মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : এবার বৈশাখ মাসের শুরু থেকেই ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে বগুড়ায় বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড় ও শিলা বৃষ্টি এইভাবে অব্যাহত থাকলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার আশঙ্কা করছে চাষিরা। বগুড়ার মাঠে মাঠে কাঁচা, আধাপাকা ও পাকাধান নিয়ে উৎকন্ঠায় আতঙ্কে আছে কৃষকেরা। কেউ ধান কাটছেন, কেউ আবার ঝড়, বৃষ্টি ও শিলা বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা কাঁদছে। বৃষ্টির পানিতে ফসল তলিয়ে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া জেলার ১২ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৭০ মেট্রিক টন। তবে বোরো মৌসুমের শেষ প্রান্তিকের টানা বর্ষণে জমির পাকা, আধাপাকা ধান গাছ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এছাড়া ঝড়ো বাতাসে বিভিন্ন এলাকায় ধান গাছ মাটির সাথে মিশে গেছে। ধান মাটিতে শুয়ে পড়ায় কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছে। অনেকে আবার তড়িঘড়ি করে জমির কাঁচা-পাকা ধান কাটতে শুরু করেছে। বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকের স্বপ্ন যেন গুড়েবালির কারণ হয়েছে কালবৈশাখের ঝড়। ধান পরিপুষ্ট হয়ে পাকার আগেই মাটিতে পড়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে বাধ্য হয়েই ধান কাটতে হচ্ছে কৃষকদের। সময়ের আগে ধান কাটার ফলে স্বাভাবিকভাবে ফলন কম হবে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে মাঠে ধান কাটা শ্রমিকেরও সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে বেশি দামে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে কৃষকদের। নন্দীগ্রাম উপজেলা সদরের দামগাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল ওয়াহাব ও কৈগাড়ী গ্রামের ওমর আলী জানান, এ উপজেলার বেশির ভাগ জমিতে আগাম জাতের ধানের চাষ করা হয়েছে। ধান কাটতে এখনো ১০-১৫ দিন বাকি। বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে ধানগাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে বহু জায়গায়। এতে ফলন বিপর্যয়সহ প্রতি বিঘায় প্রায় চার-পাঁচ মণ ধান কম হবে বলে তাদের ধারণা। নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিসার মো: মুশিদুল হক বলেন, ঝড়ো বাতাসের কারণে কিছু পরিমান জমিতে বোরো ধান হেলে পড়েছে। তবে এত আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। আগাম সতর্কতা হিসেবে যেসব জমির ফসল শতকরা ৮০ ভাগ পেকে গেছে, সেগুলো কেটে নেয়ার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
পশ্চিম বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায় এবার বিপুল পরিমাণে বোরো ফসলের জমিতে প্রবল ঝড়ে ক্ষেতে থাকা কাঁচা ও আধাপাকা ধানগাছ শুয়ে পড়েছে মাটিতে। এতে করে ফলন বিপর্যয় ঘটবে বলে মন্তব্য করেছে কৃষকরা। শিলাবৃষ্টিতে পূর্ব বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটশেরপুর, সদর ইউনিয়ন, নারচী ও পৌরসভাসহ কাজলা, কর্নিবাড়ী, ফুলবাড়ী ও বোহাইল ইউনিয়নের ৩শ’১ হেক্টর ইরি-বোরো ধান, ২১ হেক্টর পাট ও দেড় হেক্টর জমির সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসার শাহাদুজ্জামান বলেন, ৬শ’১৫ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। টাকার অংকে এই উপজেলায় প্রায় চার কোটি ৬২ লাখ টাকার ফসল সম্পুর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রতুল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘এখন বোরো ধান পাকা ও শক্ত অবস্থায় আছে। সে কারণে গড়পড়তায় স্বাভাবিক ঝড় বৃষ্টিতে ফলনে তেমন হেরফের হবেনা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন