শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

নৌকা-ধানের শীষ প্রচারণার লড়াই

খুলনা ও গাজীপুর সিটিতে চলছে নির্বাচনী উৎসব

| প্রকাশের সময় : ৪ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

১৫ মে গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। ভোট গ্রহণের বাকি আর মাত্র ১১ দিন। মধ্যবৈশাখের দিনে এই রোদ এই বৃষ্টি। কখনো প্রখর রোদ পরক্ষণেই কালবৈশাখী ঝড়ো হাওয়ায় তুমুল বৃষ্টি। প্রকৃতির এই খেলার মধ্যেই দুই সিটিতে চলছে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের নির্বাচনী প্রচারণার উৎসব। এই উৎসবে সামিল হয়েছেন প্রার্থী ভোটার সবাই। গানে গানে, ¯েøাগানে ¯েøাগানে মুখরিত গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের বিস্তীর্ণ এলাকা। যেদিকে চোখ যায শুধু পোষ্টার আর পোষ্টার। পাড়ায়-মহল্লায় নৌকা আর ধানের শীষের প্রার্থীদের প্রচারণা চলছে প্রতিযোগিতার মনোভাবে সমানতালে। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও ভোট চেয়ে দুই সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চক্কর কাটছে দুই প্রার্থীর প্রচারযান। কাদা মাড়িয়ে, পানিতে ভিজে প্রার্থী ও দুই দলের নেতারা যাচ্ছেন ভোটারদের দুয়ারে দরজায় দরজায়। শুধু কী মেয়র প্রার্থী? কমিশনার, সংরক্ষিত মহিলা কমিশনার প্রার্থীরাও ছুঁটছেন ভোট ভিক্ষায় ভোটারদের ঘরে ঘরে। দুই সিটিতেই মেয়র প্রার্থীরা নির্বাচনী ইসতেহার প্রকাশ করেছেন। ইসতেহারে বইছে প্রতিশ্রæতি আর প্রতিশ্রæতির বন্যা। যদিও গতকাল সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সংবাদ সম্মেলন করে এই বার্তা দিয়েছে যে দুই সিটির নির্বাচন বর্তমান কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনারের জন্য ‘ইমেজ সৃষ্টির’ সুবর্ণ সুযোগ। তবে ভোটাররা আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন। সুজন এমন শঙ্কা প্রকাশ করলেও ভোটারদের মধ্যে যে উৎসব চলছে তাকে বোঝা যায় এ দেশের মানুষ ভোটকে উৎসাহ হিসেবেই গ্রহণ করে। গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী প্রচারণার কিছু খÐচিত্র তুলে ধরা হলো।

আ.লীগকে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেবো না মঞ্জু
বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে চাইছে খালেক
আবু হেনা মুক্তি
গণগ্রেফতার অব্যাহত থাকলে আগামী ৬ মে খুলনায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) অনুষ্ঠান বয়কটের হুমকি দিয়েছেন খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (কেসিসি) বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর কেডিঘোষ রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনকালে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় তিনি নির্বাচনের মাঠ না ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘প্রয়োজনে মাথায় কাফনের কাপড় পরে নেতা-কর্মীরা জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনবে। কোনোভাবেই আওয়ামী লীগকে ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না।’ নজরুল ইসলাম মঞ্জু অভিযোগ করেন, গত বুধবার রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা পর্যন্ত নগরজুড়ে পুলিশ ও ডিবির সদস্যরা ধানের শীষের নির্বাচনী প্রচারণায় নিয়োজিত বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান মুরাদ ও যুবদল নেতা মাহবুব হাসান পিয়ারুসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ২১ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। এ ছাড়া অসংখ্য নেতা-কর্মীর বাড়িতে তল্লাশির নামে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। নির্বাচনের কাজে যুক্ত থাকলে পরিণতি ভয়াবহ হবে বলেও ডিবি পুলিশ হুমকি দিয়েছে।
মঞ্জু অভিযোগ করে বলেন, ‘বুধবার রাত ৮টা থেকে সারা রাত পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাÐব চালিয়েছে। সারা রাত আমাদের নেতা-কর্মীরা নির্ঘুম কাটিয়েছেন। আমি রাতেই রিটার্নিং অফিসার ও পুলিশ কমিশনারকে ফোন দিয়েছি। কিন্তু কেউ আমার ফোন ধরেননি। ভয়ার্তভাবে আমার নেতা-কর্মীরা গতকাল ভোরে আমার বাড়িতে এসেছে। আমি তাদের বলেছি, আমরা কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন থেকে সরে যাব না। এই শহরের মানুষ আমাদের সাথে আছে। বর্তমান সরকার চরম ইমেজ সংকটে আছে। এই ইমেজ সংকট কাটাতে আমাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস চালাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’
মঞ্জু জোরালো কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘কোনো দমন পীড়ন, গ্রেফতার-হয়রানিতে ধানের শীষের নেতা-কর্মীদের নির্বাচন থেকে সরানো যাবে না। সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করা হবে।’
বিএনপির মেয়রপ্রার্থী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ শহরের প্রান্তসীমা, গল্লামারী ও রূপসা ব্রিজ এলাকার একটি পেট্রোল পাম্পে ষড়যন্ত্রমূলক সভা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা ও ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা খুলনায় এসে প্রশাসনের সাথে বৈঠক করেছেন। জনতার বিজয়কে ছিনিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। এ নির্বাচনে খুলনার জনগণ আমাদের পাশে আছে, আর সরকারি দলের পাশে আছে তাদের অনুগত পুলিশ বাহিনী, প্রশাসন, দলীয় ক্যাডার আর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস।’
নজরুল ইসলাম মঞ্জু এসব কর্মকাÐ বন্ধ করে সরকারকে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করার আহŸান জানিয়ে বলেন, ‘সিটি নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয় তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আপনাদের পক্ষে করা সম্ভব হবে না।’ তিনি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহŸান জানান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগাঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুÐু, সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান আলিম, ২০ দলীয় জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, এনপিপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর হোসেন ইসা, জাগপা নেতা খন্দকার লুতফর রহমান, ড. মোস্তাফিজুর রহমান, সাঈদ আহম্মেদসহ স্থানীয় ২০ দলের নেতা-কর্মীরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলন শেষে নজরুল ইসলাম মঞ্জু কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে নামেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ দলীয় নেতা-কর্মীরা গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন।
বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজছে ঃ উন্নয়নের স্বার্থে খুলনাবাসী আজ ঐক্যবদ্ধ। যে কারণে মহানগরীতে নৌকার পক্ষে ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে নিশ্চিত পরাজয়ের আশংকায় বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজছে। আওয়ামী লীগ মনোনীত ও ১৪ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক গতকাল বৃহষ্পতিবার সকালে নগরীর ২৭ ও ২৮ নং ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচারকালে এ কথা বলেন।
তালুকদার খালেক বলেন, নেতৃত্বের অযোগ্যতা ও চরম ব্যর্থতার করণে গত ৫ বছর খুলনা মহানগরী সার্বিক উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে পরেছে। মহানগরীর জলাবদ্ধাতা,মাদকের ভয়াবহতা ও মশার উৎপাতে নগরবাসী আজ অতিষ্ট। ‘আমি নির্বাচিত হলে এসব সমস্যা সমাধানে সর্বাধিক গুরুত্ব দেব। খুলনা মহানগরীকে একটি পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে সকলের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া হবে।’
নির্বাচনী প্রচারকালে ব্যাপক গণসংযোগ ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মত বিনিময় করেন। এসময় মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, ২৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিল প্রার্থী আজমল আহম্মেদ তপন, নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ্যাড.রজব আলী, আইন সম্পাদক এ্যাড.আইয়ুব হোসেন, জামাল উদ্দিন বাচ্চু, জাহাঙ্গির হোসেন, হফেজ শামিম, ২৭ নং কাউন্সিলর প্রার্থী জেড এ মাহামুদ ডন প্রমুখ। পরে মেয়র প্রার্থী শীতলা বাড়ী মন্দির পরিচালনা কমিটির নেতাদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এসময় প্রতিষ্ঠানের সভাপতি শ্যাম প্রসাদ কর্মকার, সাধারণ সম্পাদক সুজিত সাহা, বিজয় ঘোষ, এ্যাড.পংকজ সাহা, বিপ্লব দাস, অশোক সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির প্রার্থীর প্রচারণায় হামলা
খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত ও ২০ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর গণসংযোগ চলাকালে তাদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মুন্সি নাজমুল আলম নাজুর নেতৃত্বে এ হামলা হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনে দেয়া অভিযোগ থেকে জানা গেছে। এতে মহানগর ছাত্রদল নেতা আল আমিন তালুকদার ও বিএনপি নেতা আব্দুস সামাদসহ ৫/৬ জন আহত হয়েছে। আহতদেরকে স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। সন্ধ্যায় নগরীর খালিশপুর থানাধীন ১৫ নং ওয়ার্ডের আলমনগর মোড়ে এ হামলার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ওই এলাকায় দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট ও খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নেতৃত্বে আলমনগর মোড় এলাকায় গণসংযোগ করছিলেন। এ সময় হঠাৎ করে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের একটি মিছিল নিয়ে তাদের উপর হামলা করে। এ ঘটনায় তাৎক্ষনিক বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা রির্টানিং অফিসারের কাছে অভিযোগ দেন।


হাসান সরকারের নির্বাচনী ইশতিহার ঘোষণা
প্রচারণায় জাহাঙ্গীর আলম ছুটছেন ঘরে ঘরে
মো. দেলোয়ার হোসেন/মোঃ হেদায়েত উল্লাহ
গাজীপুরে সিটি কর্পোরেশনে নৌকা ও ধানের শীষের দুই প্রার্থীই নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে রয়েছেন। তারা নগরীর পাড়া মহল্লা ছুঁটে বেড়াচ্ছেন। ভোটে নির্বাচিত হতে পারলে কি কি উন্নয়নমূলক কাজ করবেন সে প্রতিশ্রæতিও দিচ্ছেন। প্রচারণার দৌঁড়ে ‘কেউ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান’ অবস্থা।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে গতকাল নির্বাচনী ইশতিহার ঘোষণা করেছেন। ইশতিহান ঘোষণাকালে তিনি বলেছেন, একটি রাস্তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই গুরুত্ব বিবেচনা করেই আমি গাজীপুরে প্রায় অর্ধশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলাম। রাষ্ট্রায়ত্ব কলকারখানাগুলোতে শ্রমিকদের সন্তানদের পড়াশুনার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলাম। তিনি বলেন, আমার রাজনৈতিক জীবনের সকল পর্যায়েই আমি শিক্ষা বিস্তারে অবদান রাখার চেষ্টা করেছি। শিক্ষা জাতির মেরুদÐ, আর শিক্ষক হচ্ছেন শিক্ষার মেরুদÐ। তাই শিক্ষা ও শিক্ষকদের উন্নয়নের লক্ষে স্কুল, কলেজ, মাদরাসাগুলোকে সিটি কর্পোরেশনের আওতায় সম্পৃক্ত করে উন্নত শিক্ষা নিশ্চিত করবো। ভোকেশনাল, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সম্প্রসারণ করে বেকার সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়, নারীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এতিম ও দুঃস্থ, গরীব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান করে স্বল্প আয়ের মানুষের সন্তানদের শিক্ষা নিশ্চিত করবো। নারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে বেকার যুবক-যুবতীদের প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে সমাজ উন্নয়নে সম্পৃক্ত করবো। প্রত্যেক এলাকায় গণপাঠাগার স্থাপন করা হবে।
তার নির্বাচনী ইসতিহার সংক্ষিপ্তকারে তুলে ধরা হলো :-
অবরুদ্ধ গণতন্ত্র, ভূলণ্ঠিত মানবাধিকার এবং নৈমিত্তিক গুম-খুন-হত্যা-ধর্ষণে জর্জরিত দেশ ও জাতির এক চরম ক্রান্তিলগ্নে এবারের গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী, আপসহীন নেত্রী, গণতন্ত্রের মা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তবুও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সংগ্রামের অংশ হিসেবেই আমরা এ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
কালের পরিক্রমায় ঢাকার উপকণ্ঠে অবস্থিত গাজীপুর রূপান্তরিত হয়েছে শিল্প নগরীতে, বেড়েছে জনসংখ্যা। বর্তমানে দেশের প্রায় সবকয়টি জেলার লোকই গাজীপুরে বসবাস করে। গাজীপুরের জনসংখ্যা যেভাবে বেড়েছে সেভাবে কিন্তু নাগরিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা যায়নি। অপর্যাপ্ত নাগরিক সুযোগ সুবিধা নিয়েই টঙ্গী ও গাজীপুর এই দুইটি পৌরসভা এবং গাছা, পূবাইল, বাসন, কাউলতিয়া, কোনাবাড়ি ও কাশিমপুর এই ছয়টি ইউনিয়ন মিলে গঠিত হয় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন। আপনারা জানেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে আমাদের প্রিয় নেতা সাবেক মন্ত্রী অধ্যাপক এম এ মান্নানকে গাজীপুর মহানগরবাসী বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত করেছিলেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, জনরায়কে অসম্মান করে বিপুল ভোটে নির্বাচিত একজন মেয়রকে ষড়যন্ত্রমূলক সাজানো মিথ্যা মামলা দিয়ে বছরের পর বছর কারা অন্তরালে রাখা হয়েছিল। ফলে উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে গাজীপুরবাসী।
আপনাদের নিশ্চয় স্মরণে রয়েছে যে, টঙ্গী পৌরসভার প্রতিষ্ঠাকালীন সময়েই আমি দুইবার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পৌরবাসীর সহযোগিতা নিয়েই আমি টঙ্গী পৌরসভাকে দেশের অন্যতম সেরা একটি পৌরসভায় পরিণত করতে পেরেছিলাম। পরবর্তীকালে গাজীপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছি। দীর্ঘদিনের অর্জিত এসব অভিজ্ঞতা আমি সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নে কাজে লাগাতে চাই। ‘নগর পিতা’ নয় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের একজন কর্মী হয়ে নাগরিকদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকতে চাই।
মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থান গাজীপুর থেকেই শুরু হয়েছিল হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ। সরাসরি সেই প্রতিরোধ আন্দোলনে অংশগ্রহণ এবং নেতৃত্ব প্রদান করার কারণে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান ও গর্বিত মনে করি। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক ও এদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে আত্মদানকারী শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে আসন্ন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে আমার ১৯ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করছি।
১। মাস্টার প্লান প্রণয়ন ২। নগরভবন নির্মাণ ৩। সেবা দানকারী অন্যান্য সংস্থার সাথে সমন্বয় ৪। দুর্নীতি দরীকরণ ও স্বচ্ছতা ৫। শিক্ষা ৬। স্বাস্থ্য সেবা ও নিরাপদ খাদ্য ৭। আবাসন ব্যবস্থা: ৮। নিরাপত্তা ৯। যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন ১০। যানজট নিরসন ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ১১। নগরীর পরিচ্ছন্নতা ১২। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ১৩। সবুজ ও পরিবেশবান্ধব নগরায়ন ১৪। জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ১৫। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ১৬। বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ ১৭। ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও বিনোদন ১৮। নাগরিক সেবা আধুনিকীকরণ ১৯। অন্যান্য কর্মসূচি: সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামে গাজীপুরবাসীর ঝাপিয়ে পড়ার দিবসটি (১৯ মার্চ) যথাযথ মর্যাদায় যেন পালিত হয় সে ব্যবস্থা করা হবে। এই যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের নামে গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীকে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ব্যাক্তি কিম্বা প্রতিষ্ঠানকে বৃত্তি প্রদান করা হবে।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ধর্মের নাগরিকদের সমাহিত করার জন্য পর্যাপ্ত কবরস্থান ও শ্মশান গড়ে তুলে তাতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বেষ্টনী, মনোরম ফুলের বাগান, বৃক্ষরোপণসহ যার যার ধর্মীয় উপাসনালয় স্থাপন করা হবে। লাশবাহী পরিবহন ব্যবস্থা চাল করা হবে।
টঙ্গী বিশ^ ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে যাতে দেশ বিদেশ থেকে আগত মুসুল্লিরা নির্বিঘেœ তাঁদের ইবাদত বন্দেগি সম্পন্ন করতে পারেন। সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান (মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা)উন্নয়নে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করে আধুনিক রাষ্ট্র গঠনে এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাস্তবভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
সাংবাদিকতা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। তাই নাগরিক উন্নয়ন বাস্তবায়নের সহযোগী হিসেবে তাঁদের প্রেসক্লাবকে একটি আধুনিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার ব্যবস্থা করবো।
জনগণের অংশগ্রহণ ও মতামত ছাড়া কোন প্রতিষ্ঠান সত্যিকার ভাবে জনগণের প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে না বলে আমি বিশ্বাস করি। সিটি কর্পোরেশন জনগণের প্রতিষ্ঠান, যার দায়িত্বই হচ্ছে জনগণকে সেবা দেয়া। তাই মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণমূলক গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন গড়ে তুলতে চাই। আমাদের লক্ষ হচ্ছে উন্নত মানের সেবা আর সুশাসন। সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি কার্যালয়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণসহ হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স ফি যৌক্তিক পর্যায়ে আনার ব্যবস্থা করবো।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে জাহাঙ্গীর আলমের প্রচারণা ঃ আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে টঙ্গীতে ৪৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রচারণা অব্যাহত রাখে। মধুমিতা রেল গেট, বউ বাজার, জামাইবাজার, বিসিক, মিরাশপাড়া, নদী বন্দর, সালামের আটার কল, টঙ্গী রেল স্টেশন, নতুন বাজার, গাজী বাড়ি ও টঙ্গীবাজার এলাকায় গণসংযোগ করেন। এসময় জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মনোনয়ন বঞ্চিত এ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানসহ অন্যান্যের মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মতিউর রহমান মতি, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইলিয়াস আহমেদ, টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ফজলুল হক, সাধারন সম্পাদক মো. রজব আলী, কাউন্সিলর মো. আবুল হোসেন, ন্যাশনাল টিউবস সিবিএ সভাপতি আবুল হোসেন আমু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান মন্ডল, তাঁতী লীগ সভাপতি মো. শাহ আলম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
তিনি সকালে ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের ছয়দানা সড়কে প্রচারণা চালান। বেলা সাড়ে এগারটায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভাওয়াল সম্মেলন কক্ষে নির্বাচন কমিশনের সাথে আইন শৃঙ্খলা নিয়ে মতবিনিময় করেন। জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহম্মদ হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে মতবিনিময়ে প্রধান অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। এসময় জাহাঙ্গীর বলেন, একটি দল বহিরাগত সন্ত্রাসী, হত্যা মামলার আসামী এবং দূর্বৃত্ত¡দের এনে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃস্টি করার পাঁয়তারা করছে। স্থানীয় নির্বাচন স্থানীয় জনসাধারনকে সম্পৃক্ত করে উৎসবমুখরভাবে সম্পন্ন করাই আমাদের প্রত্যাশা। আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে সব রকম সহযোগীতা করবো। প্রতিপক্ষ সকল প্রার্থীকে অনুরোধ করছি আসুন আমরা একসাথে একমঞ্চে প্রচারণা চালাই।
পূর্ব আরিচপুর জামাই বাজারে পথসভায় আজমত উল্লা খান বলেন, আওয়ামী লীগ ও অংগসংগঠনের নেতাকর্মীর সাথে সাথে স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি সুশিল সমাজের অধিকাংশ সংগঠন নৌকার পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ। আগামী ১৫ মে নৌকা মার্কা ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করবে। জাহাঙ্গীর বলেন, আজমত ভাইয়ের নেতৃত্বে আমাদের সুসংগঠিত প্রচারণার ফলে মহানগরের ঘরে ঘরে নৌকার জোয়ার উঠেছে।
অন্যদিকে, হাসান উদ্দিন সরকার ও জাহাঙ্গীর আলম ছাড়াও অন্য পাঁচজন মেয়র প্রার্থী, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরা নিজ নিজ ওয়ার্ডের নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। তারা ভোটারদের কাছে প্রতিশ্রæতির ফুলঝুরি ছিটিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিরামহীনভাবে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
জহির উদ্দিন ৪ মে, ২০১৮, ৩:৫২ এএম says : 0
আসলেই কী লড়াইটা হবে ?
Total Reply(0)
তামিম ৪ মে, ২০১৮, ৩:৫২ এএম says : 0
সুষ্ঠ নির্বাচন না হলে আগেই ঘোষনা করে দেয়া হোক
Total Reply(0)
খুরশিদ আলম ৪ মে, ২০১৮, ৩:৫৩ এএম says : 0
জনগণ ভোট দিতে পারবে তো ?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন