শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিনোদন প্রতিদিন

আমার জীবনের লক্ষ্যই ছিল অনিককে মানুষ করে গড়ে তোলা -ববিতা

ববিতার সংগ্রামী জীবন

| প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিনোদন রিপোর্ট: স্বামীর মৃত্যুর পর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রাভিনেত্রী ববিতা একমাত্র ছেলে অনিককে নিয়ে অনেক সংগ্রাম করেছেন। ব্যস্ততম অভিনেত্রী হয়েও ছেলেকে মানুষ করে গড়ে তোলার জন্য তিনি অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে ওঠে অনিক। তাকে মানুষ করে তোলার জন্য যা যা করা প্রয়োজন ছিল তিনি শত কষ্টের মাঝেও তা করেছেন। একজন মা পিতৃহীন সন্তানকে যেভাবে আগলে রাখেন ববিতা তার চেয়েও অনেক বেশি সংগ্রাম করেছেন। ছেলেকে আদর্শ ও নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে বড় করে তোলার ক্ষেত্রে তার সংগ্রামের কথা বলেছেন তিনি। তিনি বলেন, নব্বই দশকের শুরুর দিকে চলচ্চিত্রে আমি খুব ব্যস্ত। এক সন্তানের মা। তাও আবার সিঙ্গেল মাদার। অনিকের বাবা যখন মারা যান, তখন ওর বয়স তিন বছর। এক মহাসংকটের মধ্যে পড়ি। একদিকে সন্তানকে সময় দেয়া, অন্যদিকে শূটিং করা। সন্তানকে সময় দিতে গিয়ে অনেক সিনেমার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। আমার লক্ষ্যই ছিল, সব গোল্লায় যাক, আগে আমার সন্তান। ওকে মানুষ করে গড়ে তুলতে হবে। ঢাকার বাইরের শূটিং থাকলে তা পারতে পক্ষে করতাম না। ববিতা বলেন, অনিক যখন বনানীর স্কুলে যাওয়া শুরু করে, তখন শুরুর দিকে ওর ক্লাসরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতাম। পরীক্ষায় সময় এটা বেশি করতে হতো। প্লে-পেন স্কুল থেকে অনিককে যখন স্কলাস্টিকায় ভর্তির সিদ্ধান্ত নিলাম তখন অনিক তা চায়নি। অনেক বুঝিয়ে তারপর স্কলাস্টিকায় ভর্তি পরীক্ষা দিতে রাজি করাই। ভর্তি পরীক্ষায় ও খুব ভালো রেজাল্ট করে টিকে যায়। সেখানে সিক্সে ভর্তি করা হয়। অনিকের পড়াশোনা শুরুর পর আমাকে শূটিংয়ের ব্যাপার অনেক সচেতন হতে হয়েছিল। কারণ বাবা নেই। একদিকে শূটিং অন্যদিকে অনিকের পড়াশোনাÑএই দুই দিক সামলাতে হতো। পরিচালকেরা যাতে সমস্যা না হয়, তাই অনেক কষ্টে সময় বের করে ঢাকার আশপাশে শূটিং করতাম। বাসায় কাজের লোক থাকলেও, আমি ছিলাম একা। একদিকে সংসার চালাতে আয় করতে হতো, অন্যদিকে ছেলেকেও মানুষ করতে হবে। এমন এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করতে হতো। অনিক যখন কোচিং করত, আমি ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় গাড়ির মধ্যে বসে থাকতাম। ববিতা নায়িকা, এ চিন্তা বিসর্জন দিয়ে ছেলেকে মানুষ করতে হবে, এ চিন্তায় মগ্ন থাকতাম। কোচিং শেষে ওকে নিয়ে বাসায় ফিরতাম। অনিকের পড়াশোনার চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শূটিংয়ের সময়ও পরিবর্তন করি। সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করি। অনেকটা অফিসের মতো। এর মধ্যে দুপুরে বাসায় যেতাম। খাওয়াদাওয়ার বিষয়টি ঠিক করতাম। তিনি বলেন, আমি যে সংগ্রাম করছি, ওর জন্য সিনেমার কাজে ব্যস্ততা কমিয়ে দিয়েছি, তা অনিক বুঝতে পারত। এখন অনিক তার মায়ের এ সংগ্রামের কথা কথা প্রায়ই বলে। ও বলে, আমার মা আমার জন্য অনেক স্যাক্রিফাইস করেছেন। এটা ওর মনের মধ্যে সব সময় কাজ করেছে। তাই মা খুশি হবেন, এমন কাজই করতে হবে বলে তার মধ্যে দৃঢ় মনোভাব কাজ করে। ববিতা বলেন, অনিকের একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান পড়ালেখা, পড়ালেখা আর পড়ালেখা। সেই ফল সে পেয়েছে। তিনি বলেন, কানাডার ওয়াটার লু ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ¯œাতক শেষে ছেলের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলাম। তখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছেলের ভালো ফলের জন্য আমাকে খোঁজ করেন। অনেক সম্মান পেয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, স্বপ্নপূরণ হয়েছে, পরিশ্রম সার্থক। তিনি বলেন, সন্তানকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে সিনেমার কাজ কমিয়ে দিয়েছিলাম। তা নাহলে, আমার সিনেমার সংখ্যা তিনশ’ ছাড়িয়ে যেত। আমার সন্তানের কথা ভেবে সারাটা জীবন একাই পার করেছি। ওকে মানুষের মতো মানুষ করে তোলাই ছিল আমার লক্ষ্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
মোঃ আব্দুল গাফফার ১৬ মে, ২০১৮, ৪:২৯ পিএম says : 0
ধন্যবাদ মায়ের মত মা, বাংলার মা
Total Reply(0)
১৫ জুলাই, ২০১৮, ১১:০০ পিএম says : 0
আপনার কর্তব্য নিষ্টায় আপনার জন্মভুমি বিজয়নগর বাসীরা সত্যই গর্ববোধ করি ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন