কুতুবউদ্দিন আহমেদ
কলেজে বা স্কুুলে যাবার সুযোগ হলে খুব ভালো। যদি তা তোমার অবস্থায় না কুলায়, তাহলে নিরাশ হয়ো না। তোমাকে ছোট হয়ে থাকতে হবে না। জীবনের সকল অবস্থায়, সকল বয়সে তুমি চেষ্টার দ্বারা বড় হতে পার। তুমি মানুষ, তুমি অগ্নিস্ফুলিঙ্গ, তোমার পতন নাই, তোমার ধ্বংস নাই। অর্থ ও পশুত্ব-সুখের বিনিময়ে জীবনের অপমান করো না। ডা. লুৎফর রহমান
লুৎফর রহমান [ ১৮৮৯Ñ ৩১ মার্চ, ১৯৩৬ ] জন্মগ্রহণ করেছিলেন পরাধীন ভারতবর্ষে। ইংরেজ বেনিয়ারা তখন ভারতবর্ষে জগদ্দল পাথর হয়ে রীতিমত আসন গেড়ে বসে আছে; শাসন-শোষণ চালিয়ে যাচ্ছে নির্বিবাদে। তাদের বাধা দেবার মতো শক্তিসামর্থ্য তখনও কারো বা কোনো গোষ্ঠীর হয়ে ওঠেনি। বাংলা তথা ভারতবর্ষের যুবসমাজ বিশেষ করে মুসলমান যুবসমাজ দিশেহারা, ছন্নছাড়া। তারা শাসন, শোষণের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে ক্রমাগত অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছে। তাদের সম্মুখে আশার কোনো আলো নেই, পথ দেখাবার কোনো মানুষ নেই। তারা শিক্ষা-দীক্ষায় অন্যান্য জাতির চেয়ে শত বছর পিছিয়ে। অজ্ঞানতা, কুসংস্কার তাদের আষ্টে-পৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে। এদের পথ দেখাবার মতো জ্ঞানশক্তি নিয়ে সমাজে তেমন কোনো প-িতেরও আবির্ভাব ঘটেনি। তাদের সম্মুখে যতদূর দেখা যায়, কেবল অন্ধকার আর অন্ধকার।
এমনই এক কাল সময়ে হাতে জ্ঞানের বাতি নিয়ে বাঙালি যুবসমাজের পথপ্রদর্শক হয়ে এলেন যে পুরুষ তিনি ডা. লুৎফর রহমান। তিনি এসে দেখলেন, এদেশের যুবসমাজ জীবনের মূল্য সম্পর্কে ধারণা রাখে না। জীবন আসলে কী, এর উদ্দেশ্যই বা কী, সে সম্পর্কেও তারা স্পষ্ট ধারণা রাখে না। একটি জীবনের গভীরে যে অপার সম্ভাবনার বীজ লুকিয়ে থাকে, একটি জীবন যে সমস্ত পৃথিবীটাকে আলোয় আলোয় ভরে দিতে পারে, সে সম্পর্কেও আগে থেকে তাদের কেউ কিছু বলেনি। তারা জীবনকে চালিয়ে নিচ্ছে অন্য আর দশটি প্রাণীর মতো করে। মানুষ হিসেবে এ পৃথিবীতে তাদের দায়িত্ব কী, এসব তারা কিছু জানে না।
বাংলার যুবসমাজের এ দূরবস্থা দেখে-শুনে লুৎফর রহমানের কপালে চিন্তার রেখা ফুটে উঠলো। তিনি ভাবলেন মানুষ হিসেবে তার কিছু একটা করা উচিৎ। এভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকা যায় না। এদেশের যুবসমাজ যে পঙ্কিলতায় ডুবে আছে সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করা উচিৎ। মানব জনম তাদের এভাবে বৃথা হয়ে যেতে পারে না। মানুষ হিসেবে এসব দেখে-শুনে চুপচাপ বসে থাকা এক ধরনের পাপ।
সমাজের চারপাশের এসব বিক্ষুব্ধতাই আসলে ডা. লুৎফর রহমানকে লেখক করে তুলেছে। সমাজের পাপ-পঙ্কিলতা তার লেখক হয়ে ওঠার পেছনে বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাজ যদি চলতো তার স্বাভাবিক গতিপথে, যুবসমাজের উত্তরণ যদি ঘটতো যথার্থ মাত্রায়। তাহলে বোধহয় ডা. লুৎফর রহমান লেখক লুৎফর রহমান হয়ে উঠতেন না। লেখক হয়ে ওঠার প্রয়োজনও তার হতো না। আসলে তিনি লেখক হয়ে উঠেছেন সময়ের প্রয়োজনে, সমাজের প্রয়োজনে, কোন নিজের খ্যাতি লাভের জন্য নয়।
সামাজিক দায়িত্বপালনের দিকটা বিবেচনা করেই হয়তো লুৎফর রহমান পেশা নির্বাচন করতে গিয়ে বেছে নিয়েছিলেন শিক্ষকতা। হয়তো তার ভাবনায় ছিল শিক্ষকতা করতে গিয়ে যুবসমাজের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে মেশা যাবে, তাদের সঠিক মত ও পথের দিক-নির্দেশনা দেয়ার সুযোগ ঘটবে। এই মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তিনি শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন সিরাজগঞ্জ বি এল হাইস্কুলে। মূলত এখান থেকে তার সাহিত্য জীবনের শুরু। তিনি ‘সততার পরিচয়’ শিরোনামে একটি গল্প লিখেছেন, যার কেন্দ্রীয় চরিত্র করিম বক্স নামের এক সৎ কিশোর বালক; যা সম্ভবত এই সিরাজগঞ্জে বসেই রচনা করেছেন। কেননা তিনি গল্পটিতে যে বড় বাজারের কথা উল্লেখ করেছেন তা এই সিরাজগঞ্জ শহরে আজও বিদ্যমান এবং এ বাজারটি সিরাজগঞ্জ শহরের সবচে’ প্রাচীন বাজার।
লুৎফর রহমান সাহিত্য জীবন শুরু করেছিলেন কবিতা
লেখার মধ্য দিয়ে। ছাত্রজীবন থেকেই তার কবিতার চর্চা শুরু। তবে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় চাকরি জীবনের শুরুতে সিরাজগঞ্জ থেকে ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে অর্থাৎ সিরাজগঞ্জ বি এল স্কুলে শিক্ষকতাকালে। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রকাশ’ এর ভূমিকা লিখে দেন সিরাজগঞ্জেরই আর এক প্রথিতযশা খ্যাতিমান কবি সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী। তিনি তার ভূমিকায় লিখেছিলেন :
বন উপবনে নানা জাতীয় ফুলই ফুটিয়া থাকে। কোনটা সুগন্ধে ভরপুর, কোনটা শোভায় উজ্জ্বল। গোলাপ ও বেলীর পাশে জবা ও গাঁদাও শোভা পায়। আমাদের উদীয়মান কবি মৌলবী লুৎফর রহমান সাহেবের কবিতার উদ্যানে দুই জাতীয় ফুলই ফুটিয়াছে। Ñ আমরা আজ আজ আনন্দ ওপ্রীতিভরে এই উদীয়মান কবিকে সাহিত্যকুঞ্জে অভিনন্দন করিতেছি।
সিরাজগঞ্জের বি এল স্কুল থেকে লুৎফর রহমানের শিক্ষকতার ইতি ঘটে একটি দুঃখজনক ঘটনার মধ্য দিয়ে। ঘটনাটি লুৎফর রহমানকে অতিশয় পীড়া দেয় এবং সমাজের আরেকটি ক্লেদাক্ত রূপ দেখে তিনি মানসিকভাবে বিচলিত হয়ে পড়েন। এই স্কুলেরই তার প্রত্যক্ষ ছাত্র ছিলেন প্রখ্যাত প-িত উপমহাদেশের ইসলামী চিন্তাবিদ ডক্টর গোলাম মকসুদ হিলালী [ ১৯০০ Ñ ১৯৬১ ]। তিনি এক রচনায় প্রিয় শিক্ষক লুৎফর রহমান সম্পর্কে লিখেছেন :
লুৎফর রহমান সাহেব একজন মুসলমান ছাত্রকে খাইবার পানি আনিতে বলিয়াছিলেন। হিন্দু ও মুসলমানের জন্য পৃথক পৃথক পানির টব ছিল। ছাত্রটি মুসলমান ছেলেদের টবে পানি না পাইয়া হিন্দু ছেলেদের টব হইতে এক গ্লাস পানি আনিয়া দেয়। হিন্দু ছেলেরা হেড মাস্টারকে জানায় যে, একজন মুসলমান ছাত্র তাহাদের টব স্পর্শ করিয়াছে। ইহাতে হেড মাস্টার উহার সমস্ত পানি ফেলিয়া দিতে বলেন এবং তাহাই করা হয়। লুৎফর রহমান সাহেব এটাকে মানবতার অপমান বলিয়া মনে করেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করিয়া স্কুলের কর্তৃপক্ষের সহিত গোলমাল হয়। ফলে তিনি চাকরিতে ইস্তফা দিয়া চট্টগ্রাম জোরারগঞ্জ উচ্চ ইংরেজি স্কুলে শিক্ষক নিযুক্ত হইয়া চলিয়া যান।
ডা. লুৎফর রহমানের ব্রত ছিল মানবসেবা। তার সাহিত্যে হাত দেয়ার পেছনেও কাজ করেছে ঐ মানবসেবা। নির্মোহচিত্তে মানবতার উন্নতির জন্যে কাজে করে গেছেন আজীবন। তিনি আজীবন চেয়েছেন মানুষ বেঁচে থাকুক মানুষের মতো করে। মানুষের ধর্ম হোক মানবধর্ম। জীবন-যাপনে, আচারে-বিহারে অন্যান্য প্রাণী থেকে মানুষের যেন থাকে সুস্পষ্ট পার্থক্য। মানুষ যেন পশুত্ব গ্রহণ না করে, সে যেন পশুর সঙ্গে মিশে না যায়। মানুষের মানুষ হয়ে বেঁচে থাকাটাই মূল কথা।
লুৎফর রহমান শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে মানুষের এই মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন ঠিকই কিন্তু তাতে হয়তো আত্মতৃপ্ত হতে পারছিলেন না। তাই শিক্ষকতা ত্যাগ করে তিনি বৃহত্তর জগতের পথে পা বাড়ান। ভারতবর্ষে তখন অসহযোগ আন্দোলনের ডামাডোল। ইংরেজ তাড়াও আন্দোলনে সমগ্র ভারতবর্ষ তখন ফুঁসে উঠছে। ঠিক এই সময়ে শিক্ষকতার মতো একটি ঠা-া মেজাজের পেশায় পড়ে থাকাটা তার কাছে বেমানান মনে হচ্ছিল। তাই তিনি সমাজসেবা ও সাহিত্যসেবার মতো মহৎকাজের ব্রত নিয়ে পাড়ি জমান কল্লোলিনী কলকাতার উদ্দেশে। এখানে তিনি খুব কম সময়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
এ সম্পর্কে লুৎফর রহমানের জীবনীকার খোন্দকার সিরাজুল হক লিখেছেন :
১৯২০ সালে তিনি কলকাতায় ৪/১/১নং ছকু খানসামা লেনে একটি বাড়িতে হোমিওপ্যাথি মতে চিকিৎসাসেবা শুরু করেন এবং মুসলিম সম্পাদিত সাময়িক পত্রের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলেন। ১৯২০ সালের নভেম্বর মাসের তৃতীয় বর্ষ, তৃতীয় সংখ্যা থেকে তিনি মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক সম্পাদিত ত্রৈমাসিক ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকার প্রকাশভার গ্রহণ করেন। পত্রিকার পরবর্তী সংখ্যাতেই তার প্রবন্ধ ‘উর্দু ও বাঙ্গালা সাহিত্য’ প্রকাশিত হয়। [লুৎফর রহমান, জীবন ও গ্রন্থমালা]
লুৎফর রহমান কলকাতায় মানুষের চিকিৎসাসেবা দিতে থাকেন আর পত্র-পত্রিকায় লেখেন। সারাক্ষণই তার মাথায় নানান সমাজচিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকে; কীভাবে সমাজের মানুষের সামান্য উন্নতি করা যায়। নিজেকে নিয়ে ভাববার সময় কই? এরইমধ্যে সমাজের একটি অতি কদর্য দিক তার চোখে পড়ে। তিনি ব্যথিত হন। ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থান থেকে যুবতী মেয়েদের ধরে ধরে কলকাতায় আনা হয়। এই মেয়েগুলো অসহায়, হতদরিদ্র। বিভিন্ন প্রলোভন ও প্রতারণার ফাঁদ পেতে বিভিন্ন স্থান থেকে কলকাতায় ধরে আনা হয়। কেউবা পেটের দায়ে স্বেচ্ছায় আসে। যারা স্বেচ্ছায় আসে তারা না বুঝেই আসে। কিছুদিনেই তাদের স্বপ্নভঙ্গ হয়। তাদের শুরু হয় নরক জীবন, কীটের জীবন, অনন্তকালের অন্ধকারের জীবন। লুৎফর রহমান সমাজের এসব পতিতা নারীদের সভ্য ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। এটি নিঃসন্দেহে একটি মহৎ উদ্দেশ্য। তার এ মহৎকর্মের সাক্ষী ছিলেন বাংলা ভাষার একজন বড় মাপের কথাশিল্পী। তার নাম আবুল কালাম শামসুদ্দীন। তিনি লিখেছেন :
লুৎফর রহমান পতিতা নারীদের স্বনির্ভর করে তোলার জন্য ৫১নং মীর্জাপুর স্ট্রিটে ‘নারীশিল্প বিদ্যালয়’ খুলেছিলেন। একজন দর্জি রেখে তিনি তাদের পোশাক তৈরি শেখাতেন। পোশাক তৈরি ছাড়াও চরকায় সুতা-কাটা ও বই বাঁধার কাজ শেখার ব্যবস্থাও করেছিলেন। কিন্তু অর্থাভাবে তিনি এই প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখতে পারেননি। [অতীত দিনের স্মৃতি]
বাংলা ভাষার অনেক লেখকই আছেন যারা এই শ্রেণির নারীদের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে লিখেছেন। শরৎচন্দ্র লিখেছেন, তারাশঙ্কর লিখেছেন, কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন। কিন্তু তারা কেউ এদের প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করতে আসেননি, স্বাভাবিক-সুন্দর পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেননি। কিন্তু লুৎফর রহমান এই মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, কেউ বা কোনো গোষ্ঠী তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি। মাঝপথেই তাকে এ কর্মকা-ের ইতি টানতে হয়। তাই আক্ষেপ করে তিনি লিখেছেন :
কলকাতায় বিভিন্ন জেলা হইতে যুবতী মেয়েদিগকে লইয়া বেশ্যাবৃত্তি করান হয়; তাহাদের জীবন চিরদিনের জন্য চির অন্ধকার হইয়া যায়। ইহারা অতিশয় দুর্মতি, হীনা, পিশাচীর জীবনযাপন করে। আমি ইহাদিগকে সুপবিত্র জীবনে ফিরাইয়া আনিয়া উপার্জনশীলা ও বিবাহিত করার উদ্দেশে একটি নারীশিল্প বিদ্যালয় বহুদিন চালইয়াছিলাম। দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করিয়াও মুসলমানের কাছে একটি টাকা পাওয়া যাইত না। সে কোথা হইতে দিবে? মুসলমানের ঘরে টাকা নাই। চৌকিদারী, পেয়াদাগিরি, চুরি করিয়া, ঘুষ খাইয়া, ছ্যাচরামি করিয়া ২/১ টাকা যা সে সংগ্রহ করে তাহা দিয়া সে পরিবার প্রতিপালন করিতে পারে না। সে কি ছাই ধর্ম পালন করিবে-কি দান করিবে? তাহার কি আছে? সমাজের ভয়ে ঋণ করিয়া সে মিথ্যাই বাপ-মায়ের ফাতেহা করে মাত্র। ---কাজেই আমার প্রতিষ্ঠান আমি রক্ষা করিতে পারিলাম না।
লুৎফর রহমান প্রকৃতই মানবপ্রেমিক লেখক। তিনি চোখের সম্মুখে দেখতে চেয়েছিলেন শুদ্ধ সমাজ, শুদ্ধ মানুষ, সুখি পরিবার। মানুষের ভ-ামি তিনি সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করতে চেয়েছিলেন। লেবাসসর্বস্ব ধর্ম তিনি ঘৃণা করেছেন সর্বান্তকরণে। তার রচনাবলিতে পাওয়া যায় পরিচ্ছন্ন ধর্মবোধ, মানবিকতা, মানুষের রাজনীতি, সমসাময়িক অর্থনীতি, দৈনন্দিন কৃষিকর্ম, শরীরচর্চা, সুস্থ ও পরিমিত জৈবিক যৌনতা। এসব বিষয়ে লিখে তিনি আসলে একটি উন্নত, রচিবোধসম্পন্ন জাতি তৈরি করতে চেয়েছিলেন। পরিমিতিবোধ, রুচিবোধ যে একজন সাধারণ মানুষকে উন্নত মানুষে পরিণত করতে পারে, এ কথা তিনি বলেছেন বারবার। তার এ চিন্তা-চেতনার মূল্যায়ন করতে গিয়ে ড. এনামুল হক বলেছেন :
বাংলা সাহিত্যে মীর মশাররফ হোসেন [ ১৮৪৮-১৯১২] থেকে কাজী নজরুল ইসলাম [১৮৯৯Ñ১৯৭৬] পর্যন্ত প্রধান-অপ্রধান প্রায় শ’খানেক মুসলিম লেখক মুসলিম বাংলার সমাজ, সংস্কৃতি, সাহিত্য ও সাংবাদিকতা ক্ষেত্রে আবির্ভূত হলেও ডা. লুৎফর রহমানের মতো অপরিমেয় সৌন্দর্যবোধের সাধক , দুর্লভ নৈতিক সচেনতার অধিকারী, মানবতাবাদী, যুক্তিবাদী, চিন্তাশীল প্রবন্ধকার মুসলিম বঙ্গে অধিক জন্মগ্রহণ করেননি।
লুৎফর রহমান রচনা করেছেন মানুষের জন্য কল্যাণময় সাহিত্য; যা কখনও বেনোজলে ভেসে যাবার মতো নয়; এর উপযোগিতা চিরকালই থাকবে। লেখার মাধ্যমে তিনি মানুষের ভেতরের মানুষকে উদ্বোধিত করতে চেয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন মানুষের অবস্থান যাই হোক না কেন, যেখানেই হোক না কেন, সে যেন প্রকৃত মানুষের পরিচয় দেয়।
আমরা পাঠক সমাজ যত বেশি তার রচনার চর্চা করবো প্রাত্যহিক জীবনে, ততো বেশি লেখক হিসেবে তিনি সার্থক হয়ে উঠবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন