মাদকসহ সামাজিক সঙ্কট মোকাবেলায় আলেমদের নিয়ে সরকারকে কাজ করতে হবে এ এম এম বাহাউদ্দীন
স্টাফ রিপোর্টার : দেশের আলেমরা যদি ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষা অর্জন করে তাহলে একইসাথে ভাল আলেম ও ভাল অফিসার তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, মাদরাসা শিক্ষার্থীরা যাতে শুধু ধর্মীয় শিক্ষা নয়, আধুনিক শিক্ষাও অর্জন করতে পারে এজন্য ধর্মীয় শিক্ষার সাথে আধুনিক শিক্ষার সমন্বয় করা হয়েছে। এখন মাদরাসায় কোরআন, হাদীসের সাথে সাধারণ ধারার শিক্ষার্থীদের সমান বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়েও শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা একদিকে যেমন ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ওঠে অন্যদিকে আধুনিক শিক্ষার মাধ্যমে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারও হতে পারে। গতকাল (সোমবার) বিকেলে রাজধানীর মহাখালিস্থ গাউসুল আজম কমপ্লেক্সে আয়োজিত এক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে তিনি একথা বলেন। মাদরাসা শিক্ষকদের একক ও বৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন মানবতা বিকাশে মাহে রমজানের ভূমিকা শীর্ষক এই আলোচনা সভা, দোয়া ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে।
বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীনের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব অধ্যক্ষ শাব্বীর আহমদ মোমতাজীর পরিচালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী, ধর্ম বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুন এমপি। বক্তব্য রাখেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মারদাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ আলমগীর, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মহিউদ্দীন খান, এ কে এম জাকির হোসেন, আবুল হাসান মাহমুদ চৌধুরী, রওনক মাহমুদ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক প্রফেসর মাহাবুবুর রহমান, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম ছায়েফ উল্যা, ইসলামের আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. আহসান উল্লাহ, জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ড. এ কে এম মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ইসলাম ধর্ম হচ্ছে মানবতা ও কল্যাণের ধর্ম। ইসলাম ধর্ম নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করে। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি দরিদ্র রাষ্ট্র পেয়েছিলেন। সেই রাষ্ট্রকেই উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নের বিষয়ে তিনি বলেন, মাদরাসা ও ইসলামী শিক্ষা এগিয়ে নিতে বর্তমান সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শিক্ষার্থীরা যাতে তাদের অর্জিত জ্ঞান বাস্তব জীবনে প্রযোগ করতে পারে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূর করা হয়েছে ও মর্যাদা সাধারণ শিক্ষকদের সমান করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের সময়ে মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের দাবির প্রেক্ষিতে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর, উচ্চমানের শিক্ষার জন্য মাদরাসায় অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে দুই হাজার মাদরাসার নতুন ভবন তৈরি করা হয়েছে। আরও দুই হাজার নতুন ভবন তৈরি করা হবে। ইতোমধ্যে তা অনুমদনের জন্য একনেকে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এটি অব্যাহত থাকবে। একটি ক্ষুধা দারিদ্র জর্জরিত দেশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজকের এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে। দেশের এই অগ্রগতির ধারা যদি অব্যাহত রাখতে চান তাহলে তার প্রতি আস্থা রাখুন।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বলেন, পবিত্র রমজান মাস আমরা যারা পেয়েছি আসরা সত্যিই ভাগ্যবান। কারণ এই রমজান হলো দোয়া কবুলের মাস, সিয়াম সাধনার মাস। আমরা যারা রোজা রাখি আল্লাহর কাছে দোয়া করবো বারবার তিনি যেন আমাদেরকে রমজান মাস পাওয়ার সৌভাগ্য দেন। আর সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ করে দেন।
কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের দায়িত্ব দিয়েছেন। দায়িত্ব পেয়ে আমি কারিগরি শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার চেষ্টা করছি। মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের উন্নয়নের জন্য তিনি আগামী বাজেটে আরও বরাদ্দ চেয়েছেন বলে জানান।
জমিয়াতের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ইসলাম প্রচারের জন্য কাজ করছে, এর সাথে সংযুক্ত শিক্ষকরা রাসূল (সা.) এর জীবনাদর্শ ছড়িয়ে দিচ্ছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) এর জীবন আদর্শ অনুসরণ করলে সকলের জীবন সার্থক হবে এবং কোন বিপদ-আপদ হবে না। এজন্য সকলের উচিত ভাল আমল করা, কোরআন পড়া, সত্য কথা বলা।
ধর্ম বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব বজলুল হক হারুন এমপি বলেন, জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের শিক্ষকগণ রমজানের তাৎপর্য বোঝে এবং মানুষকে বোঝায়। এককভাবে এরকম সারাদেশে বৃহৎ ও সংগবদ্ধ সংগঠন আর নেই। কিন্তু সম্প্রতি এই সংগঠন সম্পর্কে অনেকেই উস্কানিমূলক কথা বলে। আমরা সজাগ আছি। উস্কানি দিলে, ষড়যন্ত্র করলে, জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ছাড়া মাদরাসা শিক্ষার উপর কোন কিছু চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে তা মেনে নেয়া হবে না।
বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, সমাজে এখন অনেক ধরণের সমস্যায় আক্রান্ত। প্রধানমন্ত্রী ড্রাগসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। প্রতিদিন এর সাথে জড়িত মানুষদের হত্যা করতে হচ্ছে। কিন্তু এটা উদ্দেশ্যহীন। কারণ ড্রাগসের সাথে এখন মহিলা, ছোট ছোট বাচ্চারাও জড়িয়ে পড়েছেন। কালকে যখন মহিলা ও বাচ্চাদের মারা শুরু হবে তখন সরকারের জন্য একটা অমার্জনীয় বিষয় হবে। এটা এভাবে বন্ধ করা যাবে না। এধরণের অনেক কিছু সামাজিক অপরাধ, সঙ্কট আছে। এগুলো মোকাবেলা করার জন্য আলেম সমাজকে একত্রে নিয়ে সরকারকে কাজ করতে হবে। জমিয়াতুল মোদার্রেছীন আপনাদের সাথে আছে। এতো সংগঠিত ও শক্তিশালী অর্গান আর কোথাও সরকার পাবে না। সুতরাং সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা আনার জন্য সামনে যে সঙ্কট গুলো আছে সেগুলো মোকাবেলা করা দরকার ।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ শাব্বীর আহমদ মোমতাজী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ সকলের আন্তরিকতায় মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে অনেক কাজ হয়েছে। এজন্য আমরা সকলকেই মুবারকবাদ জানাই। কিন্তু একটি গোত্র জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ও আলেমদের সাথে সরকারের দুরত্ব তৈরি করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, মারদাসা শিক্ষার উন্নয়ন, অগ্রগতি,নীতিনির্ধারণ, সংযোজন ও বিয়োজন সকল কিছুই হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর মাধ্যমে। বাইরের কেউ কথা বললে বা এতে হস্তক্ষেপ করতে চাইলে তা কখনো মেনে নেয়া হবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমাদের অভিভাবক তারা আমাদের দিকনির্দেশনা দিবে, অন্য কেউ দিলে তা হবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন