বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

এর নামই তো এল ক্লাসিকো

| প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইমামুল হাবীব বাপ্পি : একটি ফুটবল ম্যাচ থেকে আপনি কি কি চাইতে পারেন? গোল, পাল্টা গোল, দু’দলের খেলোয়াড়দের যুদ্ধংদেহী মনোভাব, রেফারিং বিতর্ক, শারীরিক উত্তেজনা থেকে হাতা-হাতি, ধাক্কাধাক্কি, এরপর মাঠের উত্তেজনা পুরো বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়া? এর সবই ছিল পরশু রাতে বার্সেলোনার ন্যু ক্যাম্পে অনুষ্ঠেয় ‘এল ক্ল্যাসিকো’ ম্যাচে। যার হাত ধরে ‘ক্ল্যাসিকো’ কেন বিশ্ব ফুটবল রোমান্টিকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে তার প্রমাণ মিলেছে আরো একবার।
আগেই শিরোপা নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ায় যারা মনে করেছিলেন এ ম্যাচ অন্য ক্ল্যাসিকোর মত হবে না, তাদের ভবিষ্যতবাণী ভুল প্রমাণিত হতে একটুও সময় লাগেনি। ম্যাচের শুরু থেকেই ছিল শানিত সব আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণের পসরা। ম্যাচময় ছিল হলুদ কার্ডের ছড়াছড়ি। ছিল লাল কার্ডের উপস্থিতিও। যে লিওনেল মেসিকে সবাই মাঠের সবচেয়ে ভদ্র ছেলে বলে জানেন, সেই সুবোধ ‘বালক’টিও যুদ্ধংদেহী মনোভাবের কারণে দেখেছেন হলুদ কার্ড! হাতাহতি পর্যায়ে চলে যাওয়া শারীরিক উত্তেজনার কারণে একই দন্ডের মুখোমুখি হয়েছেন সার্জিও রামোস-লুইস সুয়ারেজ-জর্ডি আলবারা। আর এমন ম্যাচে রেফারির কিছু সিদ্ধান্ত যে বিতর্কের সৃষ্টি করবে এটাও যেন অবধারিত। যে সিদ্ধান্তের পক্ষে বিপক্ষে পুরো ফুটবল বিশ্বই এখন দুই ভাগে বিভক্ত।
শুধু দর্শক নয়, দু’দলের খেলোয়াড়দেরও আছে রেফারির প্রতি পারস্পারিক অভিযোগ। রিয়াল অধিনায়ক রামোস তো ম্যাচ শেষে অভিযোগ তুলে বলেন, ‘বিরতিতে ড্রেসিংরুমে ফেরার সময় রেফারির উপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন মেসি।’ তবে এ নিয়ে আসল কথা বলেছেন দু’দলের দুই বিজ্ঞ কোচ। বার্সেলোনা কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দের মতে, ‘এমন ম্যাচ পরিচালনা করা রেফারির জন্য সব সময়ই কঠিন।’ আর জিনেদিন জিদান মন্তব্য করেছেন আরো বিজ্ঞ ফুটবল বোদ্ধার মত, ‘রেফারিং বিতর্কের চেয়ে ফুটবল আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস।’
বার্সা সমর্থকদের যেমন অভিযোগ, মারাত্মক ফাউল করেও লাল বা হলুদ কোন কার্ডই পাননি গ্যারেথ বেল। অপরদিকে মার্সেলোর মুখে আলতো টোকা মামার মত অভিযোগে সার্জিও রবার্তোকে দেখালো হয়েছে লাল কার্ড; যার দরুণ দ্বিতীয়ার্ধের পুরোটা সময় একজন কম নিয়ে খেলতে হয়েছে বার্সেলোনাকে। তেমনি মাদ্রিদ ভক্তদেরও অভিযোগ, নিশ্চিত একটা পেনাল্টি থেকে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া লুইস সুয়ারেজের যে পাস ধরে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে নিখুত শটে মেসি দলকে এগিয়ে নিয়েছিলেন সেই বল কাসিমিরোকে ফাউল করে কেড়ে নিয়েছিলেন সুয়ারেজ। কিন্তু রেফারি বাঁশি বাজাননি।
সঠিক সময়ে রেফারি সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে ম্যাচের ফল অন্যরকম হতে পারত বলেও অনেকের মত। তবে দিন শেষে আসল সত্যটা হলো এমন উত্তাপের ম্যাচে জেতেনি কেউই। ড্র হয়েছে ২-২ গোলে। মেসি-সুয়ারেজের বিপরীতে গোল করেছেন রোনালদো ও বেল। তাতে লাভ বেশি হয়েছে বার্সারই। প্রথম দল হিসেবে ৩৮ ম্যাচের লা লিগায় অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়া এখন তাদের জন্য আরো সহজ হয়ে গেল। ভিয়ারিয়াল, লেভান্তে ও রিয়াল সোসিয়াদাদের বিপক্ষে লিগ মৌসুমের বাকি তিন ম্যাচে না হারলেই অনন্য সেই কীর্তি গড়বে আর্নেস্তো ভালভার্দের দল।
রিয়াল মাদ্রিদের এই ম্যাচ থেকে পাওয়ার তেমন কিছু ছিল না, শুধু ঐতিহ্যের লড়াইয়ে জয় পাওয়া ছাড়া। ১০ জনের দলের বিপক্ষে তা করতে না পারায় নিশ্চয়ই ভেতরে ভেতরে হতাশ লস বø্যাঙ্কোসরা। তার চেয়েও বড় ক্ষতি মনে হতে পারে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ইনজুরির বিষয়টি। প্রথমার্ধের দশম মিনিটে মাঠের ডান প্রান্ত দিয়ে দারুণ পাল্টা আক্রমণে সার্জিও রবার্তোর অসাধারণ পাস ভলি করে লুইস সুয়ারেজের করা মৌসুমের ৩০তম গোলের চার মিনিট পর দলকে সমতায় ফেরান রোনালদো। হেডের মাধ্যমে বেলের বাড়ানো বল মাত্র ২ গজ সামনে থেকে টোকা দিয়ে জালে পাঠানের সময় পায়ের গোড়ালিতে আঘাত পান পর্তুগিজ তারকা। এসময় উঠে দাঁড়িয়ে খেড়াতেও দেখা যায় তাকে। এরপরও অবশ্য বিরতির আগ পর্যন্ত মাঠে থেকে গোলের বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরী করেছিলেন। বার্সা গোলরক্ষক টের স্টেগানের দক্ষতায় সেই সুযোগগুলো তিনি কাজে লাগাতে পারেননি। কিন্তু তিন সপ্তাহ পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল ম্যাচের কথা বিবেচনা করে দ্বিতীয়ার্ধে তাকে মাঠে নামাননি কোচ জিদান। যদিও ভক্তদেরকে জিদান আস্বস্থ করেছেন এই বলে যে, ‘তার (রোনালদোর) চোট গুরুতর নয়। আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে একটু ফুলে গেছে মাত্র। সময়মত সব ঠিক হয়ে যাবে।’ তবে চুড়ান্ত ফল পেতে ডাক্তারি ফলের জন্য অপেক্ষা করার কথাও বলেন ফরাসি কিংবদন্তি। তার পরিবর্তে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করেন মার্কো অ্যাসেনসিও।
ম্যাচের দ্বিতীয় ভাগে মনেই হয়নি বার্সা একজন কম নিয়ে খেলেছে। মেসির নেতৃত্বে ভয়ঙ্কর সব আক্রমণে রিয়ালের রক্ষনে ত্রাস ছড়ায় কাতালানরা। তবে টের স্টেগেনের মত রিয়াল গোলরক্ষক কেইলর নাভাসও এদিন ছিলেন দুর্দান্ত। বেশ ক’বার মেসিকে গোলবঞ্চিত করেন এই কোস্টারিকান। ম্যাচের প্রতিটা মুহূর্তেই মনে হয়েছে ‘এই বুঝি গোল পেয়ে গেল কোন দল।’
৭২তম মিনিটে তেমনি একটি মুহূর্ত এসে যায় রিয়ালের সামনে। দারুণ এক পাল্টা আক্রমণ থেকে দলকে পরাজয়ের হাত থেকে বাঁচান বেল। শেষ দিকে গোলের জন্য মরিয়া হয়ে পড়া কোন দলই আর জালের দেখা পায়নি বটে, কিন্তু শ্বাসরুদ্ধ ও রোমাঞ্চকর এক ম্যাচের সাক্ষি হয়েছে পুরো ফুটবল বিশ্ব।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন