশ বাঁচবে, দেশ বাঁচলে সবাই বাঁচবে।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশন্স অ্যান্ড লেবার স্টাডিস প্রোগ্রাম, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
ডাঃ গোলাম মোস্তফা ৬ মে, ২০১৮, ২:২৫ পিএম says : 0
শ্রমিকরাই দেশের গৌরব হবার কথা। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কথা যদি বাদ দেই তাহলে কোন উন্নয়ন ই সম্ভব নয়। যারা শ্রমজীবি মানুষের অধিকারের কথা বলে তারাই প্রকৃত দেশ প্রেমিক,তাঁরাই দেশের গৌরর,তাঁরাই চাষা।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন